বুধবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৫, ৯ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


কাছেই ছিল কোস্টগার্ডের বোট, উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি

বিস্ফোরণে দগ্ধ পুলিশ সদস্যদের অভিযোগ


প্রকাশিত:
৫ জুলাই ২০২৩ ১৬:৩৬

আপডেট:
২৩ এপ্রিল ২০২৫ ০২:৪৮

 ফাইল ছবি

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে নোঙর করে রাখা তেলবাহী সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণের সময় দগ্ধ ও আহতদের উদ্ধারে এগিয়ে না আসার অভিযোগ উঠেছে কোস্টগার্ডের বিরুদ্ধে।

এমনকি বিস্ফোরণে নদীতে ছিটকে পড়া লোকজন কোস্টগার্ডের বোটকে উদ্দেশ্য করে ‌বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পুলিশ সদস্যরা মঙ্গলবার (০৪ জুলাই) এই অভিযোগ করেন। বিস্ফোরণের প্রত্যক্ষদর্শীরাও একই চিত্র দেখেছেন।

ঝালকাঠি সদর থানার উপ-পরিদর্শক হাকিম আলী তালুকদার বলেন, জাহাজের নিরাপত্তায় ঝালকাঠি পুলিশ লাইন্সের ৮ জন, সদর থানার ১ জন এবং নৌপুলিশের ৩ জন মিলে ১২ জন ছিলাম।

আসরের নামাজ শেষ করে পায়চারি করছিলাম। তখন ৬ টা ২০ কিংবা ২৫ মিনিট হবে। এ সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। সঙ্গে সঙ্গেই তেলের ট্যাংকে আগুন লেগে যায়।

আগুনের তীব্রতায় আমি আমার ফোর্সদের নদীতে লাফ দিতে বলি। ৩০ সেকেন্ড জাহাজে থাকলে আমরা পুড়ে অঙ্গার হয়ে যেতাম। তবুও হাত, ঘাড়, মাথা পুড়ে গেছে।

হাকিম আলী বলেন, নদীতে পড়ে আমরা যখন হাবুডুবু খাচ্ছিলাম, তখন ঘটনাস্থল অতিক্রম করছিল কোস্টগার্ডের একটি বোট। কোস্টগার্ডের বোর্ডটি আমাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি।

তারা চাইলে আমাদের উদ্ধার করতে পারতো। বরং অন্য আহত পুলিশ সদস্যরা যখন কোস্টগার্ডের বোটটির কাছে সাহায্য চাইলো, তখন বোটটি গতি বাড়িয়ে সামনের দিকে চলে যায়।

তাদের এমন আচরণ আমাদের হতবাক করেছে। তবে গ্রামবাসী এগিয়ে এসে আমাদের উদ্ধার করেন। গ্রামবাসী না থাকলে আমরা হয়তো প্রাণে বেঁচে ফিরতাম না।

ঝালকাঠি সদর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক গণেশ বলেন, ৯ জন ফোর্স নিয়ে আমি জাহাজের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলাম। বিস্ফোরণের তীব্রতায় জাহাজ থেকে ছিটকে পড়ে নিচের একটি গ্রিলে ধাক্কা লেগে আমি পানিতে পড়ে যাই।

অন্য সদস্যরাও নদীতে পড়ে সাঁতার কাটছিল তীরে ওঠার জন্য। আমার মাথায় আঘাত লাগায় কিছুদূর যাওয়ার পরে সাঁতার কাটতে পারছিলাম না। আমাদের নিকটেই কোস্টগার্ডের একটি বোর্ড ছিল।
আমাদের উদ্ধারের জন্য তাদের ডেকেছি, ইশারা করেছি। কিন্তু বোটটি আমাদের উদ্ধারে এগিয়ে না এসে পেছনে সরে গেছে। গ্রামবাসী ট্রলার নিয়ে যদি এগিয়ে না আসতেন, তাহলে আমাদের মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিল। অথচ কোস্টগার্ডের বোটটি আমাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসতে পারতো।

আরেক পুলিশ সদস্য মেহেদী হাসান বলেন, বিস্ফোরণের পর চারদিকে শুধু আগুন আর অগুন দেখেছি। নদীতে কোনো মতো ঝাঁপ দিয়ে পড়ার পর যতটুকু পেরেছি সাঁতার কেটেছি। সামনে কোস্টগার্ডের বোট ছিল, কিন্তু আমাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি।

জাহাজের শ্রমিক হালিম হাওলাদার বলেন, সাবমার্সিবল দিয়ে তেল টানার সময় জাহাজে ব্লাস্ট হয়। আমি কিছুর সঙ্গে মাথায় আঘাত পাই। পরে নদীর মধ্যে পড়ে গিয়ে সাঁতার কাটতে ছিলাম। তখন কোস্টগার্ডের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম কিন্তু তারা কোনো সাহায্য করেনি। পরে সাঁতার কাটতে কাটতে আমি কূলের দিকে যাই। স্থানীয়রা সাহায্য করেছেন।

দুর্ঘটনাস্থল সংলগ্ন নদী তীরের ব্যবসায়ী সজল মৃধা বলেন, বিস্ফোরণটি আমি তীরে বসে দেখেছি। বিস্ফোরণের পর পরই পুলিশ সদস্যরা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতরে তীরে উঠতে চাইছিলেন। কিন্তু আহত হওয়ায় পারছিলেন না। গুরুতর দগ্ধরা ডুবে যাচ্ছিলেন। গ্রামবাসী ট্রলার নিয়ে গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। ঘটনার সময় কাছেই কোস্টগার্ডের একটি বোট ছিল। সেটি ভেসে সামনের দিকে চলে যায়।

ভ্যানচালক হাসান ফরাজী বলেন, দুর্ঘটনার পর পরই কিছু পুলিশ সদস্য সাঁতরে কয়লাঘাটে উঠে আসেন। আরও অনেকে নদীতে সাঁতার কাটছিলেন। পশ্চিম পাশেই কোস্টগার্ডের একটি বোট ছিল। সেটি আরও পশ্চিম দিকে চলে যাচ্ছিল। তারপর এলাকাবাসী চেষ্টা করে সকলকে উদ্ধার করে তীরে আনেন। এরপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহত ও দগ্ধদের হাসপাতালে পাঠান।

কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা শফিউল কিঞ্জল বলেন, বোটটি কাছে ছিল সত্যি। কিন্তু বিস্ফোরণে সাগর নন্দিনী-২ জাহাজের হ্যাসকভার উড়ে এসে আমাদের বোটের ইঞ্জিনের ওপর পরে। তাতে ইঞ্জিনের ক্ষতি হয় এবং চালু হচ্ছিল না। এজন্য বোটটি নিজেই ভেসে যাচ্ছিল। আজ পর্যন্ত বোটটি চালু হয়নি। ফলে আরেকটি বোট দিয়ে টেনে সন্ধ্যায় বরিশাল এনে রাখা হয়েছে।

কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন প্রধান লেফটেন্যান্ট শাফায়েত বলেন, দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণের সময় কোস্টগার্ডের একটি জাহাজ ছিল ঘটনাস্থলে। বিস্ফোরণ এতোটাই ভয়াবহ ছিল যে ১০০ মিটারের মধ্যে কোনো উদ্ধাকারী দল পৌঁছাতে পারছিল না। কোস্টগার্ড জ্বালানি তেল ছড়িয়ে পড়া রোধে কাজ করেছে।

শনিবার (০১ জুলাই) সুগন্ধা নদীতে নোঙর করা সাগর নন্দিনী-২ জাহাজের ইঞ্জিনরুমে বিস্ফোরণে চারজন নিহত ও পাঁচজন দগ্ধ হন। সেই উদ্ধার অভিযান শেষ করে তেল অপসারণের সময় সোমবার সন্ধ্যায় আবারও বিস্ফোরণ হয়। এতে ১২ জন পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৪ জন দগ্ধ হন। দুই দফায় বিস্ফোরণে এই জাহাজে ১৯ জন দগ্ধ এবং চারজন নিহত হন। আগুন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয়ে পরের দিন ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জ্বলে।

দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে সাবমার্সিবল পাম্প বিস্ফোরণ।

দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণে আহতরা হলেন- কনস্টেবল শওকত, দ্বীপ, পলাশ মোল্লা, মেহেদী, নকীব, সাইফুল, লিপন গাইন, এএসআই গণেশ, এসআই আব্দুল হাকিম, নায়েক সিদ্দিক, এসআই মোস্তফা কামাল, এটিএসআই হেলাল উদ্দিন, জাহাজের কর্মচারী শরীফ এবং কাইয়ুম। এর মধ্যে দুইজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন এবং ১১ জন ঝালকাঠি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

প্রথম দফায় বিস্ফোরণে নিহতরা হলেন- জাহাজের গ্রিজারম্যান আব্দুস সালাম হৃদয়, মাস্টার ইনচার্জ রুহুল আমীন খান, সুপারভাইজার মাসুদুর রহমান বেলাল এবং চালক সারোয়ার হোসেন। ওই দিনের ঘটনায় আরও পাঁচজন আহত হন।

প্রসঙ্গত, সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটি ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তেল নিয়ে চাঁদপুরে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোতে যাওয়ার পথে ভোলার তুলাতুলি কাঠিরমাথা এলাকায় ডুবে গিয়েছিল। এছাড়া ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর সুগন্ধা নদীর একই স্থানে একই কোম্পানির সাগর নন্দিনী-৩ জাহাজটিতেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণে পাঁচজন নিহত হয়েছিলেন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top