মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল ২০২৫, ৯ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


মেহেরপুরে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন রোগ, মরছে গরু


প্রকাশিত:
২২ আগস্ট ২০২৩ ১৭:১৪

আপডেট:
২২ এপ্রিল ২০২৫ ২০:১৫

 ফাইল ছবি

মেহেরপুরে হঠাৎ করে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় প্রতিটি বাড়ির গরু। কয়েক মাস ধরে জেলার বিভিন্ন স্থানে গরু নতুন করে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত হওয়া গরুর মধ্যে মারা গেছে প্রায় অর্ধশত। অনেকেই চিকিৎসা করালেও এই রোগের হাত থেকে তাদের গরুকে রক্ষা করতে পারছেন না।

তবে বড় গরুর চেয়ে বাছুর আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। জেলার কয়েক হাজার আক্রান্ত গরুকে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা দিচ্ছেন জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা দিয়ে অনেকের গরু সুস্থ হলেও ধকল কাটতে সময় লাগবে কয়েকমাস।

এতে মাংস ও দুধ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গরু পালনকারীরা। মশা, মাছি থেকে দূরে রাখা ও নিয়মিত ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে এ রোগ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে এমন কথা জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও স্থানীয় পশু চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় মোট গরু খামরি রয়েছেন ২ লাখ ৮৮ হাজার ৫০০টি। এর মধ্যে প্রান্তিক খামারি রয়েছেন প্রায় ২১ হাজার। প্রতি বছর জেলায় ৪২ হাজার মেট্রিক টন মাংসের চাহিদা থাকলেও মাংস উৎপাদন হয় প্রায় ৬২ হাজার মেট্রিক টন। আবার জেলায় দুধের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৬২ হাজার মেট্রিক টন। তবে মাংসের চাহিদা পূরুণ করেও অনেক টাকা বাড়তি আয় করেন জেলার গরু পালনকারীরা। লাম্পি স্কিন রোগে জেলায় হাজার হাজার গরু আক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি বলে দাবি করছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

এদিকে স্থানীয় গরু পালনকারীরা জানান, তাদের গরুগুলো নতুন এই রোগে আক্রান্ত হলেও উপজেলা বা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে যা চিকিৎসা সেবা বা পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে তা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। প্রতিনিয়ত অনেক টাকার ওষুধ কিনে খাওয়াতে হচ্ছে।

লাম্পি স্কিন ডিজিজে নতুন করে জেলার বিভিন্ন গ্রামের গরু আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে অর্ধশতাধিক গরু। হঠাৎ দেখা দেওয়া ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ রোগের চিকিৎসা করালেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না অনেক গরু। এমন অবস্থা চলতে থাকলে মাংস ও দুধ উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসবে এমন আশঙ্কা গরু পালনকারীদের।

মেহেরপুর সদর উপজেলার কালিগাংনী গ্রামের হিয়াতন নেছা বলেন, আমার দুইটা গরুর মধ্যে একটি গরুর সারা শরীরে গুটি গুটি দেখা যাচ্ছে। অনেক গুটি ফেটে পুঁজ ও রক্ত বের হচ্ছে। প্রায় এক মাস যাবৎ চিকিৎসা দিয়েও ভালো ফল পাইনি। বর্তমানে আমার গরু খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এর চিকিৎসা খরচও অনেক ব্যয় বহুল। সরকারিভাবে কোনো ওষুধ দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

গাংনী উপজেলার নওপাড়া গ্রামের গরু পালনকারী হায়বার আলী বলেন, প্রথমে আমরা বুঝতেই পারিনি আসলে এটা কী রোগ। পরে অবশ্য প্রাণিসম্পদ অফিসে গেলে তারা জানান এটি গরুর লাম্পি স্কিন রোগ। চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেছি। চিকিৎসা দিয়েও গরুর অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। জানি না ভাগ্যে কি আছে।

নির্তানন্দনপুরের রহিমা খাতুন বলেন, দশদিন আগে গরুর শরীরে প্রচণ্ড জ্বর ছিল। গ্রাম্য পশু ডাক্তারের কাছ থেকে জ্বরের ওষুধ খাওয়ানোর পর কিছুটা কমলেও হঠাৎ দেখি গরুর সারা শরীর গুটি গুটি হয়ে গরু খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। পরে স্থানীয়দের পরামর্শে গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে চিকিৎসা নিচ্ছি। তবে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি মশা ও মাছি থেকে গরুকে সুরক্ষিত রাখতে বলেছে।

গাংনীর নওপাড়া বাজারের মাংস বিক্রেতা আফেস আলী (কসাই) জানান, আগে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি গরু জবাই করলে মাংস বিক্রি হয়ে যেত। এখন একটি গরু জবাই করলে মাংস থেকে যাচ্ছে। গরুর মাংস বিক্রি এখন একেবারেই কম।

গাংনী উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আরিফুল ইসলাম বলেন, এই রোগটি শুধু আমাদের এখানেই নয় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগে আক্রান্ত গরুগুলোকে প্যারাসিটামল ও এন্টি হিসটামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ রোগে প্রতিদিন অন্তত ১০০ থেকে ১২০টি গরুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে সুস্থ গরুকে আক্রান্ত গরু থেকে আলাদা রাখতে হবে এবং অবশ্যই গরুকে মশারি দ্বারা আবৃত রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, কয়েকমাস আগেও মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামে এই লাম্পি স্কিন রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। সেবার দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা দিয়ে ভালো ফলাফল পেয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল। গত ১৫ দিন যাবৎ আবারও অনেক গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আমরা ভ্যাক্সিনাইজেশন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। সেই সঙ্গে আক্রান্ত গরুকে চিকিৎসা দিচ্ছি। এছাড়া এটি যেহেতু মশা ও মাছিবাহিত রোগ, তাই এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে গরু পালনকারীকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। সুস্থ গরুকে অসুস্থ গরুর সঙ্গে কোনোভাবেই রাখা যাবে না। সব গরুকে মশারি দিয়ে রাখতে হবে। সকলেও সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে ল্যাম্পি স্কিন রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top