মঙ্গলবার, ২২শে এপ্রিল ২০২৫, ৯ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে ১০৩৯ একর জমি বিক্রি


প্রকাশিত:
২৭ আগস্ট ২০২৩ ২০:১১

আপডেট:
২২ এপ্রিল ২০২৫ ২০:১৭

 ফাইল ছবি

জীবিত মা-বাবা, স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ও মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে ভুয়া মালিকানা সেজে প্রায় ১ হাজার ৩৯ একর জমি বিক্রি। এমনই ঘটনা ঘটেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের ধুবনী গ্রামে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এ ঘটনার সঙ্গে পার্শ্ববতী নীলফামারী জেলার ডিমলা সাব-রেজিস্ট্রার মনীষা রায় ও ডিমলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান চৌধুরীসহ নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরের একটি সিন্ডিকেট জড়িত। ইতোমধ্যে এ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ছাতুনামা মৌজায় ও লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের ধুবনী গ্রামের প্রায় দুই হাজার ব্যক্তির জমি রয়েছে।

ওই জমির মধ্যে কিছু জমি তিস্তা নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে কিছু জমি তারা চাষাবাদ করে আসছে। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কিশামত মেনান নগর গ্রামের সফিয়ার রহমান ও পীরগাছা উপজেলার গুয়াবাড়ি গ্রামের শাহ মো. মেহেদী হাসান নামে দুই ব্যক্তি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ধুবনী এলাকার জহির প্রমানিকের পুত্র ছফের আলীসহ কয়েকজনকে ম্যানেজ করে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন।

ওই সিন্ডিকেট ডিমলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান চৌধুরীর সহায়তায় চরের প্রায় ১ হাজার ৩৯ একর জমির ভুয়া মালিকানার কাগজপত্র তৈরি করেন। গত ২২ জুন ডিমলা সাব রেজিস্ট্রার মনীষা রায়কে ম্যানেজ করে ২৭ জন ভুয়া মালিক সেজে সফিয়ার রহমান ও শাহ মো. মেহেদী হাসানের কাছে ১ হাজার ৩৯ একর ১৬ শতক জমি পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে বিক্রি করেন।

বিক্রীত জমির ৩২৫৯/২৩ দলিলে দাতা সাহেরা খাতুন তার স্বামী আব্দুল আজিজকে মৃত দেখালেও প্রকৃতপক্ষে তার স্বামী জীবিত রয়েছেন। ৩২৬২/২৩ নং দলিলে দাতা মোবারক হোসেন ও বাহাদুর হোসেনের পিতা আব্দুল মালেককে মৃত দেখানো হয়। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আব্দুল মালেক জীবিত আছেন। ৩২৬১/২৩ দলিলে দাতা আব্দুল লতিফ ও আব্দুস ছামাদের পিতা আবু তালেবকে মৃত দেখালেও তিনি জীবিত রয়েছেন।

৫টি দলিলে ২৭ জন বিক্রেতা হিসেবে স্বাক্ষর করলেও তারা জমির প্রকৃত মালিক নয়। অন্যের জমির মালিক সেজে ডিমলা সাব রেজিস্ট্রার মনীষা রায় ও দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান চৌধুরীর সহায়তায় সফিয়ার রহমান ও শাহ মো. মেহেদি হাসানের কাছে ১ হাজার ৩৯ একর ১৬ শতক জমি পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে বিক্রি করেন। দাতা ২৭ জনের অনেকেই জানেন না এ জমি বিক্রি হয়ে গেছে। তারা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যাননি এবং দলিলেও স্বাক্ষর করেননি। তাদের নামে ভুয়া স্বাক্ষর করা হয়েছে। দলিলে ওয়ারিশ সনদ ও মৃত্যু সনদ কোনো কিছুই ব্যবহার করা হয়নি।

ভুক্তভোগী আব্দুল হামিদ, আব্দুল হাকিম, গাজী রহমান ও সফিউল ইসলাম বলেন, আমাদের জমি একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একটি চক্র ভুয়া মালিক সেজে রংপুরের সফিয়ার রহমান ও শাহ মো. মেহেদী হাসানের কাছে বিক্রি করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে ডিমলা সাব রেজিস্ট্রার মনীষা রায় ও ডিমলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান চৌধুরী, জমির ক্রেতা রংপুরের সফিয়ার রহমান ও শাহ মো. মেহেদী হাসান জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে পৃথক পৃথকভাবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের সর্বস্বান্ত করার পাঁয়তারা করা হয়েছে।

জমি দাতাদের মধ্যে বাহাদুর, ছফের আলী, আব্দুল লতিফ ও রেজাউল জমি বিক্রয়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তিস্তা নদীর চরে একটি সোলার প্যানেল তৈরির জন্য বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে সফিয়ার রহমান ও শাহ মো. মেহেদী হাসান আলোচনা করছেন। সেই জন্য ওই দুইজনকে আমাদের জমি কোম্পানির কাছে বিক্রির আলোচনার জন্য প্রতিনিধি হিসেবে পাওয়ার অব অ্যাটর্নী চায়। পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি সফিয়ার রহমান ও শাহ মো. মেহেদী হাসান, ডিমলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান চৌধুরী ও ডিমলা সাব রেজিস্ট্রার মনীষা রায়সহ কয়েকজন মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে আমাদের কাছে ১ হাজার ৩৯ একর ১৬ শতাংশ জমি প্রতারণার মাধ্যমে পাওয়ার অব অ্যাটর্নী পত্রে স্বাক্ষর নিয়েছেন।

এ বিষয়ে দলিল লেখক মতিউর রহমান চৌধুরী ও ক্রেতা সফিয়ার রহমানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।

ডিমলা সাব রেজিস্ট্রার মনীষা রায় বলেন, ডিমলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান চৌধুরী তথ্য গোপন করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে এ দলিলগুলো সম্পন্ন করেছেন। বিষয়টি আমি পরে জানতে পারি। আমি এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে দলিল বাতিলের জন্য আদালতের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি ওই দলিল লেখকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে বলেছি। অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top