শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১


করোনা সন্দেহে ৩ হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেল নওগাঁর এক যুবক


প্রকাশিত:
২৯ মার্চ ২০২০ ২২:৫০

আপডেট:
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৩:৫১

ফাইল ছবি

নওগাঁর রানীনগর উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের অলংকারদীঘি গ্রামের ২২ বছরের যুবক আল আমিন শেষ পর্যন্ত মারাই গেলেন বিনা চিকিৎসায়। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতাল, আদমদীঘি ও রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করেননি। তিন হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে শেষে শনিবার বিকালে তাকে ভর্তি করা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ থেকে জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে গ্রামে ফেরেন আল আমিন। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে গ্রামের মানুষ তাকে বাড়িতেও উঠতে দেয়নি।

আল আমিনের বাবা মোখলেসুর রহমান জানান, তার ছেলে দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারি হিসেবে কাজ করতো। শুক্রবার রাতে আল আমিন জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে খুব অসুস্থ অবস্থায় নওগাঁয় এসে পৌঁছে। শনিবার সকালে সে গ্রামের বাড়িতে এলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গ্রামের কতিপয় লোক তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। তাদের দাবি, আল আমিন করোনায় আক্রান্ত। ফলে বাধ্য হয়ে আল আমিনকে নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা পাশের আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসকরা তার কোন চিকিৎসা না দিয়েই ফিরিয়ে দেন।

এরপর আল আমিনকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা নওগাঁর ধামইরহাট ভেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের বারান্দায় নিয়ে রাখেন। সেখানে তার স্বাস্থ্যের অবস্থার আরো অবনতি হয়। বিষয়টি জানতে পারেন কালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু। তিনি রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সাথে বিষয়টি তিনি কথা বলেন। ইউএনও’র সহযোগিতায় ইউপি চিয়ারম্যান বাবলু অসুস্থ আল আমিনকে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেন। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে দেখামাত্রই হাতে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করে দেন।

আল আমিনের বাবা মোখলেছুর রহমান জানান, রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাগজ নিয়ে তিনি নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতালে গেলে সেখানকার ডাক্তাররাও তার ছেলের কোন চিকিৎসা করেননি। জ্বর, সর্দি, কাশির কথা শুনেই ডাক্তাররা একটি কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন, আপনার ছেলেকে নিয়ে রাজশাহী চলে যান।

নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতাল, আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরেও কোনো চিকিৎসা না পেয়ে শনিবার বিকালে আল আমিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসে তার তার পরিবার। চিকিৎসকরা আল আমিনকে ২৩ নং মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। সেখানে রাত সাড়ে আটটার দিকে তার মৃত্যু হয়।

রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, আল আমিনের লাশ রাতেই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে আল আমিন করোনায় নয়, মস্তিস্কের সংক্রমণ বা মেনিনজাইটিস নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ভর্তির সময় তার শরীরে জ্বরের মাত্রা তীব্র ছিল। মাথা ব্যাথা ও গলা ব্যাথা ছিল। মেডিকেলের ডেথ প্রতিবেদনের সূত্র উল্লেখ করে ডা. সাইফুল বলেন, সর্দিজ্বর ও শ্বাসকষ্টসহ করোনার বিভিন্ন উপসর্গ থাকলেও আল আমিন মারা গেছেন মেনিনজাইটিস বা মস্তিস্কের সংক্রমণে।

তবে পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই কীভাবে আল আমিনের মেনিনজাইটিস শনাক্ত হলো জানতে চাইলে ডা. সাইফুল ফেরদৌস কোনো উত্তর দেননি। এছাড়া রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আল আমিনের করোনার কোনো নমুনা সংগ্রহ করেননি বলে জানান তিনি।

এদিকে, নওগাঁর রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কেএইচএম ইফতেখারুল আলম জানান, শনিবার যখন আল আমিনকে আমাদের হাসপাতালে আনা হয়, তখন তার তীব্র জ্বর ও শ্বাসকষ্ট ছিল। অবস্থা বিবেচনা করে তাকে আমরা নওগাঁ জেলা হাসপাতাল পাঠিয়ে দিই। সেখানে করোনার নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল। সেটা করা হয়েছে কিনা তিনি জানেন না।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আল মামুন বলেন, রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স থেকে আল আমিনকে নওগাঁ জেলা হাসপাতালে রেফার্ড করেছিলেন এখানকার চিকিৎসকরা। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ছাড়া সে করোনায় আক্রান্ত ছিল, এ কথা কেউ বলতে পারে না। বিষয়টি নিশ্চিত না হয়ে ছেলেটিকে তার বাড়িতে উঠতে না দেয়ার বিষয়টি ঠিক করেনি গ্রামবাসি। তারা অমানবিক কাজ করেছে।

আল আমিনকে যারা বাড়িতে উঠতে দেয়নি, তাদের মধ্যে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু ও অলংকারদীঘি গ্রামের হারুনুর রশিদ। জানতে চাইলে তারা বলেন, ছেলেটা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এমন খবর পাওয়ার পর তাঁর পরিবারকে বলা হয়েছিল, মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে গ্রামে আসতে। যদি করোনা ভাইরাস না থাকে, তাহলে কোন সমস্যা নাই। আর যদি ভাইরাস থেকে থাকে, তার জন্য আমরা চিকিৎসা করাতে বলেছিলাম। গ্রামের সবার নিরাপত্তার কথা ভেবে তারা বাধা দিয়েছিলেন বলে জানান।

রোববার সকালে নিজ গ্রাম অলংকারদীঘিতে আল আমিনের জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এলাকাবাসী।


সম্পর্কিত বিষয়:

নওগাঁ

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top