নড়াইলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর এখন কোচিং সেন্টার
প্রকাশিত:
২৭ মার্চ ২০২৫ ১১:৪২
আপডেট:
৩১ মার্চ ২০২৫ ০৩:০৭

নড়াইলে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের বরাদ্দকৃত একাধিক ঘরে ঝুলছে তালা। কিছু ঘরে কোচিং সেন্টার চালু করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত ভূমিহীন বাছাই করতে না পারা, স্বজনপ্রীতি, আর্থিক দুর্নীতি এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল।
তবে প্রশাসন বলছে, যেসব ঘর খালি পড়ে আছে সেগুলোর বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের নামে নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হবে।
নড়াইলে ২০১৯-২০২০ অর্ধ বছরে ঘর নির্মাণ করে সুবিধাভোগীদের নামে বরাদ্দ দেয় সদর উপজেলা প্রশাসন। সরেজমিনে উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের দূর্বাজুড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রেনুকা রানীর নামে বরাদ্দকৃত ঘরটিতে তালা ঝুলছে। রেনুকা রানী মুলিয়া ইউনিয়ন ৪/৫/৬ নং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য। তার স্বামীর ও পৈত্রিক সম্পত্তি, নিজস্ব ঘর থাকা সত্ত্বেও তথ্য গোপন করে তিনি নিজের নামে টি,আর/কাবিটা কর্মসূচির আওতায় দুর্যোগ সহনশীল এ বাসগৃহটি বরাদ্দ নিয়েছেন।
অপরদিকে একই ইউনিয়নের হিজলডাঙ্গা গ্রামের জয়ন্তী রানীর নামে বরাদ্দকৃত ঘরটিকে রীতিমতো কোচিং সেন্টার বানিয়ে ফেলা হয়েছে। সরকারি এ ঘরে সকাল থেকে শুরু হয় স্কুলপড়ুয়াদের কোচিং করানো। কোচিং শেষে তালাবদ্ধ পড়ে থাকে ঘরটি।
সদরের শাহাবাদ ইউনিয়নের রজিবুল ইসলামের নামে বরাদ্দ হওয়া ঘরটিতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরটিতে তালা ঝুলছে। স্থানীয়রা জানান, ঘর পাওয়ার পর তাকে কখন ও এলাকায় দেখা যায়নি।
সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের এক পরিবারের নামে বরাদ্দকৃত ঘরে ভাড়া থাকছে অন্য পরিবার। ইউনিয়নের আবাসন প্রকল্পে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয় তারাপুর গ্রামের হ্যাপি বেগমের নামে। কিন্তু ওই ঘরটিতে বর্তমানে বসবাস করছেন বড়গাতি গ্রামের এক নারী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, আমার ঘর না থাকায় মাসিক ৫০০ টাকায় ঘরটিতে ভাড়া থাকছি।
সীতারামপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব ভাবনা রানী। স্বামী দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে আছেন। খুপড়ি ঘরে বসবাসরত ভূমিহীন এ মানুষটির কপালে জোটেনি আবাসন প্রকল্পের ঘর। তিনি বলেন, মোগো ঘরবাড়ি নাই, ‘আর সরকার মোগো ঘর দেয় নাই। আর জ্যাগো (যাদের) ঘরবাড়ি, জায়গাজমি আছে হ্যাগো (তাদের) ঘর দিয়া থুইছে।’
উপকারভোগী সাবেক ইউপি সদস্য রেনুকা রানী তার তালাবদ্ধ ঘরের ছবি তুলতে আপত্তি জানিয়ে, এ বিষয়ে লেখালেখি না করতে অনুরোধে করেন। অপরদিকে কোচিং সেন্টার পরিচালানাকারী জয়ন্তী রানী বলেন, ঘরটি খালি পড়ে আছে তাই কোচিং করাচ্ছি।
শাহাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, বেশিরভাগ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সুবিধাভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা নেন না। এ কারণে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন বাছাই করতে পারেন না। এ জন্য অধিকাংশ ঘর খালি থাকে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, এ বিষয়ে কিছু অভিযোগ আসছে। কিছু অভিযোগের সত্যতাও আছে। যেসব ঘর খালি পড়ে আছে সেগুলোর বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের নামে নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হবে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: