সোমবার, ১৪ই এপ্রিল ২০২৫, ১লা বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


নীলফামারীতে বেড়েছে দুধ উৎপাদন, তবু মিটছে না চাহিদা


প্রকাশিত:
১৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৫৪

আপডেট:
১৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৩৬

ছবি সংগৃহীত

নীলফামারীতে ৭০ হাজার টন দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও জেলায় দুধের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। মাথাপিছু দুধপানও কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে কম। আবার দিন দিন বাড়ছে দুধের দামও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ঘাটতি মেটাতে গো-খাদ্যের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে নজর রাখার পাশাপাশি সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

জানা গেছে, নীলফামারীতে প্রায় ৩১ হাজার ছোট-বড় দুগ্ধ খামারি বছরে ১ লাখ ৫৩ হাজার টন দুধ উৎপাদন করছেন। অথচ পাঁচ বছর আগে জেলায় বছরে দুধ উৎপাদন হতো মাত্র ৮৫ হাজার টন। গরুর জাত উন্নয়নের ফলে দুধ উৎপাদন বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দেশি গরুর খামার করা থেকে সরে আসছেন অনেকেই। একটি দেশি গরু প্রতিদিন গড়ে পাঁচ লিটার দুধ দেয়। সেখানে একটি উন্নত সংকর জাতের গরু প্রতিদিন গড়ে দুধ দেয় ২০ লিটার।

নীলফামারী সদর উপজেলার দুগ্ধখামারি সাইদুল ইসলাম। পাঁচ বছর আগে ছয়টি দেশি গরু দিয়ে খামার শুরু করেন তিনি। প্রথম দুই বছর লাভের মুখ দেখতে পারেন নি। পরে প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করলে তাকে উন্নত সংকর জাতের গরু পালনের পরামর্শ দেন। বর্তমানে তার খামারে ২৫টি গরু আছে, যা প্রতিদিন ৮০ লিটার দুধ দেয়। তিনি বলেন, দেশী গরু দিয়ে খামার শুরু করার পর কিছুটা হতাশায় ছিলাম। পরে প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে উন্নত সংঙ্কর জাতের গরু পালনের পরামর্শ দেয়। আমি উন্নত সংঙ্কর জাতের গরু পালন করে কিছুটা লাভবান হয়েছি।

ডোমার উপজেলার আদর্শ দুগ্ধ খামারের ব্যবস্থাপক বাবুল মিয়া বলেন, এক লিটার দুধ উৎপাদনে যে ব্যয় হয়, তার ৭০ শতাংশই যায় গো-খাদ্যে। এর বাইরে শ্রমমূল্য এবং অন্য নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ও রয়েছে। দেশি গরু খায় কম, তাই দুধ উৎপাদন কম, সংকর জাতের গরু খায় বেশি, তাই দুধ উৎপাদন অনেক বেশি। সংকর জাতের খামারের তুলনায় দেশি গরুর খামারে এত বেশি দুধ উৎপাদন সম্ভব নয়। গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় দেশি খামারে মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

নীলফামারী সদরের রুহামা এগ্রো লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী ড. রাশেদুজ্জামান বলেন, গত পাঁচ বছরে জেলায় খামারির সংখ্যা বেড়েছে। তবে গরুর জাত উন্নয়নের কারণে দুধের উৎপাদন বেড়েছে। খামারিরা এখনো দেশি গরুতে সীমাবদ্ধ থাকলে দুধের বর্তমান উৎপাদন সম্ভব হতো না। যেখানে ২০১৯ সালে মানবদেহে প্রতিদিন ১৫০ মিলিলিটার দুধের প্রয়োজন ছিল, সেখানে বর্তমানে ডব্লিউএইচওর সমীক্ষা অনুযায়ী মানবদেহে দুধের প্রয়োজন ২৫০ মিলিলিটার। বর্তমানে আমরা ১৭৫ মিলিলিটার দুধ উৎপাদন করতে পেরেছি। দুধের উৎপাদন বেড়েছে। তবে গো-খাদ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ না করলে উৎপাদন বৃদ্ধির এই হার হোঁচট খাবে। তবে সরকার ঘোষিত ১০০ ফিডমিল তৈরি ও ২০টি মিল্ক হাব স্থাপন করার পর পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে।

নীলফামারী সদরের হাড়োয়া এলাকার খুচরা দুধ ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমান বলেন, তিন-চার বছর আগে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি করতাম ৩৫-৪০ টাকা। বর্তমানে গরুর খাবারের দাম বেশি হওয়ায় খামারিদের কাছ থেকে কিনতে হয় অনেক বেশি দামে। এখন প্রতিলিটার দুধ বিক্রি করতে হয় ৭০ টাকা দরে। তাই এখন গ্রাহক কিছুটা কমেছে। গরুর খাদ্যের দাম কমলে দুধের দাম কমে আসবে। তখন গ্রাহক অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে।

চা-ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, আগে গরুর দুধের চা বিক্রি করতাম প্রতি কাপ ৫ টাকা। দুধের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ। তাই এখন প্রতি কাপ চা বিক্রি করতে হয় ১০ টাকা।

নীলফামারী পৌরসভার সার্কিট হাউজ পাড়ার বাসিন্দা গৃহিণী হোসনে আরা বেগম বলেন, আমার পরিবারের সদস্য ৬ জন। প্রতিদিন বাড়িতে দুধ লাগে দুই লিটার। আগে প্রতি লিটার ৪০ টাকা করে কিনতাম। কিন্তু বর্তমানে দুধের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ। এত টাকা দিয়ে প্রতিদিন দুধ কেনা আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয় না। দুধের দাম কমে এলে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য অনেক ভালো হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় জনপ্রতি প্রতিদিন ২৫০ মিলিগ্রাম দুধ হিসাব করলে চাহিদা দাঁড়ায় ১ লাখ ৯৩ হাজার টন। যার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ১ লাখ ৫৩ হাজার টন। চাহিদার তুলনায় বছরে প্রায় ৪০ হাজার টন দুধের ঘাটতি রয়েছে। তবে জেলায় প্রশিক্ষিত খামারি রয়েছেন ৪৬ হাজার, উৎপাদমুখী খামারি রয়েছেন ৩১ হাজার। বাকি ১৫ হাজার প্রশিক্ষিত খামারি দুধ উৎপাদন শুরু করলে আগামী পাঁচ বছরে এই ঘাটতি পুষিয়ে দুধ রপ্তানি করা যাবে।

নীলফামারী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিরাজুল হক বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলায় দুধ উৎপাদন হয়েছিল ৮৫ হাজার টন। গরুর জাত উন্নয়ন ও খামারি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ ৫৩ হাজার টনে এসে দাঁড়িয়েছে। তবে গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় এখনো প্রশিক্ষিত ১৫ হাজার খামারি পিছিয়ে আছেন। গো-খাদ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে আমরা আগামী পাঁচ বছরে জেলার চাহিদা মিটিয়ে দুধ রপ্তানি করতে পারব।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top