করোনা সন্দেহে ৫ জেলায় ৯২০ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে
প্রকাশিত:
১২ এপ্রিল ২০২০ ০২:১৩
আপডেট:
১৪ মার্চ ২০২৫ ০৭:১৪

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে দেশের পাঁচ জেলায় ৯২০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুরে জেলায় ৬৩৭ এবং কুড়িগ্রামে ১৫১ জন। অপরদিকে হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ৭৮৮ জনকে।
দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে সংখ্যা আরও বেড়ে ৬৩৭ জনে দাড়িয়েছে। এছাড়াও হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে সুস্থ্য হওয়ায় ৭৮৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুস।
তিনি জানান, শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৬৩৭ জনে। আর করোনাভাইরাস না পাওয়ায় ইতোমধ্যে ৭৮৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জন আরও জানান, বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ২৭৯ জন ব্যক্তির মধ্যে দিনাজপুর সদর উপজেলায় ১২৩ জন, বিরলে ১৩ জন, বোচাগঞ্জে ১৫ জন, কাহারোলে নেই, বীরগঞ্জে ২৩ জন, খানসামায় নেই, চিরিরবন্দরে ৪ জন, পার্বতীপুরে ২৮৫ জন, ফুলবাড়ীতে ২১ জন, বিরামপুরে ১৩১ জন, নবাবগঞ্জে ২০ জন, হাকিমপুরে নেই ও ঘোড়াঘাট উপজেলায় ২জন।
আর হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে অব্যাহতি পাওয়া ৭৮৮ জনের মধ্যে রয়েছে দিনাজপুর সদর উপজেলায় ৫০ জন, বিরলে ৩৩ জন, বোচাগঞ্জে ৩৭ জন, কাহারোলে ৫৬ জন, বীরগঞ্জে ৩৮ জন, খানসামায় ১৭ জন, চিরিরবন্দরে ২৭ জন, পার্বতীপুরে ৬৩ জন, ফুলবাড়ীতে ৮৩ জন, বিরামপুরে ৩৪৩ জন, নবাবগঞ্জে ১০, হাকিমপুরে ১১ ও ঘোড়াঘাট উপজেলায় ২০ জন। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা সবাই ভাল রয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন।
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে নতুন করে ১৫১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এরা সবাই ঢাকা ফেরত। ইতিমধ্যে ৩৩৭ জনের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে। করোনা সন্দেহে নতুন করে ১১ জনসহ এ পর্যন্ত জেলায় ৫৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে ২০ জনের রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ। বাকীদের রিপোর্ট এখনও আসেনি।
সিভিল সার্জন ডা: মো: হাবিবুর রহমান জানান, করোনা সন্দেহে এ পর্যন্ত জেলায় ৫৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪৫ জনের নমুনা রংপুরে পাঠানো হয়েছে। বাকী ১১ জনের পাঠানো হবে। এখন পর্যন্ত ২০ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তাদের সবার রিপোর্ট নেগেটিভ।
সম্প্রতি যারা ঢাকা থেকে ফেরত এসেছেন তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। এছাড়াও জেলার কোথাও কারও করোনা উপসর্গ থাকার সন্দেহ হলে তার নমুনা সংগ্রহ করে রংপুরে পাঠানো হচ্ছে।
দোহার (ঢাকা): ঢাকার দোহার উপজেলায় তাবলীগ জামায়াত থেকে ফেরৎ ১২ ব্যক্তিকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। শনিবার বিকাল পৌনে ৬টায় দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা কুড়িগ্রাম থেকে ৪০ দিনের তাবলীগ শেষে শনিবার দোহারে আসেন। তারা উপজেলার কুসুমহাটি, ধোয়াইর এলাকার বাসিন্দা বলে জানা যায়।
জসিম উদ্দিন জানান, দোহারের কুসুমহাটি ও ধোয়াইর এলাকার ১২ ব্যক্তি কুড়িগ্রাম থেকে ৪০ দিনের তাবলীগ শেষে শনিবার দোহারে আসেন। তাদের কারো শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন আছে কিনা বিষয়টি নিশ্চিত হতে দোহারের মাহমুদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শাহআলমের মাধ্যমে দোহারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে।
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের বাসাইলে তাবলিগ ফেরত ৪৭ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাদেরকে বাসাইল ডিগ্রি কলেজে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জোবায়েরপন্থী ও সাদপন্থী বিভিন্ন বয়সের শতাধিক ব্যক্তি ছয়টি দলে ভাগ হয়ে খাগড়াছড়ি, ভোলা, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় তাবলিগ জামায়াতে যায়। এদের মধ্যে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকালে নুরুল ইসলাম, তালহা ও আব্দুল ওয়াজেদের নেতৃত্বে থাকা তিনটি দলের ৪৭জন তাবলিগ থেকে বাসাইলে ফিরে আসেন। পরে তাদেরকে শুক্রবার বাসাইল ডিগ্রি কলেজে স্থাপিত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়। তারা বাসাইল পৌরসভা, কাউলজানী ও হাবলা ইউনিয়নের বাসিন্দা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফিরোজুর রহমান জানান, তাবলিগ জামায়াতের তিনটি গ্রুপের ৪৭জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। জানতে পেরেছি কয়েকদিন আগে আরও তিনটি গ্রুপ তাবলিগ জামায়াত থেকে ফিরেছেন। তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনের রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সিলেট বিভাগ: সিলেট বিভাগের চার জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন আরও ৭০ জন। বর্তমানে সিলেট বিভাগে হোম এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৬৬৩ জন। এছাড়া ৩০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য)’র কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মো. আনিসুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বলেন, সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য)’র কার্যালয় গত ১০ মার্চ থেকে কোয়ারেন্টিনের হিসাব রাখা শুরু করে।
সিলেট বিভাগে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখাদের মধ্যে সুনামগঞ্জ ৩০১ জন, হবিগঞ্জে ৬০ জন, সিলেটে ৫৭ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ২৪৫ জন আছেন। তিনি জানান, এ বিভাগের চার জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় আরও ৩০ জনকে কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
সম্পর্কিত বিষয়:
কোয়ারেন্টাইন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: