রবিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৫, ৭ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


১০ বছর পর ফেসবুকে ছবি দেখে মাকে ফিরে পেলেন ছেলে


প্রকাশিত:
৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:০৭

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:১৫

ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবি দেখে ১০ বছর পর মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে ফিরে পেলেন ছেলে। ওই নারীর নাম সুফিয়া বেগম (৪০)।

ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র, উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকনের সহযোগিতায় চিকিৎসা শেষে সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় এসিল্যান্ড অফিসে ওই নারীর ছেলের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়।

সুফিয়া বেগম নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার গোপালদী গ্রামের এবাদিল মেম্বার বাড়ির মো. আলমের স্ত্রী এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার গ্রামের বদনপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। তিনি দুই ছেলেসন্তানের জননী।

মানসিক ভারসাম্যহীন সুফিয়ার বড় ছেলে (১৬) ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় হিসেবে কর্মরত এবং ১৪ বছর বয়সি ছোট ছেলে আরমান গ্রামের বাড়িতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সুফিয়ার স্বামী মো. আলম পেশায় রিকশাচালক। তাকে তাড়িয়ে রিকশাচালক স্বামী অন্য এক নারীকে বিয়ে করে সংসার গড়েছেন।

ওই নারীর বড় ছেলে মো. শাওন জানান, পারিবারিক কলহের জেরে ১০ বছর আগে তার বাবা ও দাদি তাদের দুই ভাইকে রেখে তার মা সুফিয়া বেগমকে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। তখন তার মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ভবঘুরে হয়ে যান। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে দুই সন্তান তার মায়ের জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে থাকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান পাননি মায়ের।

৪ সেপ্টেম্বর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দেখে তার খালা রাবেয়া খাতুন মায়ের ছবি শনাক্ত করেন।

সূত্র জানায়, মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী দীর্ঘদিন ধরে সোনাগাজী পৌর এলাকায় ভবঘুরে হিসেবে থাকত। তার বিবস্ত্র চলাফেরায় নারী-পুরুষরা চরম বিব্রতবোধ করত। কেউ কেউ মাঝেমধ্যে তাকে বস্ত্র পরিধান করিয়ে দিলেও কিছু সময় পর তা খুলে বিবস্ত্র অবস্থায় চলা ফেরা করতেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কেউ কেউ স্ট্যাটাস দিয়ে দুঃখও প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তখন পর্যন্ত ওই নারীর কোনো পরিচয় পাননি কেউ।

গত ৩ সেপ্টেম্বর সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন ওই নারীর চিকিৎসার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উৎপল দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যথাযথ চিকিৎসা পেলে ওই নারী সুস্থ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন ওই চিকিৎসক। একই দিন সন্ধ্যায় মেয়র চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে ফেনীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়-এর মাধ্যমে তাকে জেলার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান এবং নতুন বস্ত্র কিনে দেন। তার যথাযথ চিকিৎসার জন্য সহায়তায় তিনি আর্থিক অনুদানও প্রদান করেন।

প্রাথমিকভাবে ওই নারী জানান, তার বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়। বাড়িতে তার মা, বোন ও ভাই রয়েছে। এ ছাড়া আর কোনো ঠিকানা তিনি বলতে পারেননি। ভবঘুরে ওই নারীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি শনাক্ত করে তার বড় ছেলে শাওন হোমনা থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে হোমনা থানার ওসি আবুল কায়েস আকন্দ ওই নারীর ছেলেকে সোনাগাজী পাঠান। তার ছেলে-মায়ের ভরণপোষণ বহন করবে মর্মে এসিল্যান্ডের কাছে একটি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করে তার মাকে বুঝে নেন। এ সময় মেয়র খোকন আরও চিকিৎসার জন্য আর্থিক অনুদান প্রদান করেন এবং পরিবারটির পাশে থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

এদিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জানা গেছে, ওই নারী সাড়ে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

সহায়-এর সভাপতি মঞ্জিলা মিমি যুগান্তরকে বলেন, চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় কিছুটা সুস্থ হয়ে ওই নারী তাকে বলেছে— ভবঘুরে থাকাবস্থায় একাধিক লোক রাতে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত এবং ধর্ষণ করত। তাই তিনি নিজে জেদ করে বিবস্ত্র অবস্থায় ঘুরতেন। ইমোতে বোন রাবেয়া ও মায়ের ছবি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠেন সুফিয়া।

এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিখন বণিক, চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন, ফেনী প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবেদ হোসাইন মামুন, পৌর কাউন্সিলর আইয়ূব আলী খান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়-এর সভাপতি মঞ্জিলা মিমি, সাধারণ সম্পাদক জুলহাস তালুকদার ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন রিপন প্রমুখ।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top