কুমিল্লার মুরাদনগরে একই পরিবারে ৭ ভূয়া চিকিৎসক
প্রকাশিত:
২৭ অক্টোবর ২০২১ ০১:২৫
আপডেট:
২২ মার্চ ২০২৫ ০৩:৪১

নয় বছরের মেয়ে মিম কে নিয়ে সামান্য জ্বর ও হাটুর ব্যাথার চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ফার্মেসিতে যান মা বিউটি আক্তার। দ্রুত ভালো হয়ে যাওয়ার কথা বলে দুই প্রকারের এন্টিবায়োটিক সহ সাত প্রকারের ঔষধ দেন ফার্মেসির মালিক হাবিবুর রহমান। যার মধ্যে বিক্রির অযোগ্য সরকারি ঔষধ ছিলো দুই প্রকারের। প্রথম ডোজ ঔষধ সেবনের পর সুস্থ্য হওয়ার বদলে উল্টো অসুস্থ্য হয়ে পরেন মিম।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ঔষধের পাস পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়েছে বলে জানান কর্মরত চিকিৎসক। চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় জেলা শহরে। টাকার অভাবে শহরে না যেতে পেরে পার্শবর্তী উপজেলা দেবীদ্বারে একটি পরিচিত বে-সরকারি হাসপালে নিয়ে মেয়েকে ভর্তি করান মা বিউটি আক্তার।
প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা ধার করে মেয়েকে কিছুটা সুস্থ্য করতে সক্ষম হলেও আগের মতো আর কথা বলতে পারছেনা মিম। উক্ত বিষয়ে থানায় অভিযোগের কথা বলায় প্রতিদিন শুনতে হচ্ছে হুমকি-ধমকি। নিরূপায় হয়ে এখন আল্লাহর কাছে বিচার দেয়া ছাড়া আর কোন রাস্তা বেচে নেই তাদের। এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে ঘটনাটির বিবরণ দেন মা বিউটি আক্তার ও নানা মোবারক হোসেন।
ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের বল্লবদী গ্রামে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাবিবুর রহমান তার বাবা খলিলুর রহমান, পাঁচ ভাই সফিউল্লাহ মোল্লা, সোলায়মান মোল্লা, কাইয়ুম মোল্লা, কারি মোল্লা ও হারিছ মোল্লাসহ সকলেই কোন প্রকার শিক্ষাগত সনদ ছাড়াই নামের আগে ডাঃপদবী ব্যবহার করছেন, বাবা-ছেলে ৭ জনের রয়েছে ৫টি ফার্মেসি এল.এম.এ.এফ ডিগ্রির কথা বললেও ৭ জনের কেউ দেখাতে পারেনি সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কোনো সনদ। ড্রাগ লাইসেন্স পর্যন্ত দেখাতে সক্ষম হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা পেশার মতো একটি সুরক্ষিত পেশায় জড়িয়ে চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলছেন তারা। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
এলাকার একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, দালাল ও নিজস্ব সোর্স খাটিয়ে অল্পশিক্ষিত ও অসহায় মানুষকে চিকিৎসার ফাঁদে ফেলে তাদের ধরিয়ে দেয়া হয় বেশি মূল্যের ঔষুধ। আবার মাঝে মধ্যে চিকিৎসা করাতে এসে অপচিকিৎসার বেড়াজালে আটকে যায় অনেকে। এসব বিষয়ে অভিযোগ করতে চাইলে ব্যবহার করা হয় পেশি শক্তি।
তারা আরও বলেন, ভুল চিকিৎসায় সুস্থ না হয়ে অসুস্থ হয়েছে এটা নতুন কিছু না। বড়ইয়াকুড়ি গ্রামের শ্রী কামার কর্মকার কে চোখের চিকিৎসা করতে গিয়ে সুইয়ের খোচায় অন্ধ করে দিয়েছে। ওরা শক্তিশালী হওয়ায় এর কোন প্রকার বিচার বা অভিযোগ করতে পারেনি ভূক্তভোগী।
তবে একাধিক বার একই ইউনিয়নের পায়ব সাতমোড়া, বল্লবদী, রানীমূহুরি ও বাখরাবাদ এলাকার মানুষদের ভূল চিকিৎসা দিয়ে বাবা-ছেলে সকলেই জরিমানা গুনেছে বহুবার। তারপরেও থেমে নেই অপচিকিৎসা, থেমে নেই নামের আগে ডা: লিখা।
অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান বলেন, নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করলেও আমি কোন প্রেসক্রিপশন দেইনা। নামের আগে ডাক্তার শুধু আমি লিখি না এলাকায় খবর নিয়ে দেখেন সবাই ব্যবহার করে। আর আমার সকল প্রকার কাগজপত্র আছে তবে এই মুহূর্তে সাথে নেই।
ভুল চিকিৎসার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমার চিকিৎসায় সে অসুস্থ হয় নাই আর আমি এতো ঔষধ তাকে দেই নাই। আমার পরিবারের বদনাম করতে তারা এই কাজ করছে।
এ ব্যাপারে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ নাজমুল আলম বলেন, প্রথমতো একটা বাচ্চাকে এক সাথে দুইটা এন্টিবায়োটিক ঔষধ দেয়া ঠিক না। আর কোন প্রকার সনদপত্রবিহীন কেউ চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে পারবে না। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে বলেও জানান তিনি।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সাদেকুর রহমান বলেন, থানায় অভিযোগ নিয়ে আসতে দিচ্ছেনা এ ধরনের কোন অভিযোগ আমার জানা নেই। তবে খবর নিয়ে দেখছি,যদি সত্যতা পাওয়া যায় অবশ্যই ভূক্তভোগিদের কাছ থেকে অভিযোগ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: