বুধবার, ১২ই মার্চ ২০২৫, ২৮শে ফাল্গুন ১৪৩১


বেঁধে দেয়া হলো হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ভাড়া


প্রকাশিত:
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৫৩

আপডেট:
১২ মার্চ ২০২৫ ১০:২১

ছবি : মামুন রশীদ

হিমাগারে প্রতিকেজি আলু সংরক্ষণের ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ)।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পুরানা পল্টনে বিসিএসএর কার্যালয়ে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ভাড়া ও হিমাগার ব্যবস্থাপনার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংগঠনটির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

বিগত ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারী অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী হিমাগারে সংরক্ষিত আলু বের না করায় হিমাগার মালিকরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েন। ফলশ্রুতিতে ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের কিস্তি নিয়মমাফিক পরিশোধ করতে না পারায় বিভিন্ন আর্থিক চাপ ও সমস্যা নিয়ে হিমাগার পরিচালনা করছেন, যা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এ অবস্থায় যদি কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ তাদের ব্যক্তি সুবিধা চরিতার্থ করার জন্য হিমাগারে আলু সংরক্ষণে কেজি প্রতি ভাড়া অযৌক্তিকভাবে কমানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করেন তাহলে আর্থিক সংকটে থাকা হিমাগার পরিচালনা করতে পারবেন না।

কোনো কারণে হিমাগার পরিচালনা করা সম্ভব না হলে আলু উৎপাদনকারী কৃষক, এ খাতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন। যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়াসহ ব্যাপক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। ২০২৫ সালে হিমাগারগুলো কেজি প্রতি ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে খরচ বিবেচনায় নিয়ে কেজি প্রতি ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ৮ টাকা কেজি প্রতি ভাড়া নির্ধারণের যৌক্তিকতা যাচাই করার জন্য আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।

১০ হাজার মেট্রিক টনের একটি হিমাগারের অনুকূলে গৃহীত ব্যাংক ঋণের উপর যে সুদ আসে, তা কেজিপ্রতি আলু সংরক্ষণে রুপান্তর করলে খরচ দাঁড়ায় ৫.৮৬ টাকা এবং এর সঙ্গে বিদ্যুৎ খরচ ১.১০ টাকা যোগ করলে দাঁড়ায় ৬.৯৬ টাকা। যদি হিমাগারগুলো আর্থিকভাবে অসমর্থ হয়ে পড়ে তাহলে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে না পারে তবে নিয়মমাফিক বিদ্যুৎ বিভাগ পরের মাসে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে হিমাগারে সংরক্ষিত আলু নষ্ট হয়ে যাবে, যা আলু সংরক্ষণকারী ও হিমাগার মালিক উভয়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে।

হিমাগার শিল্প একটি মৌসুমভিত্তিক শিল্প। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ৩ মাস পর পর ব্যাংক ঋণের কিস্তি প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু হিমাগারে আলু সংরক্ষণ হয় মার্চ মাসে এবং খালাস হওয়া শুরু হয় জুলাই মাসে। যার ফলে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ঋণের কিস্তি প্রদান করতে না পারায় ঋণ খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। ফলে ১৫ শতাংশ ব্যাংক সুদের সঙ্গে আরও ২ শতাংশ সুদ যোগ হয়ে তা ১৭ শতাংশে দাঁড়াচ্ছে।

বাস্তবতার নিরিখে হিমাগার পরিচালনায় বর্ণিত খরচগুলো সংকুলানে হিমশিম খেয়েও হিমাগার মালিকরা দেশের কৃষক ও জনসাধারণের কল্যাণের নিমিত্ত হিমাগারগুলো পরিচালনা করে যাচ্ছেন। কিন্তু এর পরেও অনেক স্থানে হিমাগারে কিছু সুবিধাভোগী ও স্বার্থান্বেষী মহলরা অবরোধ করে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ভাড়া কমানোর জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি এই অবস্থা চলতে থাকে তাহলে কোনো উপায় না থাকায় আমাদেরকে হিমাগার পরিচালনা বন্ধ রাখতে হতে পারে। কেননা আলু সংরক্ষণকারীদের আলু হিমাগারে সংরক্ষণের পর তা যথাযথ সংরক্ষণপূর্বক তাদেরকে ফেরত দিতে হয়।

আলু চাষকারী কৃষকদেরকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য যদি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ভাড়া কৃষকদের সহনীয় পর্যায়ে আনতে হয় তবে হিমাগার শিল্পকে কৃষিভিত্তিক শিল্প ঘোষণা করে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। পদক্ষেপগুলো হলো-

১. বর্তমানে প্রচলিত দণ্ড-সুদ সহ ব্যাংক ঋণের সুদ শতকরা ১৭ ভাগ থেকে কমিয়ে শতকরা ৭ ভাগ করতে হবে।

২. বিদ্যুৎ বিলের ইউনিট প্রতি রেট পিক আওয়ারে ১৩.৬২ টাকা ও অফপিক আওয়ারে ৯.৬২ টাকার স্থলে ৫ টাকা করতে হবে।

৩. ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে।

৪. উৎসে কর কর্তন (টিডিএস) প্রত্যাহার করতে হবে।

৫. ত্রৈমাসিক ঋণের কিস্তির পরিবর্তে ঋণের কিস্তি বাৎসরিক করতে হবে।

এ সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে বর্তমানে ধার্যকৃত কেজি প্রতি আলু সংরক্ষণ ভাড়া ৮ টাকা থেকে কমে আসবে বলেও জানান মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। তিনি বলেন, হিমাগারে আলু সংরক্ষণে যুক্তিসংগতভাবে নির্ধারিত কেজি প্রতি ৮ টাকা ভাড়ায় হিমাগার পরিচালনায় সহায়তা প্রয়োজন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top