র্যাগিংয়ের সাথে র্যাগ ডে'র যে পার্থক্য
প্রকাশিত:
৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২০:১৯
আপডেট:
৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:০৯

র্যাগ-ডে নিষিদ্ধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে আদেশ জারি করেছিল ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তীব্র আপত্তির মুখে সেটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, র্যাগ-ডে পালনের নামে ক্যাম্পাসে যাতে কোন অসৌজন্যমূলক, অমানবিক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ না হয়, সেজন্য সতর্ক নজর রাখতে হবে।
অথচ এর আগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কথিত 'র্যাগ-ডে' নামে অমানবিক, নিষ্ঠুর ও নীতিবহির্ভূত উৎসব আয়োজন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।"
র্যাগ-ডে ও র্যাগিং পার্থক্য :
বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং নিয়ে দীর্ঘ যাবৎ নানা সমালোচনা চলছে। র্যাগিং বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র আপত্তি থাকলেও র্যাগ-ডে নিয়ে তাদের কখনো আপত্তি ছিলনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে র্যাগ-ডে হচ্ছে একটি বিশেষ দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে শিক্ষার্থীরা এ দিনে নানা আয়োজন করে।
র্যাগ-ডে স্মরণীয় করে রাখতে শিক্ষার্থীরা সেদিন একসাথে ছবি তোলে, র্যালি করে, ব্যান্ড পার্টি আনে কিংবা রং মাখামাখি করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞানের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন বলেন, "সেখানে যেটা হতে পারে, অনেক সময় অনেকের ক্লাস চলে, তখন হয়তো গান হচ্ছে কিংবা বাদক দলের শব্দ হচ্ছে। এটাতে হয়তো বিরক্তি তৈরি হতে পারে। কিন্তু কখনো এটা অমানবিকতার পর্যায়ে পৌঁছেনি।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নজর উল ইসলাম তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, "আমাদের র্যাগ-ডে তে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেছি ঘোড়ার গাড়িতে। বিকালে হলরুমে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।"
অন্যদিকে র্যাগিং সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়। এই র্যাগিং বিষয়টি বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চর্চা হয় বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নবাগত শিক্ষার্থীদের জন্য র্য্যাগিং একটি আতঙ্কের নাম।
জোবাইদা নাসরিন বলেন, 'আদব-কায়দা শেখানোর উদ্দেশ্যে' সিনিয়ররা যদি জুনিয়রদের নিপীড়ন করে সেটাকে বলা হয় র্যাগিং। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের কেউ-কেউ নিজেদেরকে নতুনদের কাছে তুলে ধরা এবং নবাগতদের অনুগত করার জন্য তথাকথিত র্যাযগ দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যেসব শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলগুলোতে বসবাস শুরু করেন, তারাই মূলত র্যাগিং এর শিকার হয় বেশি। আবাসিক হলগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের ব্যাপক আধিপত্য থাকে।
"আদব কায়দা শেখানোর নামে র্যাগ শব্দের প্রচলন হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা ব্যাপক হারে হয় নিপীড়ন। সেটার মধ্য দিয়ে নিজের দলীয় এবং ব্যক্তিগত ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য র্যাগিং করা হয়," বলেন জোবাইদা নাসরিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ হচ্ছে, আবাসিক হলগুলোতে গেস্ট রুম এবং গণ-রুমে র্যাগিং সংস্কৃতি বেশ প্রকট। আবাসিক হলের বিভিন্ন গেস্ট রুমে নবাগত শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে 'আদব-কায়দা শেখানোর' নামে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার শিকার অনেকে সেগুলো প্রকাশ করে আবার অনেকে করে না। বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ সবসময় বলে যে র্যাগিং এর নাম দিয়ে কেউ যদি নির্যাতন করে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এক রিট আবেদনের প্রেরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের নামে নবাগত শিক্ষার্থীদের নির্যাতন বন্ধ করার জন্য কমিটি করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী এই কমিটির কাজ হবে র্যাগিং সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ করা এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া।
সূত্র : বিবিসি
সম্পর্কিত বিষয়:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: