শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তনে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ: উপদেষ্টা
প্রকাশিত:
২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৫৪
আপডেট:
২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:০৬

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন ও মান উন্নয়নে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মন্তব্য করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন: বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে একথা বলেন তিনি।
সি আর আবরার বলেন, সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন করতে চায়। শিক্ষার প্রতিটি স্তরের সিলেবাস যুগোপযোগী করে দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে চায় সরকার।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র বড় বিনিয়োগ আশা করে এবং এর মাধ্যমে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন সহজ হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের জন্যই বিগত সরকার কেবল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামো বানিয়েছিল। তবে, সেসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই।
সম্প্রতি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একপ্রকার উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে এর সমাধানে সকলকেই ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানান ড. রফিকুল আবরার।
এ সময় মূল ধারার শিক্ষার মধ্যে, কারিগরি শিক্ষার একাংশ অন্তর্ভুক্ত করা দরকার বলেও মত দেন তিনি।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি রচনায় মূল চালিকাশক্তির ভূমিকা পালন করতে পারে।
তারা বলেন, বর্তমান শিল্পায়ন ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে টিভিইটি খাতে সংস্কার প্রাসঙ্গিক বিষয় হিসেবে বিবেচ্য। এই লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি, নীতিনির্ধারণী সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সে পরিপ্রেক্ষিতে, একটি ‘কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করার মাধ্যমে এ খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
এই ধরনের সংস্কার উদ্যোগ শুধু দক্ষতা উন্নয়নের প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই নয়, বরং একটি টেকসই অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৬৯.৮ মিলিয়ন। এর মধ্যে নারীদের সংখ্যা প্রায় ৮৩.৩৫ মিলিয়ন, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০.৫০%। বাংলাদেশ একটি যুবপ্রধান দেশ, এবং গড় বয়স ২৯.৬ বছর। বয়সভিত্তিক জনসংখ্যা কাঠামো বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, প্রায় ২৭% জনসংখ্যা ০-১৪ বছর বয়সী এবং প্রায় ৬৭% মানুষ কর্মক্ষম বয়সের (১৫-৬৪ বছর) মধ্যে পড়ে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, ১৫-২৯ বছর বয়সী যুবসমাজ মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০%, যা একটি সম্ভাবনাময় ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড নির্দেশ করে।
বক্তারা বলেন, জনমিতির সব সূচকসমূহে ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে যার মধ্যে রয়েছে গড় প্রত্যাশিত আয়ু বর্তমানে প্রায় ৭৩.২ বছর, প্রজনন হার গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস প্রবণতা এবং গড়ে বর্তমানে প্রায় ২.৩-এ নেমে এসেছে।
জনমিতির এই ইতিবাচক পরিবর্তনকে টেকসই উন্নয়নে রূপান্তর করতে হলে বাংলাদেশের বর্ধিত কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। এবং এক্ষেত্রে মানসম্মত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমের গুরুত্বকে কাজে লাগাতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মিজ নাসরিন আফরোজ প্রমুখ।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: