অনুদানের টাকা ফেরত দিচ্ছেন অমিতাভ রেজা
প্রকাশিত:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২৩:২৯
আপডেট:
১৮ মার্চ ২০২৫ ০২:৫১

সরকারি অনুদান প্রাপ্তির পরও বছরের পর বছর সিনেমা না বানানোর অসংখ্য ঘটনা রয়েছে আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে। তবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরীর বেলায় তা হলো উল্টো। ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পাওয়ার পরও, সিনেমা না বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘আয়নাবাজী’খ্যাত এই নির্মাতা।
২০২০-২১ অর্থবছরে অনুদানের জন্য হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’র পাণ্ডুলিপি জমা দেন তিনি। এটি নির্মাণের জন্য ৬০ লাখ টাকার প্রথম কিস্তি ১৮ লাখ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে এরমধ্যে জমা পড়েছে অমিতাভের অ্যাকাউন্টে। প্রস্তুত কাস্টিং, লোকেশনসহ প্রায় সবকিছু। কিন্তু মাঠে নামার আগেই অমিতাভ রেজা সিদ্ধান্ত পাল্টালেন। এরই মধ্যে সরকারের অনুদান কমিটির সঙ্গে আলাপ করে জানিয়েছেন তার সিদ্ধান্তের কথা। কাল-পরশু (১৫-১৬ সেপ্টেম্বর) মধ্যে পুরো টাকাটাই সরকারকে ফেরত দিচ্ছেন অমিতাভ। কিন্তু কেন?
জবাবে এই নির্মাতা বলেন, ‘আমি এই খবরটি মিডিয়াকে জানাতেই চাইনি। কারণ এক অর্থে একজন নির্মাতা হিসেবে তো এটা আমার ব্যর্থতাই। কত মানুষ অনুদান চেয়ে পান না। আর আমি পেয়েও সেটা ফেরত দিচ্ছি। “পেন্সিলে আঁকা পরী” নির্মাণের জন্য ১০ বছর প্রস্তুতি নিয়েছি। তিন বছর ধরে এর চিত্রনাট্য করেছি রঞ্জন রব্বানীকে সঙ্গে রেখে। তারও আগে দুই দফায় সরাসরি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের কাছ থেকে সিনেমা নির্মাণের জন্য অনুমোদন নিয়েছি। এরপর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে একাধিকবার এটির বিষয়ে পজিটিভ আলাপ হয়েছে।’
অমিতাভ বলেন, ‘এই ছবিটি নির্মাণের জন্য প্রথমে স্যারের কাছ থেকে অনুমতি নেন নির্মাতা আবু সাইয়ীদ ভাই। একসঙ্গে দুটি। এরমধ্যে “নিরন্তর” তিনি নির্মাণ করেছেন। তখনই আমি সাইয়ীদ ভাইয়ের কাছ থেকে “পেন্সিলে আঁকা পরী” নির্মাণের অনুমোদন নেই এবং আমি আবার স্যারের কাছেও যাই। তিনি চোখ বন্ধ করে আমাকে অনুমোদন দেন। শুধু তাই নয় স্যার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আগে, তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তখনও তিনি তাগাদা দিচ্ছিলেন, ছবিটা বানানোর জন্য। তখন আমি “আয়নাবাজি”র কাজে ব্যস্ত ছিলাম। ছবির বিষয়ে স্যারের পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারাও পজিটিভ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বপ্নের ছবিটি আমি বানাতে পারছি না। এটাই হলো চরম বাস্তবতা।’
জানা গেছে, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার সাহিত্য ও নির্মাণ বিষয়ে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে কিছু নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। যে বোর্ডে হুমায়ূন পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ সিনেমাটি অনুদান পাওয়ার পর ট্রাস্টি বোর্ডের চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে গেলে বেশ কিছু নতুন শর্ত সামনে আসে। যে শর্তগুলো মেনে এটি নির্মাণ করতে গেলে গল্পের প্রতি অবিচার করা হবে বলে মনে করছেন অমিতাভ রেজা।
অনুদান ফেরত দেওয়ার মূল আরও একটি কারণ জানা গেছে, হুমায়ূন আহমেদ ট্রাস্টি বোর্ডের বড় অংকের অর্থনৈতিক শর্ত। সিনেমা নির্মাণের আগে তো বটেই, মুক্তির পরেও রেভিনিউ শেয়ার করার নানা শর্ত রয়েছে এতে।
তবে এসব বিষয়ে সরাসরি কথা না বললেও, তার ভাষ্য এমন- ‘আমি শর্তগুলোর বিরোধিতা করছি না। নিশ্চয়ই স্যারের কর্মগুলোকে সঠিক সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই নিয়মগুলো করা হয়েছে। তবে সেটি পালন করে এই ছবিটি বানাতে গেলে ছবিটা আর হবে না। বরং স্যারের গল্পের অবমাননা করা হবে বলে আমি সিনেমাটি না নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
অমিতাভ রেজা আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। হুমায়ূন আহমেদ ট্রাস্টি বোর্ডের শর্ত বা নিয়মগুলোকে আমি রেসপেক্ট করি। বাস্তবতা হচ্ছে, ১০ বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরও ট্রাস্টি বোর্ডের নিয়মের মধ্যে থেকে ছবিটি আমি নির্মাণ করতে পারছি না। মনে রাখতে হবে, সরকার আমাকে ৬০ লাখ টাকা দিলেও এরসঙ্গে সমপরিমাণ টাকা আমাকে লগ্নি করতে হবে- যদি সুন্দরভাবে ছবিটা বানাতে হয়। সেই প্রস্তুতিও ছিলো। কিন্তু শেষে এসে যখন জানলাম শর্তগুলো, তখন আসলে নিরুপায় হয়ে গেছি। তাই ১৮ হাজার টাকা জরিমানাসহ সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত ১৮ লাখ টাকা আমি ফেরত দিচ্ছি কাল-পরশু।’
এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনুদান কমিটির সঙ্গেও বসেছেন অমিতাভ রেজা। কমিটির সদস্যরা বার বার তাকে অনুরোধ করেছেন, সবার সঙ্গে আবার বসে একটা সুরাহা করার। কিন্তু অমিতাভ রেজা মনে করছেন, সিনেমাটি নির্মাণ হলে না হবে অনুদানের টাকাগুলোর সঠিক ব্যবহার, না হবে স্যারের গল্পটির যোগ্য উপস্থাপন। তাই সরকারের টাকাটা ফেরত দেওয়াই উত্তম বলে মনে করেন এই নির্মাতা।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: