স্ত্রী-শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ
সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যু নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে
প্রকাশিত:
১৯ জুন ২০২০ ০১:৩০
আপডেট:
১৯ জুন ২০২০ ০৩:৪২

ছেলে পিয়াসের মৃত্যুর পর মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে একই বাসায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান পিয়াসের বাবা দৈনিক যুগান্তরের সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু। ঘটনার রাতে ওই বাসায় নান্নু, তার স্ত্রী পল্লবী ও শাশুড়ি ছিলেন। নান্নুর মৃত্যু রহস্যের জন্ম দিয়েছে। আর এ রহস্য উদঘাটনে আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে গুলশান বিভাগ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।
ইতোমধ্যে সাংবাদিক নান্নুর পিচ তাজমহল অ্যাপার্টমেন্টের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ জব্দসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে অগ্নিকাণ্ড পরবর্তী মুহূর্তের অনেক ঘটনা দেখা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এবার সাংবাদিক নান্নুর স্ত্রী ও শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশের তদন্ত কমিটি।
এ ব্যাপারে বাড্ডা থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যু নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। সেটা উদঘাটনই কমিটির প্রধান লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।
ইতিমধ্যে ফ্ল্যাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ। নান্নুর স্ত্রীর কাছ থেকে ফ্ল্যাটের চাবি নিয়ে মঙ্গলবার সরকারের তিন সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেন। এদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিআইডির ক্রাইম সিন বিভাগ সেখান থেকে বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেছেন।
গুলশান বিভাগ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর আফতাবনগরে নিজ ফ্ল্যাটে অগ্নিদগ্ধ হয়ে সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের তিনটি সংস্থা ১৭ জুন ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ ও আলামত (ক্রাইম সিন) সংগ্রহ করে। একাধিকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন বিভাগ। আগুনের সূত্রপাতে গ্যাসের লাইনের কোনো দায় ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। তাদেরও পৃথক টিম ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে।
ওসি পারভেজ বলেন, গত ১১ জুন রাতে অগ্নিকাণ্ডের সময়ের ওই অ্যাপার্টমেন্টের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, অগ্নিকাণ্ডে সাংবাদিক নান্নু দগ্ধ হওয়ার পর নিজেই শরীরের আগুন নিভিয়ে ফেলেন। ওই অবস্থায় তাকে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে ছাদে পানির পাইপ নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এরপর নান্নুকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে দেখা গেছে।
১০ তলা বাড়ির নিচ তলায় অভ্যর্থনা কক্ষের সামনে তিনি চেয়ারে ১০ মিনিটের মতো বসে ছিলেন। ওই সময় ১০ তলার ১০/বি ফ্ল্যাটের মালিক তার গাড়ি বের করে নান্নুকে নিয়ে যান হাসপাতালে।
পুলিশের তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাংবাদিক নান্নু দগ্ধ অবস্থায় ভবনের ছাদে যান, পাইপ নিয়ে আবার বাসায় আসেন। এরপর নিচে নামেন। কিছুক্ষণ পর প্রতিবেশী ফ্ল্যাট মালিকের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এসব ঘটনার মধ্যে সাংবাদিক নান্নুর স্ত্রী কিংবা শাশুড়িকে দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, নান্নুকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নেয়ার কমপক্ষে ২৫ মিনিট পর সিসি ক্যামেরার ফুটেজে নান্নুর স্ত্রীকে দেখা যায়। স্বামী অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনায় স্ত্রীর ভূমিকা কী ছিল, ওই রাতে আসলে আর কী কী ঘটেছিল তা জানতে সাংবাদিক নান্নুর স্ত্রী ও শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এ ব্যাপারে পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান ও ডিএমপির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ফ্ল্যাটটি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। তদন্তের স্বার্থে ফায়ার সার্ভিস, তিতাস ও সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট পরিদর্শন করছেন।
তিনি বলেন, সাংবাদিক নান্নুর স্ত্রী-শাশুড়ি গ্রামের বাড়ি আছেন। নান্নুর মৃত্যু রহস্য কী, ওই রাতে ফ্ল্যাটে ঠিক কী ঘটেছিল, অন্য কোনো ঘটনার অবতারণা হয়েছিল কিনা তা জানতে চাওয়া হবে।
উল্লেখ্য, আফতাবনগরের জহিরুল ইসলাম সিটির ৩ নম্বর সড়কের বি ব্লকের ৪৪/৪৬ নম্বর বাসার ১০ তলায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন সাংবাদিক নান্নু। গত ১২ জুন ভোর পৌনে ৪টার দিকে সেখানে রহস্যজনক আগুনে তিনি গুরুতর দগ্ধ হন। গত ২ জানুয়ারি ওই একই বাসায় বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে তাদের একমাত্র সন্তান মিউজিক ডাইরেক্টর পিয়াস (২৪) প্রাণ হারান। সে সময় ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নু। ২০০৭ সালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন নান্নু।
এর আগে শুক্রবার (১২ জুন) সাংবাদিক নান্নুকে গুরুতর অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। ১৩ জুন সকাল ৮টা ২০ মিনিটে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় তার স্ত্রী শাহীনা হোসেন পল্লবী বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: