দাবি শীর্ষ সাংবাদিকদের
দাম বাড়লে কমবে ধূমপান প্রবণতা, বাঁচবে ১৮ লাখ কিশোর-তরুণ
প্রকাশিত:
২৫ মার্চ ২০২৫ ১৫:২৮
আপডেট:
২৬ মার্চ ২০২৫ ০৩:১৯

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি শলাকা সিগারেটের সর্বনিম্ন খুচরা মূল্য ৯ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন দেশের মিডিয়ায় কর্মরত দেশের শীর্ষ স্থানীয় সাংবাদিকরা। তাদের দাবি, সিগারেটের দাম বাড়ানো হলে তরুণদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা কমবে এবং প্রায় ১৮ লাখ কিশোর-তরুণ নতুন করে ধূমপানে আসক্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। পাশাপাশি ২৪ লাখ ৪০ হাজারের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত হবেন।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে নারী মৈত্রী আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যের ওপর কার্যকর কর ও মূল্যবৃদ্ধি’ শীর্ষক সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তারা এসব দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, সিগারেটের দাম বাড়ানো হলে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ১৭ লাখ ১৩ হাজার অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে সরকার সিগারেট থেকে রাজস্ব আয় বাড়িয়ে ৬৯ হাজার ৩৫২ কোটি টাকায় উন্নীত করতে পারবে, যা বর্তমান আয়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি। বর্তমানে সিগারেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৬৭ শতাংশ নির্ধারিত রয়েছে, যার মধ্যে ভ্যাট ১৫ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ১ শতাংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে সভায় নারী মৈত্রীর কার্যক্রম উপস্থাপন করেন সংগঠনটির প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর নাসরিন আকতার। সভায় রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রজ্ঞার হেড অব প্রোগ্রামস মো. হাসান শাহারিয়ার। তিনি বলেন, নিম্ন এবং মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম কাছাকাছি হওয়ায় ভোক্তারা যেকোনো একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে দাম বাড়ালে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী এবং তরুণ প্রজন্ম ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, বাংলাদেশ ফার্স্টের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোরশেদ নোমান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিউজ এডিটর মো. জাহিদুল ইসলাম, চ্যানেল আইয়ের সিএনই মীর মাসরুর জামান, এপি’র ঢাকা ব্যুরো প্রধান জুলহাস আলম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তামাকবিরোধী শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. খালেদা ইসলাম, তামাকবিরোধী মায়েদের ফোরামের আহ্বায়ক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব শিবানী ভট্টাচার্যসহ আরও অনেকে।
এসময় দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকরা তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারকে আহ্বান জানান। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি করে ধূমপানের হার কমানোর লক্ষ্যে। তারা উল্লেখ করেন, বর্তমানে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের দামের পার্থক্য কম থাকায় ভোক্তাদের সহজেই একটি স্তর থেকে অন্য স্তরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে ধূমপান নিরুৎসাহিত করতে এ দুটি স্তরকে একীভূত করে মূল্য বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তাই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সাংবাদিকরা সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য প্রতি ১০ শলাকার জন্য ৯০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে উচ্চ স্তরের সিগারেটের মূল্য ১৪০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরের মূল্য ১৯০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিড়ির প্রতি শলাকার মূল্য কমপক্ষে ১ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।
গবেষণা অনুযায়ী, তামাক পণ্যের বিদ্যমান কর কাঠামোর সংস্কার করা হলে ধূমপানের হার ১৫.১ শতাংশ থেকে কমে ১৩.৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এর ফলে প্রায় ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ছেড়ে দেবে এবং প্রায় ১৮ লাখ কিশোর-তরুণ নতুন করে ধূমপানের অভ্যাস গড়ে তোলা থেকে বিরত থাকবে। পাশাপাশি সরকার প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করতে পারবে, যা জনস্বাস্থ্য ও জাতীয় অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: