শরীরে কোন বিষয়গুলো ঘটলে মানুষ হঠাৎ মারা যায়?
প্রকাশিত:
২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:০৬
আপডেট:
২৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪৫

জীবনের পথে চলতে চলতে আমরা প্রায়ই শুনি, ‘‘ইশ! লোকটা তো হঠাৎ করেই মরে গেল!’’ কারও ঘুমের মাঝেই নিঃশব্দে মৃত্যু, আবার কারও কর্মরত অবস্থায় হঠাৎ প্রাণ হারানো । এসব ঘটনা আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত মনে হলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের ব্যাখ্যা ভিন্ন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক ও শ্বাসযন্ত্রের কিছু ব্যর্থতার কারণেই মূলত হঠাৎ মৃত্যু ঘটে। চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে দেখা যায়, কিছু শারীরিক সংকেত অগ্রাহ্য করার ফলেই এমন মর্মান্তিক পরিণতি হয়।
হৃদরোগ: নীরব ঘাতক
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সর্বাধিক মৃত্যু হৃদরোগের কারণে হয়। আমাদের পরিচিত ‘হার্ট’ বা হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ জরুরি। রক্তনালী বন্ধ হয়ে গেলে, অক্সিজেনের অভাবে হার্টের মাংসপেশি নষ্ট হয় এবং হার্ট অ্যাটাক হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, কার্ডিয়াক ফেইলিউর (হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা) বা রেস্পিরেটরি ফেইলিউর (শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতা) এ দুটি কারণেই মূলত হঠাৎ মৃত্যু ঘটে।
তিনি বলেন, “হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর কয়েক মিনিটের মধ্যে যদি চিকিৎসা শুরু না হয়, মৃত্যু প্রায় অনিবার্য হয়ে ওঠে।” বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, বুকের মাঝ বরাবর ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, বমি বমি ভাব—এই লক্ষণগুলো দেখা দিলেই অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতা
রেস্পিরেটরি ফেইলিউর বা শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতাও হঠাৎ মৃত্যুর অন্যতম কারণ। যখন শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন নিতে ব্যর্থ হয় বা কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করতে পারে না, তখন এই অবস্থা সৃষ্টি হয়।
ডা. আজাদের মতে, “প্রতিটি মুহূর্ত এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছয় মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হলে জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা কিছুটা বাড়ে।”
শ্বাসকষ্ট, নীল ঠোঁট বা আঙুলের ডগা, প্রচণ্ড ক্লান্তি, বিভ্রান্তি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
পালমোনারি এম্বোলিজম: অজানা ভয়
পালমোনারি এম্বোলিজম, অর্থাৎ ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধাও হঠাৎ মৃত্যুর অন্যতম কারণ। কেউ নামাজ পড়তে গিয়ে হঠাৎ লুটিয়ে পড়লে বা হঠাৎ মাটিতে পড়ে গেলে এই রোগের সম্ভাবনা থাকে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফুসফুসের রক্তনালী বন্ধ হয়ে গেলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, দ্রুত চিকিৎসা না পেলে প্রাণ হারানোর ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য মতে, পালমোনারি এম্বোলিজমে আক্রান্ত প্রতি তিনজনের একজন চিকিৎসা শুরুর আগেই মারা যান। ঝুঁকিপূর্ণদের মধ্যে রয়েছেন ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, প্রবীণ জনগোষ্ঠী এবং অতিরিক্ত ওজনের মানুষ।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: