সোমবার, ১৭ই মার্চ ২০২৫, ৩রা চৈত্র ১৪৩১


তীব্র ডেঙ্গুতে যখন রক্তক্ষরণ


প্রকাশিত:
১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:১৮

আপডেট:
১৭ মার্চ ২০২৫ ১৩:১৪

ফাইল ছবি

ধরন
জ্বর, গা-হাত-পা-চোখ-মাথা ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, দুর্বলতা, ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ, বমি ইত্যাদি ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ। এই রোগের চারটি ধরন রয়েছে। তাই একজন মানুষের চারবার ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব ধরনের মধ্যে ডেনভি-২ ও ডেনভি-৩ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, এ বছর ঢাকা মহানগরে ডেনভি-৩-এর প্রকোপ বেশি। তবে একই সঙ্গে একই স্থানে চারটি ধরনের সহাবস্থান থাকাটাও স্বাভাবিক। কে কোন ধরন দ্বারা সংক্রমিত হচ্ছে, এটা বলা মুশকিল। তবে ডেঙ্গুর যেকোনো একটি ধরন দ্বারা আক্রান্ত হলে সারা জীবনের জন্য সেই ধরনের ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধক তৈরি হয়ে যায়। অন্য ধরনগুলোর বিরুদ্ধে স্বল্প সময়ের জন্য আংশিক প্রতিরোধ গড়ে উঠলেও দীর্ঘস্থায়ী কোনো প্রতিরোধ গড়ে ওঠে না। বরং অন্য ধরন দ্বারা পরে সংক্রমিত হলে সেই ডেঙ্গু হতে পারে তীব্র।

তীব্র মাত্রার ডেঙ্গু
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ও ডেঙ্গুজনিত রক্তক্ষরণকে বলা যায় তীব্র মাত্রার ডেঙ্গু। এই দুটি দশা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ঠেলে দিতে পারে মৃত্যুর দরজায়। এ ছাড়া ডেঙ্গুতে লিভারের প্রদাহ হতে পারে। এমনকি ডেঙ্গু হৃদপেশি আক্রমণ করতে পারে। একে বলা হয় মায়োকার্ডাইটিস। এই রোগে মস্তিষ্কের প্রদাহ বা এনকেফালাইটিস পর্যন্ত হতে পারে। পানি আসতে পারে ফুসফুসে, পেটে। সে জন্য তীব্র ডেঙ্গুর উপসর্গ জানা খুবই জরুরি। উপসর্গগুলো হলো—

♦ নাক, দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ

♦ বমি কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ

♦ পেটে ব্যথা

♦ দিনে তিনবারের বেশি বমি হওয়া

♦ শ্বাসকষ্ট

♦ প্রচণ্ড দুর্বলতা, অস্থিরতা কিংবা খিটখিটে ভাব, হঠাৎ করে আচরণগত পরিবর্তন, এলোমেলো ভাব।

♦ তাপমাত্রায় বিশাল তারতম্য। জ্বর থেকে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়া (হাইপোথারমিয়া)।

♦ ফুসফুস কিংবা পেটে পানি জমতে থাকা

♦ হাত, পা, চামড়া ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া

♦ রক্তের হেমাটোক্রিট ২০ শতাংশ কমে যাওয়া

♦ লিভার বড় হয়ে যাওয়া।

এসব জটিলতা দেখা দিলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নিতে হবে।

জটিলতার শুরু
সাধারণত জটিলতা শুরু হয় ডেঙ্গুর তৃতীয় দিন থেকে সপ্তম দিনের মধ্যে অনেকটা আকস্মিকভাবে। জ্বর সেরে যাওয়ার দুই দিন পর পর্যন্ত এসব রোগীর তদারকি করতে হয়। কেননা এ সময়ই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভয়ানক জটিলতা দেখা যায়।

রক্তক্ষরণ কেন?
ডেঙ্গু ভাইরাসের আক্রমণে রক্তের অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট কমতে শুরু করে। অনেক সময় খুব দ্রুত কমে যায় এই রক্তকণিকা। অণুচক্রিকা হলো রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ কণিকা, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে অকুস্থলে দল বেঁধে ছুটে আসে এরা। দেহের আরো অনেক উপাদানের সাহায্য নিয়ে এরা ত্বরিতগতিতে রক্তনালি আটকে দেয়। ডেঙ্গুতে বা অন্য কোনো কারণে অণুচক্রিকা কমে গেলে সৃষ্টি হতে পারে রক্তক্ষরণ। চামড়ার নিচে, দাঁতের গোড়ায়, নাকে, পাকস্থলীর গাত্র থেকে ঝরতে থাকে রক্ত। বমি, প্রস্রাব-পায়খানার সঙ্গে বেরোতে পারে রক্ত। নারীদের রজস্রাবের রক্তের মাত্রা বেড়ে যায়। এমনকি মস্তিষ্কেও শুরু হতে পারে রক্তক্ষরণ। রক্তে অণুচক্রিকার স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ঘন মিলিলিটারে দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। সাধারণত চতুর্থ দিন থেকে দ্রুত কমতে থাকে এই রক্তকণিকা বা প্লাটিলেট।

করণীয়
♦ রক্তের অণুচক্রিকা কমতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

♦ এক লাখের নিচে নেমে গেলে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

♦ অণুচক্রিকা ৫০ হাজারের নিচে নেমে গেলে ক্ষেত্রবিশেষে দিনে দুইবার রক্ত পরীক্ষা করে জেনে নিতে হবে অণুচক্রিকা ও হেমাটোক্রিটের মাত্রা। মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুতে কখনো -সখনো সকাল-বিকাল অণুচক্রিকার মাত্রায় ব্যাপক তারতম্য হয়ে থাকে। এ সময় শুরু হতে পারে পানিশূন্যতা। এটি যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পানীয়, শরবত, স্যালাইন ও পানি পান করাতে হবে।

♦ প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন দিতে হবে। ডেঙ্গুর চিকিৎসায় অন্যতম প্রধান দিক হলো ফ্লুইডথেরাপি বা পানিচিকিৎসা।

কখন রক্ত প্রয়োজন?
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীকে রক্ত দিতে হবে কি না তা নির্ভর করে চিকিৎসকের সিদ্ধান্তের ওপর। কোনো কোনো চিকিৎসক প্লাটিলেট ২০ হাজারের নিচে নেমে গেলে, আবার কেউ কেউ ১০ হাজার বা তারও নিচে নেমে গেলে অণুচক্রিকা প্রদানের সুপারিশ করেন। তবে প্লাটিলেট ২৫ হাজারে নেমে এলে সতর্কতার জন্য রক্তদাতা জোগান রাখা উত্তম। প্রয়োজনে রক্ত লাগলে যাতে দ্রুততার সঙ্গে তা প্রয়োগ করা যায় সেই ব্যবস্থাপনা থাকা জরুরি।

অণুচক্রিকা বৃদ্ধির বিকল্প পথ
অণুচক্রিকা বাড়ানোর জন্য কিছু খাবার বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। পেঁপে পাতার রস এ ক্ষেত্রে উত্তম। এটি রস করে দিনে দুই-তিনবার দুই চামচ করে দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া খাওয়া যেতে পারে পেঁপে, ডালিম, দুধ ইত্যাদি। এসব রোগীর খাদ্যতালিকায় রাখা জরুরি। অণুচক্রিকা বৃদ্ধির জন্য রয়েছে দাওয়াই। চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে তাও দেওয়া যেতে পারে ক্ষেত্রবিশেষে। তবে সব রোগের মতোই ডেঙ্গু প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ হচ্ছে সর্বোত্তম রক্ষাকবচ। আর প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন মশকমুক্ত নগরজীবন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top