বৃহঃস্পতিবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৫, ১১ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


ভারতে ফের ‘মুসলিম কোটা’ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে


প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৩ ০০:৪৬

আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৪৪

 ফাইল ছবি

সরকারি চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে সংখ্যালঘু মুসলিমদের জন্য ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যে যে আলাদা সংরক্ষণ বা কোটার ব্যবস্থা আছে, তা নিয়ে ভোটের আগে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রোববার হায়দরাবাদের কাছে এক জনসভায় মুসলিমদের জন্য এই কোটাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে বর্ণনা করেছেন।

বিজেপি তেলেঙ্গানাতে ক্ষমতায় এলে মুসলিমদের কোটা বাতিল করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) নেতা ও এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি থেকে শুরু করে রাজ্যের ক্ষমতাসীন ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতির (বিআরএস) নেতারা একযোগে অমিত শাহর এই ঘোষণার তীব্র বিরোধিতা করছেন।

এর আগে, দক্ষিণ ভারতের আর একটি রাজ্য কর্ণাটকেও মুসলিমদের জন্য যে চার শতাংশ কোটা ছিল তা সম্প্রতি বাতিল করা হয়েছে।

কর্ণাটকে আগামী মাসে বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে সেখানকার বিজেপি সরকারের নেওয়া ওই সিদ্ধান্ত অবশ্য সুপ্রিম কোর্টে সমালোচনার মুখে পড়েছে। তবে অমিত শাহর কথা থেকে স্পষ্ট, কর্ণাটকের পর তেলেঙ্গানাতেও তারা একই ধরনের নীতি নিয়ে এগোতে চান।

অন্যদিকে রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিআরএস মনে করে, রাজ্যে মুসলিমদের জন্য কোটা থাকা উচিত তাদের জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও রাজ্যে মুসলিমদের জন্য ১২ শতাংশ কোটা চালু করা হবে বলেও অঙ্গীকার করেছিলেন।

• অমিত শাহর বক্তব্য
ভারতের হাতে গোনা যে কয়েকটি রাজ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা সংরক্ষণ বা কোটার ব্যবস্থা আছে তার অন্যতম হল তেলেঙ্গানা।

মুসলিমদের জন্য সরকারি চাকরি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চার শতাংশ কোটার বিধান রেখে একটি বিল রাজ্য বিধানসভায় পাস হয়েছিল ২০১৭ সালে। তখন থেকেই এই ইস্যুটি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে।

২০১১ সালের আদমশুমারিতে তেলেঙ্গানায় মুসলিম জনসংখ্যার হার ছিল ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। সেই অনুযায়ী রাজ্যের শাসক দল মুসলিমদের জন্য ১২ শতাংশ সংরক্ষণেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যদিও তারা সেটা রাখতে পারেনি।

এখন তেলেঙ্গানায় এসে বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা দিয়েছেন, এই চার শতাংশ মুসলিম কোটাও তারা ক্ষমতায় এলে তুলে নেবেন।

হায়দরাবাদের কাছে চেভেল্লায় রোববার এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, মুসলিম বা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য এভাবে আলাদা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করাটা অসাংবিধানিক।

‘এই অধিকারটা আসলে তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং ওবিসি, অর্থাৎ পশ্চাৎপদ শ্রেণিভুক্ত লোকদের,’ মন্তব্য করেন তিনি।

ওই রাজ্যের কে চন্দ্রশেখর রাও সরকার আসলে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির নেতৃত্বাধীন এআইএমআইএমের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

‘তেলেঙ্গানায় আসলে কোনও সরকারই চলতে পারে না, যার স্টিয়ারিং মজলিসের (এআইএমআইএম) হাতে নেই!’

দেশটির মুসলিম সমাজের নেতৃস্থানীয় মুখ আসাদউদ্দিন ওয়াইসিকে আক্রমণ করে তিনি আরও বলেন, আমরা মজলিসকে ভয় পাই না। আমরা তেলেঙ্গানার মানুষের জন্য রাজ্যে সরকার চালাব, ওয়াইসির কথায় চালাব না!

• ওয়াইসির প্রতিবাদ
মুসলিম কোটা বাতিল করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে পাল্টা আক্রমণ করে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি আবার বলেছেন, তেলেঙ্গানার জন্য বিজেপির কোনও ‘ভিশন’ নেই। আছে শুধু ‘মুসলিমবিরোধী হেইট স্পিচ।’

এক টুইটে তিনি বলেন, পিছিয়ে থাকা মুসলিম গোষ্ঠীগুলোর জন্য যে সংরক্ষণের ব্যবস্থা, তা করা হয়েছে দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ-নির্ভর তথ্যের ভিত্তিতে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯২ সালে এক ঐতিহাসিক রায়ে বলেছিল, দেশের কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের মোট সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা হবে ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ কোনও সরকারই অর্ধেকের বেশি পদ সংরক্ষণের আওতায় আনতে পারবে না।

সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে ওয়াইসি বলেন, তফসিলি জাতি, উপজাতি বা ওবিসিদের সামাজিক ন্যায়ের জন্য অমিত শাহ যদি সত্যিই আন্তরিক হন, তাহলে তার উচিত এই ৫০ শতাংশ কোটা সিলিং তুলে নেওয়ার জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব আনা।

মুসলিম-বিরোধী কথাবার্তা ছেড়ে রেকর্ড-ভাঙা মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব নিয়েও অমিত শাহকে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি বলেছেন, গোটা দেশের মধ্যে মাথাপিছু আয় সবচেয়ে বেশি তেলেঙ্গানাতেই।

এদিকে কর্ণাটকেও আগামী ১০ মে বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের বিজেপি সরকার চার শতাংশ ‘মুসলিম কোটা’ প্রত্যাহার করে নিয়ে তা রাজ্যের দুটি প্রভাবশালী হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তা সমান ভাগে ভাগ করে দিয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে কর্ণাটকের বাসবরাজ বোম্মাই সরকার বলেছে, রাজ্যের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থা যাচাই-বাছাই করে একটি কমিটি যে সুপারিশ করেছিল তার ভিত্তিতেই ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট এই বক্তব্য গ্রহণ করেনি। শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা বরং বলেছেন ‘খুবই দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ’ যুক্তির ভিত্তিতে কর্ণাটক সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কর্ণাটক সরকারের সিদ্ধান্ত ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমাও ছাড়িয়ে গেছে বলে সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছে।

শীর্ষ আদালতের এই সমালোচনার পরও পার্শ্ববর্তী তেলেঙ্গানাতেও বিজেপি একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে চায় বলে এখন প্রকাশ্যেই ঘোষণা করছে। বিবিসি বাংলা।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top