বৃহঃস্পতিবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৫, ১০ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


বিদ্রোহ দমনের পর শান্ত রাশিয়া, পুতিনের পতনের আশায় পশ্চিম


প্রকাশিত:
২৬ জুন ২০২৩ ২৩:৩৫

আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:৫৯

 ফাইল ছবি

ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনীর চলমান সামরিক অভিযানে রুশ বাহিনীর প্রধান সহযোগী ও বেসরকারি যোদ্ধা বাহিনী পিএনসি ওয়াগনারের বিদ্রোহ দমনের পর দৃশ্যত শান্ত রয়েছে রাশিয়া।

অন্যদিকে রাশিয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও বৈরীপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো এই বিদ্রোহের মধ্যেই দেশটিতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পতনের আশা দেখছে।

রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে পিএনস ওয়াগনারের যোদ্ধাদের হত্যা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের যাবতীয় কৃতিত্ব ‘ছিনতাইয়ের’ অভিযোগ তুলে ২৩ জুন, শুক্রবার রাশিয়ার সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দেন ওয়াগনারপ্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন, যিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের অন্যতম ঘনিষ্টজন বলে রাশিয়ায় পরিচিত।

পরের দিন শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বার্তায় বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়ে প্রিগোজিন আরো বলেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনরেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে উৎখাত করে ওয়াগানার গ্রুপের ২৫ হাজার সেনা নিয়ে তিনি মস্কোর পথে রওনা হয়েছেন।

তবে শেষ পর্যন্ত মস্কোতে ঢুকতে পারেননি ওয়াগনার যোদ্ধারা। ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী রুশ শহর রুস্তোভেই থেমে যায় তাদের পদযাত্রা। পরে সাধারণ ক্ষমার আওতায় তাদের সবাইকে ফের নিজ নিজ ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

তবে তাদের দলনেতা ও ওয়াগনারপ্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন আর যুদ্ধেক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। শিগগিরই একটি চুক্তির আওতায় তাকে বেলারুশ পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ট মিত্র এবং বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো নিজে এই চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছেন। সর্বশেষ রোববার রুস্তভ শহরে একটি সুভ গাড়িতে দেখা গিয়েছিল প্রিগোজিনকে।

সোমবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে সামরিক বাহিনীর একটি উড়োজাহাজে ইউক্রেনে গিয়েছেন। সেখানে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর কমান্ডার সঙ্গে মতবিনিয়ের উদ্দেশেই তার এই যাত্রা।

এদিকে শনি ও রোববার— দু’দিন মস্কোতে ব্যাপক নিরাপত্তা জারির পর সোমবার তা প্রত্যাহার করা হয়েছে, সেই সঙ্গে সাধারণ জনগণকে স্বস্তি দিতে এই দিনটিকে সাধারণ ছুটির দিন হিসেবেও ঘোষণা করেছে মস্কো। রাশিয়ার আইটি, টেলিকম এবং মিডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মীরাও ছুটি ভোগ করছেন।

রাশিয়ার ডিজিটাল অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘শনিবার ছিল আমাদের জন্য খুবই দুশ্চিন্তা এবং আবেগপূর্ণ দিন। যে মানসিক অবস্থায় আমরা পৌঁছেছিলাম, সেখান থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে একদিন বিরতির প্রয়োজন ছিল।’

এদিকে অভূতপূর্ব এই বিদ্রোহের ঘটনা ঘিরে কৌতুহলী হয়ে উঠেছে রাশিয়ার শত্রু ও মিত্র— উভয়পক্ষের বিভিন্ন দেশ। এই বিদ্রোহের পরবর্তী ঘটনাবলী রাশিয়ায় কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে— সে সম্পর্কেও আগ্রহী তারা। বিশেষ করে, রাশিয়ার প্রতি বৈরীভাবাপন্ন দেশগুলোর আশা— এই বিদ্রোহের ধারবাহিকাতায় রাশিয়ার সামরিক ও বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রে অস্থিরতার সৃষ্টি হবে, যা দেশটিতে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা পুতিনের শাসনামলের পতন ডেকে আনবে।

রাশিয়ার মিত্র চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষায় মস্কো যা যা পদক্ষেপ নিয়েছে— সেসবের প্রতি সমর্থন রয়েছে বেইজিংয়ের।

অন্যদিকে রাশিয়ার প্রধান বৈরী দেশগুলোর একটি জার্মানি বলেছে, সাম্প্রতিক এই বিদ্রোহ পুতিনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের একাধিক ফাটল প্রকাশ্যে এনেছে।

সোমবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবক সাংবাদিকদের বলেন, ‘বহির্বিশ্বে রাশিয়া যেসব প্রপাগান্ডা প্রচার করে— সেসবের মধ্যকার ফাটলগুলো প্রকাশ্যে এসেছে এবং আমরা সেসব দেখতে পাচ্ছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এই বিদ্রোহের ফলশ্রুতিতে সামনের দিনগুলোতে আরও বিদ্রোহের মুখোমুখী হতে হবে রাশিয়াকে। আমরা ইতোমধ্যে সেই আলামত দেখতে পাচ্ছি।’

ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি দেশটির দৈনিক মেসাগ্গেরোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘পুতিনের রাশিয়ার ঐক্যের যে মিথ আমরা এতদিন শুনে আসছি— তা শেষ হয়ে গেছে। ভাড়াটে সৈন্যদলের সঙ্গে যখন কোনো সরকার আপোসে যায়, তখন বোঝাই যায় যে ওই সরকার নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে চরম দুশ্চিন্তিত।’

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দেশটির দৈনিক লা প্রোভেন্সকে বলেন, ‘এই বিদ্রোহ রাশিয়ার সেনাবাহনীর অভ্যন্তরের বিভাজনকে প্রকট করে তুলেছে। এসব বিভাজনই রাশিয়াকে টালমাটাল করে তুলবে।’

এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে রাশিয়ার সাম্প্রতিক এই বিদ্রোহ নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে।

আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী— উভয়ই সামনের দিনগুলোতে রাশিয়াকে চাপে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top