ক্যালিফোর্নিয়ায় ভারতীয় দূতাবাসে খালিস্তানিদের আগুন
প্রকাশিত:
৫ জুলাই ২০২৩ ০১:৫১
আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:৫৯

যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে সন্দেহভাজন খালিস্তানি সমর্থকদের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার কড়া নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে কানাডার টরন্টোতে খালিস্তানিরা একটি ‘ফ্রিডম র্যালি’র ডাক দেওয়ার পর দিল্লিতে কানাডার রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ভারত সরকার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
ভারতের পাঞ্জাবে ‘খালিস্তান’ নামে শিখদের পৃথক রাষ্ট্র গঠনের দাবিকে যারা সমর্থন করেন, বিদেশের মাটিতে তাদের যে সব তৎপরতা ভারতকে তীব্র অস্বস্তিতে ফেলছে এগুলো তাতে সবশেষ সংযোজন।
সোমবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘মৌলবাদী ও উগ্রপন্থী’ খালিস্তানি আদর্শবাদ ভারতের জন্য যেমন ভালো নয়; তেমনি ভারতের মিত্র দেশ আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার জন্যও ভালো নয়।
ওই চারটি দেশেই সম্প্রতি ভারতের দূতাবাস বা মিশনগুলো কয়েকবার খালিস্তানিদের হামলার মুখে পড়েছে। সানফ্রান্সিসকোর ঘটনায় গত শনিবার রাতে (ভারতের স্থানীয় সময় রোববার সকালে) ভারতীয় কনস্যুলেটে একদল খালিস্তানি আচমকা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তারা দূতাবাসের একটি অংশে আগুনও ধরিয়ে দেয়।
তবে বার্তা সংস্থা এএনআই জানাচ্ছে, সানফ্রান্সিসকো ফায়ার ডিপার্টমেন্ট খুব দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিভিয়ে ফেলায় বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ছুটির দিন হওয়ায় দূতাবাসের কর্মীরাও তখন কনস্যুলেট ভবনে ছিলেন না।
পরে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, সানফ্রান্সিসকোতে ভারতীয় কনস্যুলেটে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টার কঠোর নিন্দা জানায় আমেরিকা। বিদেশের কোনও দূতাবাস প্রাঙ্গণে বা বিদেশি কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে যে কোনও ধরনের হামলাকে আমেরিকা যে গুরুতর ‘ফৌজদারি অপরাধ’ বলে গণ্য করে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি।
সানফ্রান্সিসকোর ওই ঘটনার পর আমেরিকায় দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে জনপ্রিয় একটি কমিউনিটি টিভি চ্যানেল যে ফুটেজ প্রচার করেছে, তাতে প্রশ্ন উঠেছে কানাডায় সম্প্রতি একজন খালিস্তানি নেতার রহস্যজনক হত্যার সঙ্গে এই ঘটনার কোনও সম্পর্ক আছে কি না।
দিয়া টিভি নামে ওই চ্যানেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে যে ভিডিও শেয়ার করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় কনস্যুলেটে আগুন জ্বলছে। আর তার ওপর সুপারইম্পোজ করে লেখা ‘ভায়োলেন্স বেগেটস ভায়োলেন্স’ (অর্থাৎ হিংসা শুধু হিংসাই ডেকে আনে)।
ভিডিওতে খবরের কাগজের ক্লিপিংও ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যার খবর দেওয়া হয়েছিল। এর আগে গত ১৯ জুন কানাডার সারেতে একটি গুরুদোয়ারার পার্কিং লটে কেউ বা কারা খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে গুলি করে হত্যা করে।
হরদীপ সিং নিজ্জর ভারত সরকারের কাছে একজন ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গী হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। তিনি ‘খালিস্তান টাইগার ফোর্স’ বা কানাডাতে ‘শিখস ফর জাস্টিসে’র (এসএফজে) মতো একাধিক সংগঠনেরও প্রধান ছিলেন।
৪৬ বছর বয়সী নিজ্জর পাঞ্জাবের জলন্ধরের বাসিন্দা হলেও বহু বছর তিনি ভারতে আসেননি। এর আগে ভারত সরকার কানাডার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল, বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল (বিকেআই) নামে খালিস্তান-সমর্থক যে জঙ্গী গোষ্ঠীটি কানাডাতে দীর্ঘকাল ধরে সক্রিয়, তাদের হয়েও প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করতেন হরদীপ সিং নিজ্জর।
এই হত্যাকান্ডে ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর হাত থাকতে পারে, বিদেশের কোনও কোনও খালিস্তানি সংগঠন এমন সন্দেহও প্রকাশ করেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিষয়টি নিয়ে চর্চা হচ্ছে, তবে ভারত সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি।
এদিকে কানাডার টরন্টোতে আগামী শনিবার (৮ জুলাই) খালিস্তান সমর্থকরা যে ফ্রিডম র্যালি বা স্বাধীনতা মিছিলের ডাক দিয়েছেন তাকে কেন্দ্র করেও ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধ দেখা দিয়েছে।
ওই ফ্রিডম র্যালির সমর্থনে অনলাইনে যে সব পোস্টার ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাতে হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকান্ডের জন্য সরাসরি ভারত সরকারকে দায়ী করা হয়।
পোস্টারে ছাপা হয়েছে কানাডায় ভারতের হাই কমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মা, ভ্যাঙ্কুভারের কনসাল জেনারেল মনীশ ও টরন্টোর কনসাল জেনারেল অপূর্বা শ্রীবাস্তবের ছবিও; সঙ্গে তাদের প্রতি প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারির বার্তা।
এরপরই সোমবার রাতে দিল্লিতে কানাডার রাষ্ট্রদূত ক্যামেরন ম্যাককেওভকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে ওই ফ্রিডম র্যালির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। কানাডাতে নিযুক্ত ভারতের কূটনীতিবিদরা যে তাদের ওপর শারীরিক হামলারও আশঙ্কা করছেন, হাই কমিশনারকে বলা হয় সে কথাও।
এরপরই কানাডা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে, ফ্রিডম র্যালির সমর্থনে যেসব পোস্টার দেওয়া হয়েছে তা আদৌ মেনে নেওয়া যায় না। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি ভারতীয় সময় আজ (মঙ্গলবার) সকালে টুইট করেন, ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা বিধান করার যে দায়িত্ব, কানাডা সরকার সেটাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।
ভারতের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও তারা বিষয়টি নিয়ে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখে চলেছেন বলে জানান জোলি। তবে খালিস্তান সমর্থকরা কানাডাতে যেভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছেন বলে ভারত মনে করে, সেটা যে দিল্লির আদৌ পছন্দ নয় সাম্প্রতিক অতীতেও তা বহুবার কানাডা সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে তারা। বিবিসি বাংলা।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: