বুধবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৫, ১০ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


প্রয়োজন অনুসারে বাংলাদেশে যে কাউকেই নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র


প্রকাশিত:
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৭

আপডেট:
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৩

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার (ফাইল ছবি)

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করলে প্রয়োজন অনুসারে যেকোনও বাংলাদেশির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমন কথাই জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ অন্য সকল কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

আরও পড়ুন: নির্বাচনের আগে লাইবেরিয়ায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের

এদিনের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ছাড়াও নাগরিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গটিও উঠে আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারের কাছে বাংলাদেশে গণমাধ্যমকর্মী বা সাংবাদিকদের ওপর ভিসা নীতি কার্যকরের বিষয়ে জানতে চান। তিনি প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশে নতুন করে আরও ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের কথা ভাবছে, বিশেষ করে সরকারপন্থি মিডিয়াসহ যারা সরকারকে ‘দৈত্য’ হতে সাহায্য করেছে, তাদের বিরুদ্ধে? বিশেষ করে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার পরিধি আরও বিস্তৃত করছে। অর্থাৎ মিডিয়াসহ অপপ্রচারে জড়িতরাও এর আওতায় আসবে।

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি এখন নির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করতে যাচ্ছি না। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভীসা নীতি কার্যকর করার পদক্ষেপ আমরা শুরু করেছি।

আরও পড়ুন: যাত্রীর চুরি করা টাকা গিলে ফেললেন বিমানবন্দরের কর্মী

তিনি আরও বলেন, গত ২৪ মে ভিসা নীতি ঘোষণার সময় আমরা এটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। আমরা ভিসা নীতির কথা বলেছি তবে কারও নাম উল্লেখ করিনি। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল ও বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত যেকোনও বাংলাদেশির ক্ষেত্রে এই ভিসা নীতি কার্যকর হবে। অন্য যেকোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি আমরা মনে করি তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে আমরা এই নীতি প্রয়োগ করব।

পৃথক প্রশ্নে ওই সাংবাদিক জানতে চান, বাংলাদেশের স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এমনকি শুধু তার নিরাপত্তা উদ্বেগই নয়, দূতাবাসের কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন তিনি। তার এই উদ্বেগ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা বর্তমান সরকারের অধীনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ওপর বেশ কয়েকটি হামলা হতে দেখেছি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি এই উদ্বেগগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেন?

আরও পড়ুন:আরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে : ব্রায়ান শিলার

জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, আমি মার্কিন দূতাবাস বা সেখানে কর্মরত কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে নির্দিষ্ট বিবরণ নিয়ে আলোচনা করব না। তবে আমি বলব, অবশ্যই আমাদের কূটনৈতিক কর্মীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিয়েনা কনভেনশনের কূটনৈতিক সম্পর্কের শর্ত অনুসারে, প্রতিটি স্বাগতিক দেশ অবশ্যই সকল দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা মেনে চলবে। পাশাপাশি কূটনীতিকদের ওপর যেন কোনও ধরনের হামলা না হয় তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দেয়। যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল বিদেশি দূতাবাস এবং কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আরও পড়ুন: ‘অনেক আগেই’ গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া হয়েছে ভারতকে: ট্রুডো

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে গত মে মাসে নতুন ভিসা নীতির কথা ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন সেসময় টুইট করে এই ঘোষণা দেন। এই নীতির আওতায় যে কোন বাংলাদেশি ব্যক্তি যদি দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য দায়ী হন বা এরকম চেষ্টা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয় - তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে সেসময় জানানো হয়, বর্তমান এবং সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার-সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচারবিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যরাও এর আওতায় পড়বেন।

আরও পড়ুন:ভিসা নীতিতে গণমাধ্যমও যুক্ত হবে : পিটার হাস

যে সব কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বানচালের আওতায় পড়বে সেগুলোও মার্কিন বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে আছে – ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার প্রয়োগ করা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করার জন্য সহিংসতাকে কাজে লাগানো, এবং এমন কোন পদক্ষেপ – যার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা সংবাদমাধ্যমকে তাদের মত প্রচার থেকে বিরত রাখা।

গত ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: কানাডা প্রবাসী ভারতীয়দের ‘সতর্ক’ থাকার আহ্বান দিল্লির

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সেসময় এক বিবৃতিতে জানান, ‘স্টেট ডিপার্টমেন্ট আজ গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছেন।’

সর্বশেষ বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে নতুন ভিসা বিধিনিষেধে সাংবাদিক তথা মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেন। এই বিষয়টি নিয়ে অনেকের মধ্যেই ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।

এই পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করলে প্রয়োজন অনুসারে যেকোনও বাংলাদেশির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানাল যুক্তরাষ্ট্র।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top