রবিবার, ২৩শে মার্চ ২০২৫, ৯ই চৈত্র ১৪৩১


দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

ভারতীয় প্রবাসীরা কেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মেনে নিতে পারছেন না?


প্রকাশিত:
২২ মার্চ ২০২৫ ১৬:৪৪

আপডেট:
২৩ মার্চ ২০২৫ ১১:৪২

ছবি সংগৃহীত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত ১৭ মার্চ জনপ্রিয় পডকাস্টার লেক্স ফ্রিডম্যানের সঙ্গে তিন ঘণ্টার এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে অংশ নেন। এই সাক্ষাৎকারে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি উষ্ণ মনোভাব প্রকাশ করেন এবং তাদের মধ্যকার ‘দৃঢ় বন্ধন’-এর কথা উল্লেখ করেন। এর পরপরই মোদী ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ যোগ দেন এবং সেখানে লেখেন, ‘ধন্যবাদ, আমার বন্ধু’।

এটি যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত বলে মনে করা হচ্ছে। দুই দশক ধরে এই দুই দেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড হিন্দু ধর্মাবলম্বী, আর সেকেন্ড লেডি উষা ভ্যান্স ভারতীয় বংশোদ্ভূত। পাশাপাশি, দুই দেশের দুই শাসকের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও দৃশ্যমান।

তবে, আশ্চর্যের বিষয় হলো—এই উষ্ণ সম্পর্কের পরও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ভারতীয় প্রবাসীদের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা খুব একটা বাড়েনি।

ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা ট্রাম্পের প্রতি আগ্রহী নন কেন?

জর্জিয়া ও পেনসিলভানিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সুইং-স্টেটগুলোতে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। তারা স্থানীয়, রাজ্য এবং জাতীয় নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারে। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানরা কিছু সংখ্যালঘু ভোটারের সমর্থন পেলেও ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতি ৫২ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূতের খুব বেশি আগ্রহ দেখা যায়নি।

২০২৩ সালে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের মধ্যে যারা ডেমোক্র্যাট হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন, তাদের হার ২০২০ সালে ৫৬ শতাংশ থাকলেও ২০২৩ সালে কমে ৪৭ শতাংশে নেমেছে।

তবে এর অর্থ এই নয় যে, তারা বেশি রক্ষণশীল হয়ে উঠেছে। বরং রিপাবলিকানদের প্রতি সমর্থনের হার স্থির থেকে গেছে এবং ডেমোক্র্যাটদের থেকে সরে গিয়ে অনেকেই স্বতন্ত্র ভোটার হিসেবে নিজেদের পরিচিত করছেন।

ভারতীয়দের মন জেতার চেষ্টা ট্রাম্পের

ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের আকৃষ্ট করার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। গত বছর দীপাবলি উৎসবের এক বার্তায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি হিন্দুদের ‘বামপন্থিদের ধর্মবিরোধী এজেন্ডা’ থেকে রক্ষা করবেন। ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের শীর্ষ পদেও নিয়োগ দিয়েছে—এর মধ্যে কাশ প্যাটেলকে এফবিআই পরিচালক, কুশ দেশাইকে ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি এবং হরমিত ঢিলনকে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল (নাগরিক অধিকার বিষয়ক বিভাগ) করা হয়েছে।

তবুও ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের দূরত্ব কেন?

ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের বড় একটি অংশ এমন বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহী, যেগুলো ট্রাম্পের এজেন্ডার সঙ্গে মেলে না। যেমন- ৮২ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটার কঠোর বন্দুক আইন চান, আবার ৭৭ শতাংশ ভোটার জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মনে করেন।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শেষে মাত্র ৩৩ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত তার ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পরিচালনার বিষয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। অন্যদিকে, কার্নেগির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা বাইডেনের রেকর্ডকে ট্রাম্পের চেয়ে ভালো মনে করেন।

ভবিষ্যতে কি পরিবর্তন আসবে?

ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের মধ্যে রিপাবলিকানদের প্রতি সমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা চলমান থাকলেও, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে মতবিরোধ থাকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে তাদের বড় একটি অংশকে নিজের দিকে টানা এখনো কঠিন বলে মনে হচ্ছে। তবে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি সমর্থনও কিছুটা কমেছে, যা ভবিষ্যতের নির্বাচনে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top