শনিবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৫, ৬ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


৪৭ বছরের আইনি লড়াই : ৪ কোটি টাকা পাচ্ছেন জিল হোসেনের পরিবার


প্রকাশিত:
৮ মার্চ ২০২৩ ০৫:০২

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৪৮

ফাইল ছবি

সিরাজগঞ্জ সদরের চিলগাছা গ্রামের প্রয়াত জিল হোসেনকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। জিল হোসেনের উত্তরাধিকারীদের এই অর্থ দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ২০০৮ সালের নিম্ন আদালতের রায়ের দিন থেকে ওই অর্থের বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মঙ্গলবার নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের করা আপিল খারিজ করে বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন- ব্যারিস্টার তানিয়া আমির ও মিয়া মো. ইশতিয়াক। আর প্রয়াত জিল হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট চঞ্চল কুমার বিশ্বাস।

জিল হোসেনের পক্ষে হাইকোর্টে মামলা পরিচালনার জন্য ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি চঞ্চল কুমার বিশ্বাসকে নিয়োগ দেন।

আইনজীবী জানিয়েছেন, আদালতের আদেশে সবমিলিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকা পাচ্ছেন জিল হোসেনের পরিবার। ৪৭ বছরের আইনি লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় এই ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে পরিবারটি।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, জিল হোসেনের জন্ম ১৯৫০ সালের ৭ জানুয়ারি। ১৯৭৩ সালে ২৩ বছর বয়সে তিনি স্নাতক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। স্নাতক পাসের পর তার বন্ধু-সহপাঠীরা যখন একে একে চাকরিতে ঢুকেছেন, তখন তাকে আইনি লড়াইয়ে যেতে হয়েছে সেই সনদ পেতে। আদালতের রায়ের পর ৪৭ বছর বয়সে তার হাতে পরীক্ষা পাসের সনদ আসে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ওই ঘটনার পর তিনি আর কোনো চাকরিতে ঢোকার সুযোগ পাননি। সিরাজগঞ্জ সদরের চিলগাছা গ্রামে পরিবার নিয়ে থাকতেন জিল হোসেন। ছোটখাটো ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। তার চার ছেলে ও চার মেয়ে। গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি জিল হোসেন মারা যান।

রায়ের পর আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস বলেন, হাইকোর্টের রায় ১৪ বছর ৯ মাস পরে কার্যকর করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কাজে তার জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে বলে ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই কোটি টাকা দাবি করে মামলা করা হয়। এ মামলায় বিচারিক আদালত ২০০৮ সালে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রায় দেন। ওই দিন থেকে ওই অর্থের বিপরীতে আরও ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিতে হবে। মোট টাকা থেকে ইতোমধ্যে আদালতে জমা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ লাখ টাকা বাদ যাবে। হিসাবমতে, এখন প্রায় ৪ কোটি টাকা পাবেন জিল হোসেনের পরিবার। মৃত জিল হোসেনের স্ত্রী ও আট সন্তান ওই অর্থ পাবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিয়া মো. ইশতিয়াক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

৪৭ বছরের আইনি লড়াই

১৯৭১-৭২ শিক্ষাবর্ষে জিল হোসেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি (অ্যাগ্রি) স্নাতক দ্বিতীয় পর্বের চতুর্থ বর্ষের পুরোনো পাঠ্যক্রমের চূড়ান্ত পরীক্ষার্থী ছিলেন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফলে জিল হোসেনকে অকৃতকার্য ঘোষণা করে। এ ফলাফল পুনর্বিবেচনা চেয়ে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে আবেদন করে বিফল হন তিনি। পরে ১৯৭৫ সালে তিনি আবার পরীক্ষায় অংশ নেন, কিন্তু তাকে বহিষ্কার করা হয়। এসবের প্রতিকার চেয়ে ১৯৭৫ সালের ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহের প্রথম মুনসেফ আদালতে তিনি মামলা করেন।

মামলায় তিনি দাবি করেছিলেন, তার প্রাপ্ত নম্বরের (১৯৭৩ সালে দেওয়া পরীক্ষায়) সঙ্গে ভগ্নাংশ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নম্বরের সঙ্গে ভগ্নাংশ যোগ না করে তাকে অকৃতকার্য ঘোষণা করে। এ মামলায় আদালত ১৯৭৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে ভগ্নাংশ নম্বর যোগ না করে তাকে অকৃতকার্য করাকেও বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে জজ আদালতে আপিল করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৬ সালের ৩১ জানুয়ারি এই আদালতের দেওয়া রায়ে জিল হোসেনকে বহিষ্কার আদেশ বেআইনি ঘোষণা করা হয়। একই বছর হাইকোর্টে আপিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

হাইকোর্ট ১৯৭৬ সালের ২৪ আগস্ট মামলাটি পুনর্বিচারের জন্য প্রথম মুনসেফ আদালতে পাঠান। এরপর ১৯৭৮ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রথম মুনসেফ আদালত ভগ্নাংশ নম্বর যোগ করে ৩০ দিনের মধ্যে জিল হোসেনের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবার জেলা জজ আদালতে আপিল করে, যা নামঞ্জুর হয়।

হাইকোর্টে আপিল করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর ওপর ১৯৮৩ সালের ১৬ জানুয়ারি রায় দেওয়া হয়। এ রায়ে বিচারিক আদালতের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। হাইকোর্টের রায়ের পর ১৯৮৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জিল হোসেনের একটি আবেদন গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে তাকে পাস নম্বর দিয়ে ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর নম্বরপত্রের সনদ দেয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তখন তার বয়স ৪৭ বছর, অর্থাৎ সরকারি চাকরির বয়সসীমা শেষ। এরপর ২০০০ সালের ১৮ অক্টোবর ক্ষতিপূরণ দাবি করে অধস্তন আদালতে মামলা করেন জিল হোসেন। এতে দাবি করা হয়, হাইকোর্টের রায় ১৪ বছর ৯ মাস পরে কার্যকর করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top