রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪শে ভাদ্র ১৪৩১

https://rupalibank.com.bd/


রাসেলস ভাইপারে মৃত্যুরোধে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম সরবরাহ চেয়ে নোটিশ


প্রকাশিত:
২৫ জুন ২০২৪ ১৪:১৪

আপডেট:
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৩২

ফাইল ছবি

রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনায় দেশের প্রতিটি হাসপাতাল-ক্লিনিক-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অ্যান্টিভেনমের পর্যাপ্ত সরবরাহ, দক্ষ চিকিৎসক ও দেশের অভ্যন্তরে পরিবেশ উপযোগী এজাতীয় ভ্যাকসিন উৎপাদনের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. বাহাউদ্দিন আল ইমরান জনস্বার্থে এ নোটিশ পাঠান।

নোটিশে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের বেশ কিছু জেলায় রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কারণে বিষয়টি নিয়ে দেশবাসী উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। অনেকে প্রচার করছেন যে সাপটি কামড় দিলে দ্রুত মানুষের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, রাসেলস ভাইপার সাপ মেরে ফেরার প্রচারণাও চালাচ্ছেন অনেকে। রাসেলস ভাইপার খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে। ফলে সহসা বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এই সাপের আধিক্য মানুষের জন্য হুমকি তৈরি করবে বলে ব্যাপক প্রচারণা রয়েছে। ফলে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত ব্যাপক হারে প্রচারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর বা বিষ নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন উপাদানকে অ্যান্টিভেনম বলা হয়। সাপের কামড় বা দংশনের পরে দ্রুত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিলে, অ্যান্টিভেনমের অ্যান্টিবডিগুলো বিষকে নিষ্ক্রিয় করে। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁচে যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কয়েকটি জেলায় রাসেলস ভাইপারের কামড়ে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার কাছেই মানিকগঞ্জের কিছু এলাকায় গত তিন মাসে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে অন্তত পাঁচজন মারা গেছেন বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এরপর ভোলাসহ আরও কয়েকটি জেলায় এ ধরনের সাপ ধরে ফেলার সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। ফলে কৃষকেরা মাঠে ফসল উৎপাদন-আহরনের ক্ষেত্রে আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, দেশব্যাপী পরিচালিত অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনসিডিসি) সাপে কামড়ানোদের ওপর জরিপ চালিয়েছে। ২০২৩ সালে তাদের প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, দেশে প্রতিবছর ৪ লাখ ৩ হাজার ৩১৭ জন মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয় এবং এতে ৭ হাজার ৫১১ জন মানুষ মারা যায়। মানুষ ছাড়া প্রাণীরাও সাপের কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। প্রতি বছর প্রায় ১৯ হাজার গৃহপালিত পশু সর্পদংশনে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে আড়াই হাজার গৃহপালিত পশু মারা যায়। ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর অনেকে বিষধর সাপের কামড় খেয়ে মারা যান শুধু সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়া, বিশেষ করে হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম না থাকার কারণে। কারণ, বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে কোনও অ্যান্টিভেনম তৈরি হয় না। দেশে সাপের কামড়ের চিকিৎসায় এখন যেসব অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা হয় তা ভারত থেকে আসে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে, সাপের কামড়ের রোগীর চিকিৎসার জন্য স্থানীয় সাপ থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরি হলে তা সবচেয়ে কার্যকর হয়। অন্য দেশের অ্যান্টিভেনম এই দেশে শতভাগ কার্যকর নাও হতে পারে। কারণ, একেক দেশের সাপের প্রকৃতি একেক রকম। ভারতে যেসব সাপ থেকে বিষ সংগ্রহ করা হয়, সেগুলোর পুরোপুরি বাংলাদেশের সাপের সঙ্গে মেলে না। অথচ বছরের পর বছর ধরে ভারতের অ্যান্টিভেনম দিয়েই বাংলাদেশের সাপের কামড়ের রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা অ্যান্টিভেনমকে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বললেও বাংলাদেশ এখনও নিজেদের সাপের বিষের অ্যান্টিভেনম বানাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

দেশের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন নেই বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। গত ২৩ জুন দৈনিক ভোরের কাগজে রাজশাহীজুড়ে ‘রাসেলস ভাইপার’ আতঙ্ক, নেই পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যা রাজশাহীসহ সারা দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য বড় আতঙ্কের বিষয় হয়ে উঠেছে।

তাই ওই নোটিশপ্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে সারা দেশের হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম ভ্যাকসিন সংরক্ষণ, ভ্যাকসিন প্রদানকারী চিকিৎসকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে উন্নত প্রশিক্ষণ, দেশের অভ্যন্তরে পরিবেশ উপযোগী সাপের বিষের প্রতিরোধক ভ্যাকসিন উৎপাদনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে জানানো হয়েছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top