মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১লা আশ্বিন ১৪৩১


গরমে শিশুকে যা খাওয়াবেন


প্রকাশিত:
১০ আগস্ট ২০২০ ১৮:৩০

আপডেট:
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৫৫

ছবি: সংগৃহীত

ভ্যাপসা গরমে বড়রাই হাঁসফাঁস করেন, কোনো কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। ছোটদের অবস্থা তো আরও খারাপ। কোনো কিছুই যেন পেটে সয় না। তাই এ সময়ে নিতে হবে সোনামনির বিশেষ যত্ন। সবচেয়ে বেশি যত্নবান হতে হবে খাবারের প্রতি। তা না হলে অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকবে।

এখন যে গরম চলছে তাতে শিশুর যে কোনো খাবারে অরুচি আসতেই পারে। তার উপর অসুখ তো আছেই। তাই এই সময় শিশুকে কী খাওয়ানো উচিত তা নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে শিশু বিশেষজ্ঞা ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, শীতকালে শিশুর রুচি নিয়ে তেমন সমস্যা না হলেও, গরমের সময়ে কিছুটা বিপত্তি তো হয়ই। খুব গরমে সাধারণত শিশু কিছুই খেতে চায় না। এতে শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়, মা-বাবাও দুশ্চিন্তায় পড়েন। এই সময়ে শিশুর খাদ্যতালিকায় হালকা, পুষ্টিকর, টাটকা এবং সহজপ্রাপ্য খাবার রাখতে হবে। সেটা হতে পারে নরম খিচুড়ি বা সবজির স্যুপ। তবে মাছ-মাংসও থাকতে পারে পরিমিতভাবে।

সহজে হজমযোগ্য খাবার
শিশুরা প্রচুর ছোটাছুটি ও দৌঁড়ঝাপ করে। অতিরিক্ত শারীরিক শ্রমের পর যেকোনো ভারী খাবার শিশুদের হজমে ব্যাঘাত ঘটায়। এমনকি বমি বমি ভাবের সৃষ্টি করে। তাই অতিরিক্ত তেলের খাবার,ভাজা পোড়া খাবার শিশুদের দেয়া যাবে না। গ্রীষ্মে শিশুদের চিপস, বাদাম, পাপড়, চানাচুর, চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি খাওয়ানো যাবে না। সহজে হজমযোগ্য নরম, সুস্বাদু খাবার শিশুকে দিতে হবে। পুডিং, নুডলস, নরম ভাত, মাছ, মুরগির মাংস, নরম সুজি, ঘরে তৈরি ফলের জুস ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে।

দুধের বিকল্প কিছু দিন
দুধ শিশুদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি খাবার যা ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের বড় উৎস। কিন্তু গ্রীষ্মে শিশুকে জোর করে দুধ খাওয়ালে অনেক শিশুই তা হজম করতে পারে না বা অস্বস্তিবোধ করে। যদি শিশুরা গরমে দুধ খেতে না চায় তবে জোর না করে তাকে লাচ্যি, মাঠা, মিল্ক সেক ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে।

ঘরে তৈরি খাবার
শিশুর খাবার ঘরেই তৈরি করা ভালো। বাইরের কেনা খাবার স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এ সময় ডায়রিয়ার প্রকোপ হতে পারে। ঘরে তৈরি টাটকা খাবার শিশুকে এ ধরনের ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা করবে।

টাটকা খাবার
শিশুকে খুব বেশিক্ষণ আগে থেকে বানিয়ে রাখা দুধ খাওয়ানো উচিত না। এতে পুষ্টিগুণ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। খিচুরিসহ অন্যান্য খাবার তৈরিতেও এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বেশি আগে বানিয়ে রাখা খাবার শিশুর জন্য ভালো নয়। বাইরে যাওয়ার সময় শিশুর খাবার তৈরি করে নিয়ে যাওয়া ভালো। সেক্ষেত্রে খাবার এবং পানি বহন করার জন্য ভালো মানের ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করতে হবে, যাতে খাবারের মান অক্ষুন্ন থাকে।

বিশুদ্ধ পানি
নজর দিতে হবে শিশু যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করছে কিনা। পানি যেন অবশ্যই বিশুদ্ধ হয় তা লক্ষ রাখতে হবে। খুব ঠান্ডা বা গরম পানি দুটোই শিশুর জন্য ক্ষতিকর। এ সময় পানিতে নানা রোগ-জীবাণু থাকে। ফলে পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে, সম্ভব হলে ফিল্টার করে পান করানো উচিত। শিশুকে সরাসরি ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খাওয়ানো ঠিক নয়। ওরা খেতে চাইলে বুঝিয়ে বলতে হবে। তবে ঠান্ডা পানির সঙ্গে স্বাভাবিক পানি মিলিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।

বেশি করে তরল খাবার
শিশুকে বেশি বেশি করে তরল খাবার খাওয়াতে হবে। এমনকি শিশু তৃষ্ণার্ত না হলেও তাকে বারবার পানি, শরবত কিংবা ডাবের জল খেতে দেয়া প্রয়োজন। বেশি লাফঝাঁপ বা খেলাধুলা করলে গরমের দিনে একটি সাত-আট বছরের শিশুকে ঘণ্টায় ছয় আউন্স পানি বা শরবত খেতে দিতে হবে। এর চেয়ে বড় শিশুদের আরো বেশি করে পানি বা তরল খাবার দিতে হবে। সব সময় একটি পানির বোতল ভরে শিশুর নাগালের মধ্যে রাখলে ভালো হয়। এতে তৃষ্ণা পেলেই সে সেখান থেকে পানি নিয়ে খেতে পারবে।

মৌসুমী ফল ও জুস
শিশুকে মৌসুমি ফল বেশি খাওয়াতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ফলের রসও দেয়া যেতে পারে, তবে তা বাসায় তৈরি করা হতে হবে। বাজারের প্যাকেটজাত ফলের রস শিশুর দাঁতের ক্ষতি করে। এ ছাড়া এগুলো সংরক্ষণের জন্য যেসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় তা শিশুস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই বাইরের খাবার, কোমল পানীয় এমনকি ফলের রস ইত্যাদি থেকে শিশুকে দূরে রাখাই ভালো।

সঠিক সময় খাওয়ান
এই সময় সঠিক পুষ্টির এবং ক্যালোরির চাহিদা বজায় রাখার লক্ষ্যে সঠিক সময় মেনে খেতে হবে। শিশুকে সকাল ৮ থেকে ৯টার মধ্যে নাস্তা খেতে দিতে হবে। দুপুর ১টা থেকে দেড়টার ভেতর দুপুরের খাবার খেতে হবে। সন্ধ্যা ৭ থেকে সাড়ে ৭টার ভেতর রাতের খাবারের রুটিন করতে হবে। মধ্যকাল, বিকেল ও শোবার আগে হালকা খাবার বিশেষ করে তরল খাবার শিশুকে দিতে হবে।

যে খাবার বেশি দিতে পারেন
স্কুল ছুটির পর ডাবের পানি, লেবুর সরবত, কাঁচা আমের জুস ইত্যাদি দেয়া গেলে ভালো। এছাড়া আইসক্রিমের সঙ্গে ফল, ব্যানানা ও ইয়োগার্ট সুদি, দই বা ঘোল, পপকর্ন, চিড়া, দই, ফুড কাস্টার্ড, পেন কেক ইত্যাদি এই সময়ে দেয়া ভালো।

বয়স ছয় মাস বা কম হলে
শিশুর বয়স যদি ছয় মাসের কম হয় তাহলে তাকে শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। মনে রাখবেন, ছয় মাসের কম বয়সের শিশুকে এ সময় আর কোনো খাবার দেয়ার দরকার নেই, এমনকি পানিও না। শিশুকে বারবার বুকের দুধ দিতে হবে। এর মাধ্যমে শিশু তার সব দরকারি পুষ্টি পেয়ে যাবে।


সম্পর্কিত বিষয়:

গরম

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top