রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪শে ভাদ্র ১৪৩১

https://rupalibank.com.bd/


করোনায় মৃত্যু জাপানি ফ্যাশন ডিজাইনার কেনজোর


প্রকাশিত:
৬ অক্টোবর ২০২০ ০৩:৪২

আপডেট:
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:১৬

জাপানি ফ্যাশন ডিজাইনার কেনজো তাকাদা, ছবি-সংগৃহীত

প্যারিস ফ্যাশন উইক চলছে। অথচ এরই মধ্যে প্যারিসে আকাশ ভেঙে পড়ল। ৫৬ বছর পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্যারিসের মায়া কাটাতে বাধ্য হলেন বিশ্বনন্দিত জাপানি ফ্যাশন ডিজাইনার কেনজো তাকাদা। দুই সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ অক্টোবর পশ্চিম প্যারিসের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় ৮১ বছর বয়স্ক কেনজোর।

সেই সত্তর দশকে প্যারিসে ছকে বাঁধা ফ্যাশনকে নড়িয়ে দিয়েছিলেন এক জাপানি তরুণ। এরপর বিশ্ব কেবল বিমুগ্ধ থেকেছে তাঁর সৃষ্টির সৌন্দর্যে। তিনিই বিশ্বমাতানো প্রথম কোনো জাপানি ডিজাইনার। তাঁর কারণে পরবর্তী সময়ে ইয়োজি ইয়ামামোতো কিংবা রেই কাওয়াকুবোর মতো ডিজাইনারদের বিশ্বমঞ্চে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার কাজটা সহজ হয়ে যায়।

কেবল পোশাক নয়, সময় ধারায় তিনি সুগন্ধি আর প্রসাধনীও যোগ করেন তাঁর স্বনামের ব্র্যান্ড কেনজোয়। পরে এই ব্র্যান্ড তিনি বিক্রি করে দেন এলভিএমএইচকে।

ওসাকার কাছে হিমেজিতে কেনজোর জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। তাঁর বাবার ছিল হোটেলের ব্যবসা। তবে ফ্যাশনের প্রতি তাঁর অনুরাগ ছেলেবেলা থেকেই। বোনদের সেলাইয়ের ম্যাগাজিন তাঁকে আকৃষ্ট করত। ১৯৫৮ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি জাপানের বিখ্যাত বুনকা ফ্যাশন কলেজে ভর্তি হন। আর ওই কলেজে তিনিই ছিলেন প্রথম পুরুষ ছাত্র।

পাস করার পর তিনি একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোরের জন্য মেয়েদের পোশাক ডিজাইন করা শুরু করেন। তরুণ কেনজো তখন প্রাণিত হন ফরাসি ফ্যাশন ডিজাইনার ইভস সাঁ লোরের সৃষ্টিকর্মে। এর নেপথ্যে ছিলেন প্যারিস থেকে পড়ে আসা তাঁর এক শিক্ষক।

১৯৬৪ সালে শুরু হয় তাঁর অন্য রকম জীবন। টোকিও অলিম্পিকের জন্য চলছে টোকিওকে ঢেলে সাজানোর কাজ। তিনি যে বাড়িটিতে থাকতেন, সেটাও নিয়ে নেওয়া হয় ১০ মাসের জন্য। পরিবর্তে যে অর্থ তাঁকে দেওয়া হয়, তা নিয়েই তিনি বেরিয়ে পড়েন প্যারিসের উদ্দেশে।

সে যাত্রাও কম চমকপ্রদ নয়। কারণ, নৌকা করেই তিনি রওনা হয়েছিলেন। সিঙ্গাপুর, হংকং, ভিয়েতনাম, ভারত, স্পেন হয়ে কেনজো পৌঁছান ফ্রান্সের বন্দর শহর মার্সেইতে। সেখান থেকে আসেন প্যারিসে। অথচ সেখানে কেউ পরিচিত ছিল না। সঙ্গে তেমন অর্থকড়িও ছিল না। তিনি সামান্য ফারসি বলতে পারতেন মাত্র। এমনকি প্রথম দর্শনে তিনি পারির প্রেমেও পড়েননি। তবে নতর দেম গির্জা তাঁকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। পরিকল্পনা ছিল মাস ছয়েক থেকে ফিরে যাওয়া। কিন্তু হেভিয়ের ডি কাস্তেলার সঙ্গে পরিচয় তাঁর প্যারিস না ছাড়ার অনুঘটক হয়।

২০১৬ সালে এই প্রসঙ্গে কেনজো বলেছিলেন, ‘১৯৬৪ সালে আমি জাপান ছেড়ে আসি। মাত্র মাস ছয়েক থাকার পরিকল্পনা নিয়ে। আজ আমি সত্যিই খুশি ৫০ বছর পেরিয়েও প্যারিসে আমার অবস্থান এখনো শেষ না হওয়ায়।’ এমনকি ১৯৯০ সালে হেভিয়ার মারা গেলেও তিনি প্যারিস ছেড়ে যাননি।

গ্যালারি ভিভিয়েনের ছোট একটি বুটিকের জন্য সস্তা কাপড় দিয়ে প্রথম কালেকশন তৈরি করে প্যারিসের ফ্যাশন জগতে অভিষেক হয় কেনজোর। এরপর প্লেস দেস ভিক্তোরিসে খোলেন নিজের প্রথম ডিজাইন হাউস। ১৯৭০ সালে। নিজেই করেন অভ্যন্তরীণ সজ্জা। দেয়ালে পেইন্ট করেন ফ্লোরাল মোটিফ। এই বুটিকেই অনুষ্ঠিত হয় নিজের প্রথম কালেকশন ফ্লোরাল জ্যাপের ফ্যাশন শো। ১৯৭১ সালে সাময়িকপত্র এল-এর প্রচ্ছদে মুদ্রিত একটি লুক সৃজন জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় কেনজোর। তবে নিজের বুটিক খোলার আগে তাঁর সিদ্ধান্ত ছিল ফরাসি ডিজাইনাররা যা করেন, সেটা তাঁর দ্বারা হবে না। বরং তিনি নিজের মতো করেই কাজ করায় মনস্থির করেন

ছেলেদের জন্য প্রথম রেডি-টু-ওয়্যার কালেকশন করেন ১৯৮৩ সালে। সুগন্ধি বাজারে আনেন ১৯৮৮ সালে। আর তাঁর ব্র্যান্ড বিক্রি করে দেন ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৯ সালে ফ্যাশন থেকে অবসর নিয়ে আরও সৃষ্টিশীল কাজে মনোযোগ দেন।

১৯৬৪ সালের অলিম্পিকের জন্য তিনি টোকিও ছেড়েছিলেন। অথচ ৪০ বছর পর ২০০৪ সালের অলিম্পিকে জাপান দলের জার্সি ডিজাইন করেন দেন সেই কেনজো। আর এ বছরের গোড়ায় তিনি লঞ্চ করেন ইন্টেরিয়র ব্র্যান্ড কেথ্রি।

‘ফ্যাশন আমার কাছে খাবারের মতো। একই পদ রোজ যেমন খেতে ভালো লাগে না, ফ্যাশনও তেমনি’, এই ভাষ্য তাঁর। এমনকি তাঁর দর্শনে: ফ্যাশন মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য নয়, বরং সবার জন্যই। ১৯৭২ সালে সে কথাই বলেছেন নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।

২০১৬ সালে তাঁকে লিজিয়ন অব অনারে ভূষিত করা হয়। আমৃত্যু তিনি ছিলেন এশিয়ান কতুর ফেডারেশনের সম্মানীয় প্রেসিডেন্ট। ‘প্যারিস আজ কাঁদছে তার এক সন্তানের জন্য’, লিখেছেন প্যারিসের মেয়র অ্যানা হিদালগো।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, এএফপি


সম্পর্কিত বিষয়:

ফ্যাশন পোশাক স্মরণ

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top