বিদেশ যাওয়া কর্মীর মোট সংখ্যা কমলেও আগ্রহ বেড়েছে নারীদের
প্রকাশিত:
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:৪৯
আপডেট:
১৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:৩১

২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী অভিবাসী কর্মীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে বিদেশ গমনেচ্ছু নারী কর্মীদের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি) নিবন্ধনের সংখ্যা বেড়েছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ডিজিটাল অভিবাসন প্ল্যাটফর্ম আমি প্রবাসীর বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২৪-এ এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ১০ লাখ ৯১ হাজার ৪৬ জন বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে গেছেন। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৯০ হাজার ৮১১ জন। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে বিদেশে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা কমেছে ২৭.৪ শতাংশ।
তবে এই নিম্নগামী ধারার মধ্যেও একটি ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর বিএমইটি নিবন্ধনে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ২০২৩ সালে মোট বিএমইটি নিবন্ধনে নারী অভিবাসীদের নিবন্ধনের হার ছিল ২.৭৮ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৭৯ শতাংশে।
২০২৪ সালে বিএমইটি নিবন্ধনের মোট সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৯৮ হাজার ২৭৬, যা ছাপিয়ে গেছে ২০২৩ সালের ৬ লাখ ৬০ হাজার ৮৮টি নিবন্ধনকে। যদিও বাংলাদেশি পুরুষরা এখনও বৈদেশিক শ্রমবাজারে আধিপত্য বজায় রেখেছেন। তবে নারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে নারীদের পেশা নির্বাচনে পরিবর্তনের দিকটিও। আগের মতো শুধু গৃহকর্মী পেশার জন্য নয় বরং এখন নারীরা ধীরে ধীরে প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট পেশার দিকেও ঝুঁকছেন।
কম্পিউটার অপারেশন, গ্রাফিক ডিজাইন ও অটোক্যাড ড্রাফটিংয়ের মতো প্রশিক্ষণ কোর্সে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। গত বছর ৭০০’র বেশি নারী ‘দক্ষ কর্মী’ হিসেবে বিদেশে গেছেন যা উচ্চ বেতনের চাকরির জন্য নারীদের যোগ্য হয়ে ওঠার ইঙ্গিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের মতো ২০২৪ সালেও বাংলাদেশি অভিবাসীদের শীর্ষ গন্তব্য ছিল সৌদি আরব। মোট অভিবাসনের ৬২.১৭% (প্রায় ৬ লাখ ২৭ হাজার কর্মী) সৌদি আরবে গেছেন। যেখানে অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা অব্যাহত ছিল।
অন্যদিকে যথারীতি বাংলাদেশি কর্মীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য মালয়েশিয়ায় অভিবাসন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৪ সালে মাত্র ৯৩ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া গেছেন। দেশটির নতুন শ্রমনীতির মূল কারণ। গত বছরের প্রথমার্ধে মালয়শিয়াতে অভিবাসন স্বাভাবিক গতিতে চললেও ২০২৪ এর মে মাসের পর থেকে দেশটিতে অভিবাসনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমতে থাকে।
বিদেশে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিবাসন হ্রাস পাওয়ার পেছনে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নানা কারণও ভূমিকা রেখেছে। জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক
পটপরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিদেশগামী কর্মীদের কিছুটা অনিশ্চয়তায় ফেলেছে।
এছাড়া দক্ষ কর্মী তৈরির অন্যতম মাধ্যম, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহের বিভিন্ন কোর্সেও ভর্তির সংখ্যা কমেছে। ২০২৩ সালে যেখানে দেশব্যাপী বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ২৭০, সেখানে ২০২৪ সালে এই সংখ্যা নেমে এসেছে ১ লাখ ১২ হাজার ১৬৬। যার অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে কর্মী চাহিদা কমে আসা।
আমি প্রবাসীর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক ই. হক বলেন, নারীদের বিএমইটি নিবন্ধনের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রমাণ করে বাংলাদেশের নারীরা আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার গড়তে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন। এটি বৈশ্বিক শ্রমবাজারে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণে ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে। সঠিক প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করা হলে, আমরা বিদেশে আরও দক্ষ কর্মী পাঠাতে পারব।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: