সব নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু টেস্ট করাচ্ছে ডিএনসিসি
প্রকাশিত:
২২ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:২৬
আপডেট:
২২ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৪৭

সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতালে ডেডিকেটেড ডেঙ্গু ইউনিট করার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ( ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, ডিএনসিসির সব নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং মাতৃসদন কেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশান-২ নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে সম্ভাব্য ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণ এবং মশা বাহিত ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ডিএনসিসির আওতাধীন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকের প্রতিনিধি এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, এ বছর আমাদের গরমের আগেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। বৃষ্টির ফলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার হুমকি রয়েছে। তাই বৃষ্টির পরের পরিস্থিতি এই শহরে আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করার চেষ্টা করব। আসলে এডিস মশার লার্ভা বাসা-বাড়িতে জন্মায়। আমাদের কর্মীরা নিরাপত্তার জন্য বাসা-বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে। নিজেদের বাসা-বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে। স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে আগামী সপ্তাহে সচেতনতা ক্যাম্পেইন শুরু করব। এক সপ্তাহ ক্যাম্পেইনের পরে লার্ভা পেলে জরিমানা করা হবে।
মশক নিধনে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব দক্ষ টিম তৈরি করার বিষয়ে এক সাংবাদিক জানতে চাইলে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের পরিবর্তন হয় কিন্তু মাঠ পর্যায়ের তেমন কোনো কর্মী পরিবর্তন হয় না। আমরা প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করে থাকি। তবে থার্ড পার্টিরা মূলত ব্যবসা করার জন্য আসে। অতীতে সিটি কর্পোরেশনে কাজ করতে এসেছে তারা বড় ধরনের সিন্ডিকেট করেই কাজ করতে এসেছিল। এসব বন্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে আমরা মশক নিধন কার্যক্রমে যুক্ত করার বিষয়ে পরিকল্পনা নিয়েছি।
মোহাম্মদ এজাজ এসময় উদাহরণ টেনে বলেন, বিভিন্ন খাল পরিষ্কার ও মশক নিধনের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা যেসব আছেন তাদের জনপ্রতি বিল দেওয়া হয় ১৭-১৮ হাজার টাকা। কিন্তু এই কর্মীরা আসলে পান ৬-৮ হাজার টাকা। প্রায় ১০ হাজার টাকা নাই। এক হাজার লোকের ১০ হাজার টাকা নাই মানে কোটি টাকার বাণিজ্য। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সরাসরি বিল দেব। এর ফলে আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা ন্যায্য বিল পাবেন। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা ভবিষ্যতে কাজ করব। আমরা থার্ড পার্টি বা আউটসোর্সিং কোম্পানিগুলোকে তাদের কমিশন দিয়ে দেব কিন্তু তারা (কোম্পানিগুলো) মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের লিস্ট, মোবাইল নম্বর ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে দেবেন। সিটি কর্পোরেশন মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি জমা দিয়ে দেবে।
ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, আমরা আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কমিউনিটিকে বলছি, আপনাদের এলাকায় বা রোডে যে ব্যক্তি মশার ওষুধ ছিটাচ্ছেন ও সুপারভাইজার কর্মীদের মোবাইল নম্বর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা যদি সেখানে না যায়, ওষুধ না ছিটায় আমাদের জানাবেন। আপনাদের কাছ থেকে তাদের (কোম্পানিগুলোর) কাজের রিভিউ আমরা পাব। যদি কোনো কারণে মাঠ পর্যায়ে কোনো অনিয়ম পাই তাহলে কোম্পানিগুলোর অ্যাগ্রিমেন্ট বাতিল করে দেব।
সভায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রোগী এবং স্বজনরা অনেক বুঝতে পারে না তারা কি করবে। তাই প্রতিটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর জন্য ঠিকমতো কাউন্সিলিং প্রয়োজন। ডেঙ্গু রোগীর কাউন্সিলিংয়ের জন্য একটি রেডি টিম থাকলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এছাড়া ডেঙ্গু পরীক্ষাকে অনেক সহজ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার আহ্বান জানাচ্ছি। বেসরকারি হাসপাতালগুলো কিন্তু এই শহরেই পরিচালিত হচ্ছে, তাই আমি মনে করি শহরের মানুষের প্রতি তাদের দায়িত্ব আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. মো. ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ডেঙ্গু এখন আর শুধু শহরে নয়, সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রতিরোধ ও চিকিৎসা দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরোধের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা জরুরি। বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবনে সাধারণত এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। সর্বোপরি সচেতনতা খুব জরুরি। সবাইকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে গাইডলাইন অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাসার বলেন, ডেঙ্গু রোগে পৃথিবীর কোনো দেশে এতো মানুষের মৃত্যু হয় না। তাই আমাদের দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে কেন এতো মৃত্যু হয় এটি নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালে কার্যকরী গাইডলাইন ফলো করে সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদেরকে উন্মুক্ত অবস্থায় না রেখে আলাদা রাখতে হবে। তাদের সার্বক্ষণিক মশারির ভেতরে রাখতে হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী প্রমুখ।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: