1342

04/10/2025 করোনা রোগীর শ্বাসকষ্টের কারণ ও তার প্রতিকার

করোনা রোগীর শ্বাসকষ্টের কারণ ও তার প্রতিকার

ডা. গোলাম মোর্শেদ

২৮ আগস্ট ২০২০ ১৭:৪০

বেশ কয়েকটি কারণে করোনা রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। মূল কারণ হলো অক্সিজেন কমে গিয়ে শ্বাসকষ্ট হওয়া। তবে কারো যদি অক্সিজেন কমে গিয়ে শ্বাসকষ্ট হয় তবে ধরে নিতে হবে যে তিনি ক্রিটিকাল পর্যায়ে চলে যাচ্ছেন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। কারণ করোনা রোগীদের অক্সিজেন অনেক না কমলে শ্বাসকষ্ট হয় না।

শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়াকে বলে হাইপোক্সিয়া। হাইপোক্সিয়া হলে শ্বাসকষ্ট হয়। কিন্তু করোনা রোগীর হাইপোক্সিয়া হলেও শুরুতে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় না। এটাকে বলে সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া বা হেপি হাইপোক্সিয়া। এই হাইপোক্সিয়া কিন্তু মোটেই সুখের খবর নয়। এটা আসলে অশনিসংকেত। ভিতরে হাইপোক্সিয়া চলছে কিন্তু রোগী হেপি আছে তাই এটা হেপি হাইপোক্সিয়া। তবে এই পর্যায়ে অক্সিজেন স্বল্পতা নির্ণয় করে ফেলতে পারলে আসলেই রোগীকে হেপি করা সম্ভব। সাথে সাথে অক্সিজেন দিতে পারলে অধিকাংশ রোগী ভালো হয়ে যায়৷

অক্সিজেন কমে যাচ্ছে কিনা সেটা শুরুতেই বোঝার উপায় হলো হাঁটাচলা এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে গেলে তখন একটু আধটু শ্বাসকষ্ট হয় এবং বুকে চাপ চাপ লাগে। বসে থাকলে ভালো কিন্তু সামান্য হাটা চলায় খুব দুর্বল লাগে। সেই মুহূর্তে পালস অক্সিমিটার দিয়ে মেপে দেখতে হবে তার অক্সিজেন কত। যদি অক্সিজেন ৯৩ এর কম হয় তাহলে অক্সিজেন দিতে হবে। অথবা ৪০ কদম হাঁটা অবস্থায় বা ৬ মিনিট হাঁটার পর যদি দেখা যায় অক্সিজেন ৮৮ এর কম তাহলে অক্সিজেন দিতে হবে।

করোনা রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে শ্বাস নিয়ন্ত্রন ব্যায়াম বা ব্রেদিং কন্ট্রোল এক্সারসাইজ করবেন। চিৎ হয়ে মাথার নিচে কাধ পর্যন্ত ও হাটুর নিচে বালিশ দিয়ে শান্ত হয়ে শোবেন৷ এক হাত পেটের উপর আরেক হাত বুকের উপর রেখে শ্বাস প্রশ্বাস অনুভব করবেন। বুকের প্রসারন না করে শুধুমাত্র পেটের সামান্য প্রসারনের মাধ্যমে স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস চালানোর চেষ্টা করবেন।

অক্সিজেন কমে গেলে প্রোনিং পজিশনে থাকতে হবে। প্রোনিং পজিশনের মানে হলো উপুর হয়ে শুয়ে থাকা। এতে ফুসফুসে অক্সিজেনের পরিমান বাড়ে। তারপর ডান কাতে শুয়ে থাকবেন। তারপর বালিশে হেলান দিয়ে বসে থাকবেন। তারপর বাম কাতে শুয়ে থাকবেন। প্রতিটি পজিশনে ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘন্টা পর্যন্ত যতক্ষণ থাকা সম্ভব হয় থাকবেন। এতে অক্সিজেন বাড়বে এবং স্বাস কষ্ট কমবে।

রোগীর দূর্বলতা একটু কমলে, কিছুটা সবল হলে তখন শ্বাসের মেশিন দিয়ে ব্যায়াম করবেন। এই মেশিনটির নাম ইনসেনটিভ স্পাইরোমিটার। এই ব্যায়ামে শ্বাস প্রশ্বাসের পেশি শক্তিশালী হয়৷ চেয়ারে বা খাটের কিনারে পা ছেড়ে দিয়ে বসবেন। তারপর ইনসেনটিভ স্পাইরোমিটার মেশিনটি হাতে নিয়ে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস ছাড়বেন। মেশিনের মুখের অংশটি ঠোট দিয়ে শক্তভাবে ধরে রাখবেন। আস্তে আস্তে যতটা সম্ভব গভীরভাবে শ্বাস নিবেন এবং মেশিনের বলের উঠানামা লক্ষ করবেন। যতক্ষন সম্ভব শ্বাস ধরে রাখবেন। তবে অন্তত ৫ সেকেন্ড। এবার মুখ থেকে মেশিনের নলটি নামিয়ে ফেলবেন। তারপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়বেন। উপরের প্রক্রিয়াটি ১০ বার করবেন। এই ব্যায়মটিও দিনে ৫ বার করবেন।

করোনা রোগে রক্ত জমাট বেঁধে ফুসফুসের রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায়। সেটাকে পালমোনারি এম্বোলিজম বলে। পালমোনারি এম্বোলিজমে প্রচুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। করোনা রোগে হার্টঅ্যাটাক অথবা হার্ট ফেইলুর হতে পারে। এই হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেইলুর হলে সে কারণেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। করোনায় ফুসফুস আক্রান্ত হয়। ফুসফুসে নিউমোনিয়া হয়। ফুসফুসের বড় অংশ জুড়ে নিউমোনিয়া হলে তখনও অক্সিজেন স্বল্পতায় শ্বাসকষ্ট হতে পারে। করোনা যেহেতু একটি ইনফেকশন তাই এতে ফুসফুসের আবরণীতে ইনফ্লামেশন হয়ে সেখানে পানি জমে। এতেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আগে থেকে যাদের হার্ট ফেইলুর, এ্যাজমা, ব্রোঙকাইটিস আছে করোনা ইনফেকশনে সে সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। এগুলো বেড়ে গেলে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এগুলোর প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা কার্যকরী চিকিৎসা আছে। সমস্যা কোনটি সেটা নির্ণয় করে চিকিৎসা দিলে রোগীর শ্বাসকষ্ট কমে যাবে।

এমনকি দুশ্চিন্তার কারণেও কারও কারও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অনেকেই জানেন যে করোনা রোগীর শ্বাসকষ্ট একটি মারাত্মক জটিলতা। তাই সারাক্ষণই মাথার ভিতরে একটা চিন্তা থাকে যে আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায় কিনা এবং সেই দুশ্চিন্তা থেকেই দেখা যায় যে তিনি শ্বাসকষ্ট বা বুকে চাপ চাপ অনুভব করছেন। এটা একটা সাইকোলজিক্যাল সমস্যা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটাকে বলা হয় হাইপারভেন্টিলেশন সিন্ড্রম। এ রোগেরও চিকিৎসা দরকার আছে। চিকিৎসকের ব্যাবস্থাপত্র অনুযায়ী চললে দ্রুত আরোগ্য লাভ সম্ভব।

যেহেতু শ্বাসকষ্ট করোনা রোগীদের জন্য একটি এলার্মিং সমস্যা তাই যেকোনো কারণে শ্বাসকষ্ট হোক না কেন শ্বাসকষ্ট দেখা দিলেই সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]