এক পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নিজের ইচ্ছাশক্তি আর বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে বর্গা নেওয়া জমিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল সবজি খেত। সব খরচ শেষেও এখন বছরে তার লাভ হয় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। এভাবে সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে নিজের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন খাগড়াছড়ির শফিউল বাশার।
মাটিরাঙ্গা উপজেলার প্রান্তিক গোমতী ইউপির বান্দরছড়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। নিজ গ্রামে ১৯৯৬ সালে এক প্রতিবেশীর ঘরের আগুন নেভাতে গিয়ে বাম পায়ে বিষাক্ত কিছু লেগে সংক্রমণ দেখা দেয় তার বাম পায়ে। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে ২০০১ সালে তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়। তখন থেকেই ক্রাচের ওপর ভর করে চলছে তার জীবন।
পা কেটে ফেলে দেওয়ার পর বেকার জীবন কাটাচ্ছিলেন শফিউল। কোনো উপায় না পেয়ে নিজের বুদ্ধিতে বাড়ির পাশে অন্যর কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে সবজি চাষ শুরু করেন ২০০৩ সালে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২০ বছর একই জমিতে চাষ করে নিজের কিছু জমিও করেছেন তিনি। বর্তমানে তার জমিতে কাজ করে সংসার চালান অন্তত ১০ জন। এই জমি চাষ করে সব খরচ শেষে বছরে আয় করেন ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা।
গোমতির বান্দরছড়া গ্রামে অন্যের কাছ থেকে বন্ধক নেওয়া ৯ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন সবজির খেত। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় মনোবল নিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। অর্জন করেছেন সফল সবজি চাষির জাতীয় স্বীকৃতিও। নিজের জমি না থাকলেও যে সাফল্য অর্জন করা যায় তার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শফিউল।
প্রতিবন্ধী শফিউলের সবজি খেতে খণ্ড জমিতে রয়েছে ক্ষীরা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁচা মরিচ, ভেলু (ডালজাতীয়), করলা ও টমেটো। ডায়মন্ড জাতের আলু গাছের ফাঁকে ফাঁকে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করেছেন ভুট্টা। নিজের মনোবল দিয়ে করা সবজি খেতে সারাদিন সময় দেন তিনি। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও ক্রাচে ভর করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ে তোলা সবজি খেত দেখভাল করেন শফিউল বশর। তার পরামর্শেই সবজি উৎপাদনে নিরলসভাবে কাজ করছেন ৯/১০ জন নিয়মিত শ্রমিক।
বন্ধকী জমিতে সবজি চাষ করে বছরে ৬/৭ লাখ টাকা উপার্জন করেন তিনি। শুধু নিজের নয়, তার জমিতে নিয়মিত কাজ করে ১০টি পরিবারেও আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে।