এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগীতের উপ-পরিচালক রকিবুল হাসান রবিনকে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ওই ছাত্রীর কাছ অভিযোগ পাওয়ার পর ৩১ অগাস্ট রবিনকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম।
রবিন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। টিএসসিসির এক সময়ের সঙ্গীত প্রশিক্ষক রকিবুল হাসান রবিন বর্তমানে সেখানেই সঙ্গীতের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বুলবুল বলেন, “রকিবুল আমাদের একজন সদস্য। একজন সাবেক শিক্ষার্থী রবিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনার কারণে ৩১ অগাস্ট রবিনকে সংগঠন থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”
অব্যাহতির ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও রাজশাহী শাখার সাবেক একজন শিল্পী ও কর্মীর চিঠির মাধ্যমে আপনার অনৈতিক কার্যকলাপ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এইসব কর্মকাণ্ড প্রচলিত আইনবিরোধী, সমাজবিরোধী এবং নৈতিকতাবিরোধী বলে বিবেচিত হয়।”
আপনি আমাদের সংগঠনের সাথে যুক্ত, ফলে আপনার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠনের সুনামকেও ক্ষুণ্ন করেছে। এই সমস্ত অভিযোগ প্রমাণিত হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
“এ অবস্থায় বগত ৩০ আগস্ট নির্বাহী সভাপতি ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদ থেকে এবং আপনার উপর অর্পিত সকল দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদান করা হল।”
ধর্ষণের বিষয়টি তদন্তে গত ৩১ অগাস্ট সংগঠনটির পক্ষ থেকে একজনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানান বুলবুল।
গত ২৩ অগাস্ট দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিস ‘র সঙ্গীতের উপপরিচালক রকিবুল ইসলাম রবিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে ওই শিক্ষার্থীর বাবা ও মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
ওই ছাত্রী অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, তিনি রকিবুল হাসান রবিনের কাছে গান শিখতেন। ২০১০ সালে যখন তার বয়স ১২ বছর, তখন রবিন তাকে ধর্ষণ করেছিলেন। তাকে বারবার ভয় দেখিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছেন এবং একাধিকবার ধর্ষণ করেছিলেনন।
এতে মানসিক বিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পড়াশোনা, সামাজিক জীবন ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ন্যায়-অন্যায় বোধ, অকপটে বলার সাহস এবং সামাজিক সমর্থন না পাওয়ার আশঙ্কায় সে সময় তিনি ঘটনা প্রকাশ করতে পারেননি বলেও অভিযোগ তুলেছেন ওই তরুণী।
তিনি অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, তিনি জানতে পেরেছেন রকিবুল আরও অনেকের সঙ্গে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেছেন। আর যেন কারও ক্ষতি করতে না পারেন সে কারণে এর প্রতিকারের জন্য তিনি মুখ খুলেছেন।
এদিকে বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) উপাচার্য দপ্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে অভিযোগটি গিয়েছে বলে জানিয়েছেন সেলের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রেজিনা লাজ।
তিনি জানান, তারা অভিযোগপত্রটি উপাচার্য দপ্তর থেকে পেয়েছেন বুধবার। খুব শীঘ্রই সেলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে এবং দ্রুতই তদন্তের কাজ শুরু করা হবে।
অব্যাহতির বিষয়ে রকিবুল হাসান রবিনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এর আগে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, “ওই মেয়েকে আমি দীর্ঘদিন গান শিখিয়েছি। ২০১০ সালের পরও আমরা এক সঙ্গে অনেক অনুষ্ঠান করেছি। এ ধরনের অভিযোগ তখন তোলেনি কেউ। আজ অনেক পর বছর কেন?”
তিনি দাবি করেন, মেয়েটির বাবার সঙ্গে সাংগাঠনিক জায়গায় একটি দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। সেটার বশবর্তী হয়ে তিনি এ ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন।”
এ ছাড়া তিনি গত ২৩ অগাস্টই রাজশাহী নগরের মতিহার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তাতেও তিনি উল্লেখ করেছেন, “শুধুমাত্র সাংগঠনিক দ্বন্দ্বের কারণে অভিযোগকারীর বাবা ঈর্শার বশবর্তী হয়ে তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র ও কুৎসা রটনা করে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করছেন।”