17610

04/19/2025 বাঁচা-মরা আল্লাহর ইচ্ছা, আঁখি প্রসঙ্গে ডা. সংযুক্তা সাহা

বাঁচা-মরা আল্লাহর ইচ্ছা, আঁখি প্রসঙ্গে ডা. সংযুক্তা সাহা

স্বাস্থ্য ডেস্ক

১৫ জুন ২০২৩ ২০:১৮

রাজধানীর গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণার বলি হয়ে নবজাতকের মৃত্যু ও মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখির ঘটনায় ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা।

তার অধীনেই দীর্ঘদিন চেকআপে ছিলেন আঁখি। তবে, নবজাতকের মৃত্যু ও আঁখির করুণ পরিস্থিতির পেছনে চিকিৎসক হিসেবে নিজের কোনো দায় দেখছেন না ডা. সংযুক্তা।

অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রোগীর পরিবার অনেক কিছুই বলতে পারে, কারণ তারা স্বজন হারিয়েছেন। কিন্তু বাঁচা-মরা তো আল্লাহর ইচ্ছা। আমরা তো ইচ্ছা করে কাউকে মেরে ফেলি না।’

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সেন্ট্রাল হাসপাতালে প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখির সাথে প্রতারণা ও ভুল চিকিৎসার বিষয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. সংযুক্তা সাহা বলেন, ‘চিকিৎসক হিসেবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটাই করে থাকি। তারপরও অনেক সময় রোগীকে বাঁচাতে পারি না, চিকিৎসক কখনোই জেনে-বুঝে রোগীকে সমস্যায় ফেলতে পারেন না।’

তিনি বলেন, ‘আমি সে সময় সেন্ট্রাল হসপিটালে ছিলাম না। যা ঘটেছে সেটি হাসপাতাল বুঝবে। সেন্ট্রাল হসপিটাল আমার নয়, আমি ওউনও (নিজের বলে মনে করা) করি না। তাছাড়া আমি সেখানে পার্মানেন্টলি কাজ করি না। আমি সেখানকার অ্যাপোয়েন্টেড কোনো ডাক্তারও নই। কিন্তু সে দিনের ডেলিভারিতে আমার অনুপস্থিতে যারা ছিল সবাই তাদের নিজস্ব ডাক্তার-নার্স। সুতরাং যদি রোগীর পরিবারের সঙ্গে কিছু হয়ে থাকে, সেটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুঝবে।’

ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই রোগীর ক্ষেত্রে আমি যতটুকু শুনেছি, ওরা সারাদিন কোনো একটা থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ট্রায়াল লেবারে ছিল। তারপর রাত ১২টায় সেন্ট্রাল হসপিটালে আসে। তখনই তাকে তাড়াহুড়া করে ডেলিভারির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সম্ভবত দেরিতে আসার কারণেই তাকে ঝুঁকিতে পড়তে হয়েছে। এর বাইরে আমি আর কিছু জানি না।’

‘সংযুক্তা সাহা হাসপাতালেই আছেন’- এমন আশ্বাসে রোগীকে ডেলিভারিতে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি না থাকা সত্ত্বেও যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে থাকি আমি আছি, আমার আশ্বাস দিয়ে তাকে ওটিতে নিয়ে যায়, তাহলে এটি অবশ্যই অপরাধ। আমি স্বাভাবিকভাবেই হসপিটালের নাও থাকতে পারি। আমি তো একজন মানুষ। হঠাৎ করে আমিও সুস্থ হতে পারি। যদি হাসপাতালে এসে জিজ্ঞেস করা হয় যে, সংযুক্তা ম্যাডাম আছে, তাহলে অবশ্যই বলতে হবে না, তিনি নেই। আমি মনে করি, এটাই ফেয়ার।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের হসপিটালে কর্তব্যরত যেসব চিকিৎসক-নার্স কাজ করেন, তাদের ডিউটি রোস্টার ফিক্সড। এখান থেকে কিন্তু কারও পালানোর কোনো সুযোগ নেই। আমি জানি না তারা রোগীকে কী বলেছিল বা আশ্বাস দিয়েছিল। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে আমার কথা বলা মনে হয় সমীচীন হবে না।’

ডা. সংযুক্তা বলেন, ‘আমার বেশ কিছু রোগী আছে। যারা আমাকে বিশ্বাস করে দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসে। এখন কেউ আঁখির ঘটনায় আমাকে সম্পৃক্ত করতে চায়, যেখানে আমি ছিলামই না। আমাকে যদি রোগীর লোকেরা দোষারোপ করে, তাহলে তাদেরকে কিছুই বলার নেই; কারণ তারা শোকে এফেক্টেড। এ ক্ষেত্রে তারা অনেক কথাই বলতে পারেন। কিন্তু কোনো একটা কথা বলার আগে আমাদের অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে। আমি যে কারও সম্বন্ধে যা ইচ্ছে বলতে পারি না।’

হাসপাতালের একটি সূত্র বলছে যে, ডেলিভারির সময় আপনি ভিডিও কলে ছিলেন এবং গাইডলাইন দিয়েছেন- এমন প্রসঙ্গে এই গাইনি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমার সাথে কেউ ভিডিও কলে ছিল না। আমি রাত সাড়ে ১১টার দিকে এয়ারপোর্টে পৌঁছাই। এরপরও আমার দুটি ফোন খোলাই ছিল। কিন্তু সেই রাতে আমাকে রোগীর পক্ষ থেকে বা হসপিটালের পক্ষ থেকে কোনো ফোন করা হয়নি। সুতরাং আমি জানিই না রোগীটা যে এসেছে। আমি ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত যতক্ষণ হসপিটালে ছিলাম, আমার এমন কোনো রোগী হসপিটালে ভর্তি হয়নি।’

ডা. সংযুক্তা বলেন, ‘প্রত্যেকবারের মতো যখন আমি বাইরে যাই, তখন দুজন প্রফেসর ডেজিগনেটেড নেটে থাকেন। তারা আমার ইমার্জেন্সি রোগীদেরকে হ্যান্ডেল করেন। আমি সাধারণত শুক্রবারে ১০টার মধ্যে সমস্ত ইমারজেন্সি শেষ করি। এবার যখন রোগী আসলো, তারা আসতে আসতে রাত ১২টার অধিক বেজে গিয়েছিল। তাছাড়া একটি বিশেষ কাজে আমি সেই রাতে দেশের বাইরেও গিয়েছিলাম, যে কারণে আমার থাকার সুযোগ হয়নি।’

সেন্ট্রাল হসপিটালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় আঁখি নামে এক প্রসূতি মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বামী ইয়াকুব আলী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মারা গেছে তাদের নবজাতক সন্তানও এমনটাই দাবি তার।

জানা গেছে, গত তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হসপিটালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। এমনকি তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল বলেও চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই সন্তান প্রসব সম্ভব বলে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা।

প্রসব ব্যথা ওঠায় গত শুক্রবার (৯ জুন) রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সেন্ট্রাল হসপিটালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করা হয় আঁখিকে। তখন ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না। তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন।

এ বিষয়ে আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী বলেন, আমার স্ত্রীকে যখন ওটিতে ঢুকানো হয় এবং নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টা শুরু করা হয়, তখনও আমি সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন কি না জানতে চাই। কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরে জানতে পেরেছি ডা. সংযুক্তা সাহা ছিলেন না এবং তারা রোগীর কোনোরকম চেক-আপ ছাড়াই ডেলিভারির কাজ শুরু করে দেন।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]