17779

04/24/2025 টাইটানে অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ার শঙ্কা, সমুদ্রতলে পৌঁছেছে রোবট যান

টাইটানে অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ার শঙ্কা, সমুদ্রতলে পৌঁছেছে রোবট যান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৩ জুন ২০২৩ ০১:২৬

পর্যটকদের পানির সাড়েআটলান্টিকের সাড়ে ১২ হাজার ফুট নিচে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া ডুবোযান টাইটানের সন্ধান চালাতে দুটি রোবট যান পাঠানো হয়েছে।

উত্তর আটলান্টিকের যে স্থানে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের অবস্থান, তার আশপাশের এলাকায় নিখোঁজ ডুবোযান টাইটানের খোঁজে দূর নিয়ন্ত্রিত দুটি রোবট যান ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে।

পর্যটকদের পানির সাড়ে ১২ হাজার ফুট নিচে থাকা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে ডুব দেওয়া টাইটানের সন্ধানে শেষ মুহূর্তের তল্লাশি চালাতে এই দুটি যান পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে দূর নিয়ন্ত্রিত যান দুটি টাইটানিকের কাছে পৌঁছে তল্লাশি শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড বলছে, কানাডার জাহাজ হরাইজন আর্কটিক থেকে পরিচালিত দূর নিয়ন্ত্রিত একটি যান সমুদ্রের তলদেশে পৌঁছেছে।

এছাড়া ফরাসি গবেষণা জাহাজ এল’আটলান্টা থেকে পাঠানো দূর নিয়ন্ত্রিত রোবট ভিক্টর ৬০০০-ও মোতায়েন করা হয়েছে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রায়ত্ত মহাসাগর গবেষণা ইনস্টিটিউট ইফরেমার এই রোবট পরিচালনা করে।

ইফরেমার বলছে, গবেষণা জাহাজ এল’আটলান্টা রোবটের অনুসন্ধানকে একদম লক্ষ্যবস্তু বরাবর করার জন্য সমুদ্রতলের সঠিক ম্যাপের কাজে প্রথমবারের মতো একটি ইকো-সাউন্ডার ব্যবহার করছে।

ফরাসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এই ডুবোযান পরিচালনা করবেন দু’জন পাইলট। তারা সমুদ্রপৃষ্ঠে থাকা এল’আটলান্টা থেকে চার ঘণ্টা করে দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করবেন। ভিক্টর ৬০০০-এ রয়েছে শক্তিশালী লাইট ও ক্যামেরা। যা সমুদ্রপৃষ্ঠে জাহাজে থাকা দলটিকে একটি ছোট টেনিস কোর্টের সমান দূরত্ব পর্যন্ত সমুদ্রের তলদেশে কী রয়েছে, তার রিয়েল টাইম দৃশ্য দেখাবে।

রোবোটিক এই যানের দু’টি যান্ত্রিক হাত রয়েছে; যা অত্যন্ত সূক্ষ্ম কৌশলে ধ্বংসাবশেষ কাটা বা অপসারণ করতে পারে। ফ্রান্সের দক্ষিণের ঘাঁটির পরিবেশ বেশ শান্ত। কারণ তারা জানে, এল’আটলান্টায় ভিক্টর ৬০০০ পরিচালনাকারী দলটি অত্যন্ত অভিজ্ঞ।

এই দুটি দূর নিয়ন্ত্রিত যান এখন আটলান্টিকের তলদেশে টাইটানের খোঁজে ব্যাপক অনুসন্ধানে নিয়োজিত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ডের মতে, টাইটানের ৯৬ ঘণ্টার অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এটি কেবল অনুমান মাত্র। কারণ টাইটানের যাত্রীরা অক্সিজেনের যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণের জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন, অনেক কিছু নির্ভর করবে তার ওপর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডুবোযানটি সমুদ্রতলের উপরিভাগে আছে কি না তা এখনও পরিষ্কার নয়। এর অবস্থান শনাক্ত করার জন্য কয়েক সপ্তাহের ব্যাপক পরিসরের অনুসন্ধানেরও প্রয়োজন হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তারা।

গত রোববার উত্তর আটলান্টিকের তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে ডুবোযান টাইটান। যাত্রা শুরুর পর এই যানের যাত্রীদের জন্য ৯৬ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহের কথা। সেই হিসাবে টাইটানের অবস্থান শনাক্ত এবং এর যাত্রীদের জীবিত উদ্ধারের শেষ সময় যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে। এরপরে টাইটানের পাঁচ যাত্রীদের জীবিত উদ্ধারের আশা ফুরিয়ে যাবে।

• কত গভীরে যেতে পারে টাইটান?

আটলান্টিক মহাসাগরের পৃষ্ঠ থেকে সাড়ে ১২ হাজার ফুট গভীরে রয়েছে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ। যদি ডুবোযানটি সমুদ্রতলে চলে যায় এবং নিজস্ব সক্ষমতার ব্যবহার করে ফিরে আসতে না পারে, তাহলে এটিকে উদ্ধারের বিকল্প অত্যন্ত সীমিত।

সাবমেরিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অ্যালিস্টার গ্রেইগ বলেন, আমরা জানি এত গভীরে যাওয়ার মতো যান খুব কমই আছে। সাবমেরিন উদ্ধারের জন্য নৌবাহিনীর নকশা করা যানবাহন যতটা প্রয়োজন ততটা গভীরে যেতে পারে না।

ডুবোযানটির মালিকানাধীন কোম্পানি ওশানগেটের মতে, টাইটান পৃথিবীর মাত্র পাঁচটি মনুষ্যবাহী ডুবোজাহাজের একটি; যা প্রয়োজনীয় গভীরতায় পৌঁছাতে সক্ষম।

মার্কিন নৌবাহিনীর একটি রিমোট নিয়ন্ত্রিত রোবোটিক যান রয়েছে, যা ওই গভীরতায় কাজ করতে পারে। গত বছর দক্ষিণ চীন সাগরের ১২ হাজার ৪০০ ফুট গভীরতায় তল্লাশি চালিয়ে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানের অবস্থান শনাক্ত ও উদ্ধারে ব্যবহার করা হয় এই যান।

• নিখোঁজ হলো কখন?

রোববার সকালের দিকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছাকাছি যায় টাইটানকে বহনকারী জাহাজ পোলার প্রিন্স। স্থানীয় সময় রোববার ৮টায় ধ্বংসাবশেষের উদ্দশে ডুব দেয় এটি। বিকেল ৩টার মধ্যে ফিরে আসার কথা ছিল টাইটানের। কিন্তু যাত্রা শুরুর পর ৯টা ৪৫ মিনিটে টাইটানের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

মার্কিন কোস্ট গার্ড বলেছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ৮ ঘণ্টা পর অর্থাৎ বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে তারা এই ঘটনা সম্পর্কে প্রথমে জানতে পারেন। তারপর বোস্টনে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে অনুসন্ধান প্রচেষ্টার সমন্বয় কার্যক্রম শুরু হয়।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]