গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোণার কংস, সোমেশ্বরী, বৈঠাখালী, মঙ্গলেশ্বরী, গুমাই, ধনু ও উব্ধাখালীসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার নিচু এলাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রামের বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সোমবার (৩ জুলাই) বিকেল ৪টা পর্যন্ত উব্ধাখালী নদীর কলমাকান্দা ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এরই মধ্যে কলমাকান্দা উপজেলার বাহাদুরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাইজপাড়া, খলা-২, বড়খাপন, চৌহাট্টা, বাউসারী, হাইলাটী, রিকা, পোগলা, ভাটিপাড়াসহ প্রায় ৬০টি বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকেছে এবং উপজেলা মোড়-মুক্তিরচর, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়া, ঘোষপাড়া, হরিণধারা, কলমাকান্দা-বিশরপাশা পাকা রাস্তা, গোরস্থান-সাউদপাড়া, গজারমারী-খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদ, গোবিন্দপুর-রানীগাঁও কাঁচা রাস্তাসহ আরও অন্তত ১০টি রাস্তার বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান।
কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বলেন, আমার ইউনিয়নের তিনটি সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে এবং কলমাকান্দা-গোবিন্দপুর সড়কের বাউসাম রুমালীর বাড়ি সংলগ্ন এলাকার সড়কটির কিছু অংশ পানিতে ভেঙে যাওয়ায় ভাঙা অংশের মেরামতের কাজ চলছে।
পোগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, পানি বাড়তে থাকায় ইউনিয়নের কালাকোনা, জীবনপুর, গোয়াতলা, কৈলাটি, মঙ্গলসিধসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে ওই এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
কলমাকান্দা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন বলেন, স্কুল বন্ধ থাকায় কতগুলো বিদ্যালয়ে বন্যার পানি এসেছে তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে বাহাদুরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাইজপাড়া, খলা-২, বড়খাপন, চৌহাট্টা, বাউসারী, হাইলাটী, রিকা, পোগলা, ভাটিপাড়াসহ বেশ কিছু বিদ্যালয় মাঠে পানি ঢুকেছে।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে খোঁজ-খবর নিচ্ছি এবং জরুরি সেবা নম্বর খোলা হয়েছে। শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে এবং কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্ব ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে নেত্রকোণার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার সৃষ্টি হতে পারে।
তবে পানি বৃদ্ধির ফলে আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত জেলার কৃষি ও মৎস্য বিভাগের কোনোরকম ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান কবীর জানিয়েছেন।