25741

09/17/2024 আমেরিকা থেকে শাহিনকে ফেরাতে কূটনৈতিক তৎপরতাই ভরসা

আমেরিকা থেকে শাহিনকে ফেরাতে কূটনৈতিক তৎপরতাই ভরসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ মে ২০২৪ ১৫:৩৮

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনে হত্যার ঘটনায় মূল মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশি আমেরিকান আখতারুজ্জামান শাহিনকে সনাক্ত করা হয়েছে। তার নির্দেশে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজন গ্রেপ্তার হলেও এখনো পলাতক চারজন।

হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে যাওয়া মূল পরিকল্পনাকারী আমেরিকায় আখতারুজ্জামান শাহিন ও সহযোগী সিয়াম নেপালে পালিয়ে গেছেন। তদন্তের স্বার্থে ডিবি পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট দেশ দুটির এনসিবির কাছে সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরো (এনসিবি)।

তবে আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই। কিন্তু সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত আখতারুজ্জামান শাহিনকে ফেরাতে কূটনৈতিকভাবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।

বুধবার (২৯ মে) ডিএমপি সদরদপ্তরে আয়োজিত "ডাটাবেজ এন্ড এনালাইসিস অফ রোড ক্র‍্যাশ (DARC) সফটওয়্যার" প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, সংসদ সদস্যকে কি কারণে হত্যা করা হয়েছে অর্থাৎ হত্যার মোটিভ কি? এটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশ কিংবা ভারতীয় পুলিশ কেউই উদ্ধার করতে পারেনি। এটার যিনি ষড়যন্ত্রকারী, পরিকল্পনাকারী তিনি এখন দেশের বাইরে রয়েছেন তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাই হত্যার কারণ এখনো কিছুই উদ্ধার করা যায়নি। তাকে গ্রেপ্তার করলেই কেবল এই হত্যার মোটিভ জানা যাবে।

যেহেতু মূল অভিযুক্ত শাহিন আমেরিকায় পলাতক, দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই। এ ক্ষেত্রে শাহিনকে ফেরানোর ক্ষেত্রে কি ধরণের পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে যে ধরনের প্রচেষ্টা করা দরকার সেটির সর্বোত্তম চেষ্টা করা হবে। যেহেতু তিনি (আনার) সংসদ সদস্য ছিলেন সুতরাং বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। যদিও আমেরিকার সঙ্গে আমাদের সেই ধরণের চুক্তি নেই। তাই অন্য যে কোনো মাধ্যম বা কূটনৈতিক চ্যানেলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।

এক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি কাজে লাগানো হবে কি না, জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনাটি বাংলাদেশের আইনে বিচার হতে পারে এবং ভারতে যেহেতু ঘটনা ঘটেছে সেখানেও বিচার হতে পারে। সুতরাং এটি আমাদের পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

কলকাতা পুলিশ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ডে যে কয়েকজনের নাম এসেছে তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার চারজন ছাড়াও এখনো পলাতক চারজন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে তিনজন এবং ভারতের কলকাতায় একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তাররা হলেন, আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ও সিলিস্তি রহমান। অন্যদিকে কলকাতা পুলিশ জিহাদ হাওলাদার নামে একজন কসাইকে গ্রেপ্তার করে। হত্যার দুই মাস আগে মুম্বাইয়ের অবৈধ অভিবাসী জিহাদকে পাঠানো হয়েছিল। তার বাড়ি বাংলাদেশের খুলনায়।

সংসদ সদস্য আনার খুনের বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত আরও অন্তত চারজনের নাম পেয়েছে দুদেশের পুলিশ। তাদের মধ্যে আখতারুজ্জামান, সিয়ামসহ চারজন এখনো ধরা পড়েননি। বাকি দুজন হলেন ফয়সাল আলী সাজী ও মো. মুস্তাফিজুর রহমান ফকির। দুজনই খুলনার ফুলতলার বাসিন্দা। ঢাকা ডিবির হাতে গ্রেপ্তার শিমুল ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে এলাকায় পরিচিত তারা। দুজন বাংলাদেশে আছেন বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে।

‘মূল পরিকল্পনাকারী’ আখতারুজ্জামান একজনকে ভাড়া করেছিলেন বলে জানিয়েছে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

সূত্র বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমানুল্লাহ নামধারী ব্যক্তি এ কথা জানিয়েছেন। পরে আমানুল্লাহ ভাড়া করেন মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ও ফয়সাল আলীকে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বর্ণ চোরাচালানের আন্তঃদেশীয় চক্রের দ্বন্দ্বের জেরে পরিকল্পিতভাবে আনোয়ারুলকে ভারতে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিনও স্বর্ণ চোরাচালানসহ হুন্ডির অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের সঙ্গে শাহিনের দ্বন্দ্ব ছিল। এর জেরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে তদন্তকারীরা ধারণা করছেন।

মাস্টারমাইন্ড হিসেবে যাকে খোঁজা হচ্ছে সেই আখতারুজ্জামানের ভাই ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র শহীদুজ্জামান।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]