28032

09/20/2024 মুনিয়া হত্যার বিচার চেয়ে বোনের সংবাদ সম্মেলন

মুনিয়া হত্যার বিচার চেয়ে বোনের সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ আগস্ট ২০২৪ ১৬:৩১

বহুল আলোচিত মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া।

ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহ আলম ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরকে গ্রেফতারের দাবি জানান।

সেই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে মামলা করার পর নানা হয়রানির পেছনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের একাধিক মন্ত্রী, রাজনীতিক, আইনজীবী, বিচারক ও বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন তানিয়া।

মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।

তানিয়া বলেন, মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যার বিচার পাননি। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বোন হত্যার বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নুসরাত জাহান তানিয়া বলেন, আমি জানতে পারি তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার বান্ধবী তৌফিকা করিমকে দিয়ে মোটা অংকের টাকা সায়েম সোবহান আনভীরের থেকে ঘুস নিয়ে মামলা প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। তাই আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য একাধিকবার আবেদন করি এবং প্রায় ২৬ পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি আমাকে সাক্ষাৎ দেননি।

তিনি বলেন, মুনিয়াকে মেরে ফেলার সংবাদ পাবার পর আমি যখন গুলশান থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম তখন থেকেই ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপ পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকেই কিনে ফেলতে চেয়েছিল এই হত্যা ও ধর্ষণ মামলার ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য। তৎকালীন আইজিপি বেনজির (বেনজির আহমেদ) এবং গুলশান থানার ওসি সুদীপ কুমার, আনভীরকে বাঁচাতে নির্লজ্জ ভূমিকা রেখেছিল। পরবর্তীতে গুলশান থানা আনভীরকে অব্যাহতি দিয়েই তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। আমি আওয়ামী পরিবারের একজন সন্তান। আমার প্রয়াত বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং তিনি কুমিল্লাতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।

তানিয়া অভিযোগ করেন, আমি বিশ্বাস করি শেখ হাসিনার প্রশ্রয় না পেলে আনভীররা এতটা বেপরোয়া হয়ে ওঠার সাহস পেতো না। পিবিআইতে যখন আমার মামলাটি গেল সেখানেও তৎকালীন পিবিআই প্রধান বনজ কুমারকে ঘুস দিয়ে তাদের থেকেও একটি একপেশে তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে আসে বসুন্ধরা গ্রুপ। ওই রিপোর্টেও আনভীরসহ সকলকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমি নারাজি জানানোর পর সেটাও আদালতে খারিজ হয়ে যায়। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো মুনিয়া অন্তঃসত্ত্বা ছিল, পিবিআই তাদের তদন্তেও বলেছে সেটা ছিলো আনভীরেরই সন্তান। অথচ সেই আনভীরকে তারা স্যাম্পল টেস্ট করতে বললো না।

তিনি আরও বলেন, মামলার অন্যান্য আসামি যেমন সাইফা মিম ও পিয়াসাকে গ্রেফতার করলেও আনভীরকে একটিবারের জন্যও জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেফতার করেনি। অর্থাৎ বিচারের নামে কি রকম তামাশা হয়েছে সেটা নিশ্চই আপনারা বুঝতে পারছেন। এত অন্যায় ও অবিচারের পরেও আমি আনভীরদের হুমকি, টাকা ও প্রলোভনের কাছে বিক্রি হইনি। আমি হালও ছেড়ে দেইনি। আমার মামলা এখনো চলমান আছে। আমি বিশ্বাস করি স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর এই স্বাধীন বাংলাদেশে আমি ন্যায়বিচার এখন প্রত্যাশা করতেই পারি।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তানিয়া বলেন, আমি জানি আপনারা কতটা চাপ, ঝুঁকি এবং সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, আমার বোন মুনিয়াকে ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনার পর থেকে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আমি জানি আপনাদের প্রায় প্রতিটি মিডিয়া হাউজ বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে মাসে বিজ্ঞাপন পান। তাই অনেকেই সেই বিজ্ঞাপন হারানোর ঝুঁকি জানিয়ে, আমার বোনের পক্ষে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে পারেননি।

এ সময় তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্টদের অবিলম্বে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহ আলম ও তার ছেলে আনভীরকে গ্রেফতার করে মুনিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি হিসেবে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেন।

এ সময় মুনিয়া হত্যার বাদী পক্ষের আইনজীবী ব্যরিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, এডভোকেট মাসুদ সালাউদ্দিন, এডভোকেট মানিক চন্দ্র শর্মা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]