31219

04/20/2025 সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মজুত ২৬ টন স্বর্ণ

সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মজুত ২৬ টন স্বর্ণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯:০২

সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে মজুত অবস্থায় মিলেছে ২৬ টন স্বর্ণ। বর্তমান বাজারে এই পরিমাণ স্বর্ণের মূল্য কম করে হলেও ২২০ কোটি ডলার। ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ অবশ্য একেবারেই কম— মাত্র ২০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বর্তমানে মজুত রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

আন্তর্জাতিক স্বর্ণের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুসারে, ২০১১ সালে যখন সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে, সে সময় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মজুত স্বর্ণের পরিমাণ ছিল ২৫ দশমিক ৮ টন স্বর্ণ।

তারপর গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধে তছনছ হয়েছে সিরিয়া, অন্তত ৩ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, একের পর এক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান-কর্মসংস্থান ধ্বংস হয়েছে, মূল্যস্ফীতি প্রায় আকাশ স্পর্শ করেছে, লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন তুরস্ক, ইরান, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে— কিন্তু দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণের মজুতে এসবের কোনো প্রভাব তো পড়েই নি, উপরন্তু গৃহযুদ্ধের গত এক বছরে স্বর্ণের মজুতের পরিমাণ খানিকটা বেড়েছে। ২০১১ সালে যেখানে মজুত ছিল ২৫ দশমিক ৮ টন স্বর্ণ, সেখানে বর্তমানে রয়েছে ২৬ টন।

গৃহযুদ্ধ শুরুর বছর, অর্থাৎ ২০১১ সালে অবশ্য বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও ভালোই ছিল সিরিয়ার। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফের তথ্য অনুসারে, ২০১১ সালে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে।

২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে দেশের অর্থনীতি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রদান করা বন্ধ করে দেয় বাশার আল আসাদের নেতৃত্বাধীন সরকার। সিরিয়ার সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, গত ১৩ বছরে খাদ্য, জ্বালানি এবং যুদ্ধ পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয়ের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের ওপরই বহুলাংশ নির্ভর করেছে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের নেতৃত্বাধীন সরকার। নগদ মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ এটিই।

বাশার আল আসাদ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন ২২ বছর। তার আগে তার পিতা হাফিজ আল আসাদ ৩০ বছর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। গত নভেম্বরের শেষ দিক থেকে সিরিয়া দখলে অভিযান শুরু করে সরকারবিরোধী বিদ্রোহীরা। হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি গোষ্ঠীর নেতৃত্বে শুরু হওয়া এ অভিযানের মাত্র ১২ দিনের মাথায় পতন ঘটে আসাদ পরিবারের ৫২ বছরের শাসনের। রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে সপরিবারে মস্কো পালিয়ে যান বাশার আল আসাদ।

গত ৮ ডিসেম্বর বাশার রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পর সাবেক বিদ্রোহীদের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার দেশটির সম্পদের হিসাব নেওয়া শুরু করে। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি।

সরকার পতনের মুহূর্তে কিছু বিক্ষোভকারী সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুট করে কিছু সিরীয় পাউন্ড হাতিয়ে নিয়েছিল, তবে তারা ব্যাংকের প্রধান ভল্ট ভাঙতে পারেনি। তাই মজুদ করা সোনা লুট করতে পারেনি।

রয়টার্স জানিয়েছে, চুরি যাওয়া রিজার্ভের কিছু অংশ ইতোমধ্যে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে নতুন প্রশাসন। গত সপ্তাহে দেশটির নতুন সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন ভল্ট পরিদর্শন করেছেন বলে জানিয়েছে সরকারের দু’টি সূত্র।

সিরিয়ার প্রধান রপ্তানিপণ্য ছিল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। এই তেলক্ষেত্রগুলো দেশটির পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। গৃহযুদ্ধের সময় এসব তেলক্ষেত্রের অধিকাংশই কুর্দি বিদ্রোহীরা দখল করে নেয়। এছাড়া গৃহযুদ্ধ শুরুর পর সিরিয়ার ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, দখল হওয়া খনিগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে; আর যেহেতু স্বর্ণের মজুত বেশ সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে, তাই আপাতত অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হবে না সিরিয়াকে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]