২০২৩ বিপিএল ফাইনাল। হট ফেবারিট কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সামনে সিলেট স্ট্রাইকার্স। সেই আসরে সিলেটের দলটাকে ফাইনালে দেখা যাবে এমন বাজি ধরার লোক খুব কমই ছিলেন। তবে সেটাই ঘটেছিল। দারুণ ব্যাটিং ইউনিট সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজিকে প্রথমবার নিয়ে যায় ফাইনালে। আর সেই আসরের সুবাদে বাংলাদেশ ক্রিকেট পেয়েছিল নতুন স্বস্তি।
সেই স্বস্তি দুন তাওহীদ হৃদয় এবং নাজমুল হোসেন শান্ত। হৃদয় তখনো উঠতি প্রতিভা আর শান্ত ছিলেন ফর্ম হারিয়ে ফেলা একজন নিয়মিত তারকা। কিন্তু সিলেট স্ট্রাইকার্সে সেবারে দুজনের ব্যাটেই দেখা গিয়েছিল রানের ফোয়ারা। সেই আসরেই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এক বিপিএল আসরে ৫০০ এর বেশি রান করেছিলেন শান্ত।
আর তাওহীদ হৃদয় নিজেকে জানান দিয়েছিলেন ৪০৩ রান করে। যদিও ফাইনালে দুজনেই ছিলেন ব্যর্থ। আর সিলেটও সেদিন আর বিস্ময়ের জন্ম দিতে পারেনি। ব্যর্থতার হতাশায় একইসঙ্গে ডুবেছিলেন শান্ত এবং হৃদয়।
সাল ২০২৫। মাঝের এক আসর বিরতি দিয়ে দুজনেই ফরচুন বরিশালের খেলোয়াড়। শান্ত এখন জাতীয় দলের দুই ফরম্যাটের অধিনায়ক আর হৃদয় দেশের মিডল অর্ডারের নির্ভরযোগ্য এক নাম। বিপিএলে অবশ্য শান্তকে অনেকটা সময়েই থাকতে হলো বেঞ্চে। দলের কম্বিনেশনের প্রয়োজনে জাতীয় দলের অধিনায়ক বসলেন ডাগআউটে আর হৃদয় হলেন পুরোদস্তুর ওপেনার।
চিটাগাং কিংসের বিপক্ষে ফাইনালে তামিম ইকবাল যখন ঝড় তুলছেন ব্যাট হাতে, তখন অন্যপাশে অ্যাংকর রোলে হৃদয় থাকলেন স্থির। একই ওভারে তামিম আর মালানের উইকেট যাওয়ার পর বরিশালের দরকার ছিল স্থিতির। সেই কাজটা কাইল মায়ার্সকে নিয়ে করেছেন সেই হৃদয়ই। ২৮ বলে ৩২ রানের জন্য আলোচনা হতে পারে ঠিকই। তবে ঝড় সামাল দেয়ার কাজটাও যে ভালোভাবেই সেরেছেন হৃদয়।
আর শেষটা করলেন মায়ার্স এবং রিশাদ। ৩ উইকেটের জয়ে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা বরিশালের ঘরে। ট্রফি নেয়ার ক্ষণে তামিম ইকবাল সামনে আনলেন শান্ত আর হৃদয়ের দুজনকেই। তিন বছর আগের হারের হতাশায় যারা ডুবেছিলেন একইসঙ্গে, সেই জুটিটাই এবারে বরিশালের জার্সিতে সাফল্য পেয়েছেন।
হৃদয়ের জন্য অবশ্য এই আসরটা একটু বেশিই স্পেশাল। এর আগে বিপিএলে টানা তিনবার ফাইনাল খেলেছেন। কিন্তু বিপিএলের শিরোপাটা অধরাই থেকে গিয়েছে তার জন্য। ফরচুন বরিশাল, সিলেট স্ট্রাইকার্স আর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জার্সিতে ফাইনালে গিয়ে বারবার হয়েছেন হতাশ। সেই ব্যর্থতা থেকে মুক্তি ঘটল এবারে। ২০২২ সালের পর আবার ফরচুন বরিশালের জার্সিতে হৃদয়। আর এবারে ফাইনালটা জিতেই ফেললেন তিনি।
শান্তর জন্যেও এটাই প্রথম বিপিএল শিরোপা। দুজনের আনন্দের ক্ষণটাকে রাঙানোর সুযোগ দিয়েছেন বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল নিজেও। শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে এই দুজনকেই সামনে এনেছিলেন তিনি।
পরে এর কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন তামিম নিজেও, ‘আমি দুবার ট্রফি জিতেছি। হৃদয়ের কথা যদি চিন্তা করেন, সে সম্ভবত দুই-তিনটি ফাইনাল খেলেও ট্রফি জিততে পারেনি। নাজমুলের ক্ষেত্রেও একই। এই ট্রফি তাদের কাছে আমার তুলনায় অনেক বেশি মূল্যবান, অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং রিশাদের ক্ষেত্রেও। তাই আমার মনে হয়েছে, আমি হয়তো ওদের এই সম্মানটা দিতে পারি যে, ট্রফিটা ওরা নিজের হাতে তুলুক।’