33329

03/12/2025 বেরোবির প্রতিষ্ঠাকালীন নাম পুনর্বহাল না করলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি

বেরোবির প্রতিষ্ঠাকালীন নাম পুনর্বহাল না করলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:১৪

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) নাম পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠাকালীন ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নাম পুনর্বহালের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বেরোবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। দ্রুত নাম পুনর্বহাল না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, রংপুরের মানুষের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল ছিল ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’। ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিল। পরে শেখ হাসিনা নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা দাবি করতে ২০০৯ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়টির নামফলক ও নাম পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) করেন। অথচ, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ নামে নগরীতে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। এ ছাড়া বেগম রোকেয়ার নামে পায়রাবন্দে একটি সরকারি কলেজ, একটি হাইস্কুল ও নগরীতে একটি বালিকা বিদ্যালয়ও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পুনর্বহাল এবং শেখ হাসিনার নামে প্রতিষ্ঠিত একটি হলের নাম পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া হল করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

ছাত্র আন্দোলনের বেরোবি প্রতিনিধি মো. শামসুর রহমান সুমন বলেন, পরিবর্তন নয় চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটির পুনর্বহাল। বিগত সরকারের আমলের ফ্যাসিস্ট নীতি ছিল গণবিরোধী ও জনতার আশাকে উপেক্ষা করার নীতি। সেই নীতির একটুও এদিক-সেদিক হয়নি রংপুরের মানুষ তথা আমাদের রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের সময়ে। রংপুরের মানুষের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল ছিল ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ বর্তমানে (বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর) একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সেই অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করে। বিভাগীয় শহরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটি যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু তৎকালীন ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন, নামফলক ও নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা দাবি করতে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামটি নামমাত্র ব্যবহার করে, যার কোনো যৌক্তিকতা সেই সময় ছিল না বরং বেগম রোকেয়ার নামে বিশেষায়িত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যেত। কেননা রংপুর শহরে (অর্থাৎ ৫ কি.মি. এর মধ্যে) ইতোমধ্যে আরেকটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান (সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ) যা আমাদের প্রতিষ্ঠানের সমমান (স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর) রয়েছে, যেটা বেগম রোকেয়াকে ধারণ করে অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে নারীদের উচ্চশিক্ষায় অবদান রেখে চলছে। ফলশ্রুতিতে একই নামের পাশাপাশি দুটি সমমানের প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা পরিচয়দানে অস্বস্তিতে ভোগা শুরু করে। ফ্যাসিস্ট সরকার (ফ্যাসিজমের দূরদর্শিতা ও রাজনৈতিক চাতুরতার) সঙ্গে পরিবর্তিত নাম মহীয়সী রোকেয়ার নামে করেন যাতে নাম পরিবর্তন নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে নারী বিদ্বেষীসহ নানা ট্যাগ লাগিয়ে সহজে কণ্ঠরোধ করা যায়। আওয়ামী স্বৈরাচারের শাসনামলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পুনর্বহালের দাবি উঠলে তখন নানা ট্যাগ দিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের দমিয়ে রাখা হয়।

তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তথা শেখ হাসিনা যখন রংপুরে একটি ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেয় তখন পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তারা বাধা প্রদান করেন। পরে আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে গণস্বাক্ষর আয়োজন করে উক্ত (রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়) নাম ব্যবহারের বিপক্ষে পরে ছাত্রদের কঠোর আন্দোলনের মুখে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও সরকার। রংপুরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি সেই অঞ্চলের নামে প্রতিষ্ঠা পেলেও আওয়ামী লীগ সেটি অত্যন্ত চতুরতার সহিত পরিবর্তন করে। বিগত আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের সময়ে বড় বৈষম্যের শিকার উত্তরের বাতিঘর খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ বরাদ্দ পায় ২০০ কোটি টাকা। এরপর ১৫ বছর আওয়ামী শাসনামলে নতুন কোনো বরাদ্দ পায়নি বিবিদ্যালয়টি। সেসময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রকল্পে যে তিনটি অবকাঠামো (শেখ হাসিনা হল, স্বাধীনতা স্মারক, ড. ওয়াজেদ মিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট) বরাদ্দ পেয়েছিল তা দুর্নীতির দায়ে জর্জরিত যা বর্তমান আংশিক কাজ হয়ে থেমে পড়ে আছে বছরের পর বছর। এমনকি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৮টি অনুষদ এবং ৪৪টি ডিপার্টমেন্ট থাকার কথা থাকলেও তা আজও আলোর মুখ দেখেনি। প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও আবাসন, পরিবহন সংকট তীব্র।

এ বিষয়ে উপাচার্য ড. শওকাত আলী বলেন, এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টাকে অবগত করা হয়েছে।তিনি বিষয়টিকে পজিটিভলি দেখলে অবশ্যই নাম পরিবর্তন হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরাও চাই নাম পরিবর্তন হোক।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]