33903

04/12/2025 রণাঙ্গনের যোদ্ধারাই হবেন ‘মুক্তিযোদ্ধা’, বাকিরা সহযোগী

রণাঙ্গনের যোদ্ধারাই হবেন ‘মুক্তিযোদ্ধা’, বাকিরা সহযোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:৩০

মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক স্বীকৃতি ও সংজ্ঞা নির্ধারণে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় নতুন এক অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে যারা সরাসরি রণাঙ্গনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, শুধু তারাই মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা পাবেন।

এছাড়া যারা দেশ ও বিদেশে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন, কূটনৈতিক তৎপরতা ও অন্যান্য সহযোগিতা করেছেন, তারা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম এক সাক্ষাৎকারে জানান, বর্তমানে প্রচলিত আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নেওয়া আট ধরনের ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে নতুন খসড়া অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই সংজ্ঞায় বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

তিনি জানান, ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২২’ সংশোধন করে নতুন ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রণয়ন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

নতুন আইনের মূল দিকগুলো হলো

১. রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা: যারা ১৯৭১ সালে সরাসরি অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁরাই কেবল ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন।

২. মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী: জনমত গঠন, কূটনৈতিক সহায়তা, বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী, চিকিৎসা সহায়তাকারী ব্যক্তিদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

৩. বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পর্যালোচনা: অতীতে যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, তাদের মধ্যে কেউ যদি নতুন সংজ্ঞার আওতায় না পড়েন, তবে তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে।

৪. বয়সসংক্রান্ত নীতি: মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময় ১২ বছর ৬ মাস। এটি নিয়ে মামলা থাকায় আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর নতুন আইন কার্যকর হবে।

৫. ভুল তথ্য প্রদানকারীদের জন্য সুযোগ: যারা ভুল তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা নিয়েছেন, তাদের ২৬ মার্চের মধ্যে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হতে পারে।

বর্তমান আইনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সকল ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।’ কিন্তু নতুন খসড়ায় এই অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে।

নতুন আইনে কেবল রণাঙ্গনে লড়াই করা ব্যক্তিদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, যেখানে স্বাধীনতা সংগ্রামে পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের জন্য আলাদা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ উপাধি প্রবর্তন করা হচ্ছে।

মার্চের প্রথম সপ্তাহে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই খসড়া অনুমোদন পেলে পরবর্তীতে তা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সভায় চূড়ান্ত করে কার্যকর করা হবে।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]