35620

04/23/2025 আস্থা রাখার অনুরোধ শিক্ষা উপদেষ্টার, তবুও অনড় শিক্ষার্থীরা

আস্থা রাখার অনুরোধ শিক্ষা উপদেষ্টার, তবুও অনড় শিক্ষার্থীরা

খুলনা ব্যুরো

২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১২:১৩

তদন্ত কমিটির ওপর আস্থা রেখে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে শিক্ষা উপদেষ্টা কুয়েটে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু ভিসির পদত্যাগ ছাড়া আমরণ অনশণ কর্মসূচি প্রত্যাহার করবে না বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

এর আগে পৌনে ১০টার দিকে শিক্ষা উপদেষ্টা কুয়েটে যান। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি শোনেন এবং তাদের অনশন ভঙ্গ করে আইনের ওপর আস্থা রাখার অনুরোধ করেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেন, তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই অনুযায়ী জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে। তিনি এ সময় অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। পরে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টার আশ্বাসে আশ্বস্ত না হয়ে কুয়েট উপাচার্যকে অপসারণ না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিনিধি দল বেলা ১১টায় স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন।

আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) আরও ৪ শিক্ষার্থী। এ নিয়ে অনশনে ৯ শিক্ষার্থী অসুস্থ হলেন। আর ২ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িতে নিয়ে যায় তাদের পরিবার।

মঙ্গলবার বিকেল থেকে টানা অনশনরত অন্য ২১ শিক্ষার্থীও শারীরিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এদিকে কুয়েটের আবাসিক হল ও বাইরের ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে জড়ো হন । উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে মিছিল ও স্লোগান দিচ্ছেন তারা।

এদিকে বুধবার সকাল থেকে কুয়েটের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পাসের ফটকগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদিক হোসেন পরামানিক বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আজকে যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে অনশন থেকে প্রত্যাহার করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষকরা।

কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণের দাবিতে গত সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল ৪টা থেকে ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন ৩২ জন শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা গত ১৩ এপ্রিল ক্যাম্পাসে ঢুকে হল খুলে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। ২ রাত তারা খোলা আকাশের নিচে থাকার পর ১৫ এপ্রিল তালা ভেঙে হলে ঢোকেন। কিন্তু হলে খাবার, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ তাদের দাবি পূরণের উদ্যোগ নেয়নি। তাই তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।

কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। তাদেরকে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। তারপরও আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক লোক আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে আন্দোলন আবার দানা বাঁধতে থাকে। গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবির ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা গত ১৫ এপ্রিল কুয়েটের ছেলেদের ৬টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোতে অবস্থান নেন। উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। রোববার উপাচার্যের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসার ঘোষণা দেন। সেই অনুযায়ী সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল থেকে অনশনে বসেছেন শিক্ষার্থীরা।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]