6451

03/19/2025 ই-কমার্স খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা জরুরি: এ. কে. আজাদ

ই-কমার্স খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা জরুরি: এ. কে. আজাদ

অর্থনীতি ডেস্ক

১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০০:৪১

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ বলেছেন, ই-কমার্স বাংলাদেশে নতুন। এ খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। খাতটি যেভাবে বাড়ছে এর মনিটরিং সেই হারে বাড়ছে না। আগামীতে এর আরও প্রবৃদ্ধি হবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিতে হবে।

শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। রাজধানীর চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে আয়োজিত ছায়া সংসদের আলোচনার বিষয় ছিল 'ই-কমার্স খাতে নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ'।

ছায়া সংসদে সরকারি দলের ভূমিকায় ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এবং বিরোধী দলের ভূমিকায় বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি ফর ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রসঙ্গে এ. কে. আজাদ বলেন, 'রাস্তঘাটসহ সবখানে ইভ্যালির বিজ্ঞাপন। আমি খোঁজ নিলাম, ইভ্যালি কী ব্যবসা করে। জানলাম, তারা ২০ লাখ টাকার পণ্য ১৮ লাখ টাকায় দেয়। অবাক করা ব্যবসা। এটা কী ব্যবসা যে দেড় মাসের মধ্যে ২ লাখ টাকা লাভ করা যায়! এখন দেখা যাচ্ছে, ইভ্যালির অ্যাকাউন্টে ৪০ লাখ টাকা আছে। কিন্তু তারা (ইভ্যালি) মানুষের কাছে এক হাজার কোটি টাকার দেনা। তাহলে বাকি টাকা কোথায় গেছে? নিশ্চয় পাচার করেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এ নৈরাজ্য বন্ধে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেটা হয়েছে অনেক দেরিতে। ই-কমার্সের প্রয়োজনীয়তা ও জনপ্রিয়তা যেভাবে বাড়ছে তাতে এ খাতের জন্য একটি আলাদা কর্তৃপক্ষ থাকা দরকার। এই ব্যবসা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে হচ্ছে। ফলে নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণও সহজ হবে। প্রত্যেকটি লেনদেন, অর্ডার মনিটরিং করতে হবে। কোথাও কোনো ব্যত্যয় হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। নতুবা ই-কমার্স খাত এগোতে পারবে না।

আইনের শাসনের অভাব তুলে ধরতে গিয়ে এ. কে. আজাদ বলেন, 'সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেশি। ভালো ব্যবসা করতে না পারার কারণে জনগণের করের টাকায় এসব ব্যাংকে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে। কিন্তু বিদেশি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ খুবই কম। বিদেশি ব্যাংক পারলে দেশের ব্যাংকগুলো কেন পারছে না। মূলত আইনের প্রয়োগ নেই। অনেকেই আইনকে নিজের মতো করে ব্যবহার করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এ. কে. আজাদ বলেন, 'ক্রেতারা সস্তায় পণ্য পেলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ অবস্থা থেকে বেরোতে হবে। দেশ সড়ক, ভবন, ব্রিজ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এগোচ্ছে। কিন্তু মানের দিক দিয়ে কতটা এগোচ্ছে সেটাও দেখতে হবে। মান নিশ্চিত করতে হলে যার যার অবস্থান থেকে সততা ও সচেতনতার সাথে কাজ করতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শুধু গ্রেপ্তার করলেই হবে না। তাকে চাপ দিয়ে কোথায় কী সম্পদ রেখেছে তা বের করতে হবে। তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অন্যায় কাজে সম্পৃক্ত না হয়।'

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি'র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশের কোম্পানি আইন, ট্রেড লাইসেন্স আইন বা আয়কর আইনে ই-কমার্স হিসেবে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়নি। বর্তমানে ই কমার্স ব্যাবসা তথ্য প্রযুক্তি সেবা হিসেবে নিবন্ধিত হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায় বাংলাদেশে, ই-কমার্স খাতে নিয়োজিত ৩০ থেকে ৪০% প্রতিষ্ঠান কোন ঘোষনা ছাড়াই ব্যবসা বন্ধ করে আত্মগোপন করেছে। সম্প্রতি আলোচিত ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এবং ইঅরেঞ্জের মালিক ও তার স্বামীকে গ্রেফতারের পর ই-কমার্সের প্রতারনার চিত্র আরো দৃশ্যমান হয়। ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জ ছাড়াও নিরাপদ ডটকম, ধামাকা শপিং ডটকম, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিড ডটকম ডটবিডি, কিউকুম নামক আরো অনেক প্রতিষ্ঠান গা-ঢাকা দেওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরা ভোক্তাদের বোকা বানিয়ে মায়াজাল ও প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বাহারি বিজ্ঞাপন, অস্বাভাবিক ও আকর্ষনীয় অফার, অবিশ্বস্য ডিসকাউন্ট, ক্যাশব্যাক ইত্যাদি প্রলোভনের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

ই-কমার্স খাতে নৈরাজ্য বন্ধ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা তৈরির মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ৭টি সুপারিশ করা হয়।

উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো; ই-কমার্স খাতের নৈরাজ্য বন্ধে নীতিমালা ও নির্দেশিকার পাশাপাশি আইন প্রণয়ন জরুরী। দুই. ই-কমার্স খাতে বিদ্যমান নৈরাজ্য অনুসন্ধান ও আইনী কাঠামো তৈরীর জন্য একটি কমিশন গঠন করা। তিন. জনগনের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনলাইন কেনাকাটায় বিভিন্ন প্রতারনায় অভিযুক্তদের দৃশ্যমান শাস্তি প্রদান ও গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা করা। চার. দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের বিদ্যমান আইনের আওতায় প্রতারিত গ্রাহকরা কিভাবে আইনী প্রতিকার পেতে পারেন তা জনগনকে অবহিত করা। পাঁচ. ইভ্যালি বা ই-অরেঞ্জসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যারা প্রতারিত হয়েছে তাদের সঠিক তালিকা ও অর্থের পরিমাণ জানার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি কমিটি গঠন করা। ছয়. প্রতারণার সাথে জড়িত কাউকে ই-ক্যাব বা অন্য কোন ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য না করা। সাত. ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতারনায় অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসক বসিয়ে তাদের সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়া।

ছায়া সংসদে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ই-কমার্স শুধু বাণিজ্য নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টিরও বড় উৎস। দেশের হাজার হাজার বেকার ই-কমার্সের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। করোনার মতো দুর্যোগময় সময়ে ই-কমার্স মানুষকে সেবা দিয়েছে। আর যারা ই-কমার্স নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার শাস্তিমূলক পদক্ষেপসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, নিরাপদ ডটকমসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কোম্পানির হোতাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, সোহেল রানা নামের একজন পুলিশ কর্মকর্তা ১১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। ইভ্যালির কাছে মানুষের পাওনা হাজার কোটি টাকা, কিন্তু তাদের কাছে আছে মাত্র ৪০ লাখ টাকা। ২০১২ সালে ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কিন্তু আজও গাছ বিক্রি হয়নি, মানুষ টাকা পায়নি। ইভ্যালিতে টাকা দিয়ে অনেকে এখন নিঃস্ব। এসব যুবকদের বাঁচাতে তাদের টাকা ফেরতের নিশ্চয়তা দরকার। তারা বলেন, ই-কমার্স খাতে সবার জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবসা করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা দরকার।

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিচারকদের রায়ে বিরোধী দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]