760

04/20/2024 ফেঁসে যাচ্ছে ইউনাইটেড হাসপাতাল!

ফেঁসে যাচ্ছে ইউনাইটেড হাসপাতাল!

সময়নিউজ ডেস্ক

১৪ জুন ২০২০ ১৮:১৯

রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনে করোনা আইসোলেশন সেন্টারে পাঁচ রোগীর মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছে পুলিশের তদন্ত কমিটি৷ রিপোর্টে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার কারণেই রোগীদের মৃত্যু হয়েছে৷

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ওই হাসপাতালের একটি রুম এবং বাইরে সংলগ্ন এলাকায় তাবু দিয়ে আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছিল। রুমে পাঁচটি বেডে ছিলেন পাঁচজন রোগী আর বারান্দার তাবুতে বসতেন চিকিৎসক ও নার্সরা। তাবুর এসিতে ‘স্পার্ক’ হয়ে আগুন লাগে। এতে এসির নীচে একটি বেডেও আগুন লাগে। সেখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার পর চিকিৎসক ও নার্স থাকলেও তারা বের হয়ে যান। কেউ রোগীদের রক্ষার চেষ্টা করেননি। সেখানে ছিল না আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থা।

গত ২৭ মে রাতে গুলশানে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালের মূল ভবনের বাইরে নির্মিত করোনা ইউনিটে আগুন লাগে। আর সেই আগুনে সেখানে চিকিৎসাধীন পাঁচজন রোগীই মারা যান।

‘‘তাবুতে একজন ডাক্তার ও দুইজন নার্স ছিলেন। কিন্তু আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তার চলে যান। এরপর নার্সরাও চলে যান,’’ বলেন তদন্তের সুপারভাইজিং কর্মকর্তা গুলশান জোনের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। ‘‘একজন ক্লিনার ইয়াসিন আরাফাত শুধু তার ফ্লোর পরিষ্কার করার ‘মপ' দিয়ে এসির আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এসি আগুনে গলে গলে বেডের উপর পড়লে সে তা সরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ভেতরের রুমে পাঁচ জন রোগীকে বের করে আনা বা উদ্ধারে কেউই কোনও চেষ্টা করেনি,’’ যোগ করেন তিনি।

কর্তৃপক্ষের গাফিলতির প্রমাণ মিলেছে

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুন লাগার দুই আড়াই মিনিটের মধ্যে তাবু ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। রোগীদের কক্ষেও সেই ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। এই ধোঁয়া হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী। কারণ সেখানে এসি পুড়ছিল, স্যানিটাইজার ছিল, অনেক ধরনের দাহ্য ও ধাতব পদার্থ ছিল। আর এই গ্যাসেই পাঁচজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

করোনা আইসোলেশন সেন্টারে আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি ছিল না অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার, যা থাকলে আগুন নেভানো সম্ভব হতো। কোনও ফায়ার হাইড্রেন্ট, হোস পাইপ, বালতি বা বালুও ছিল না। ছিল না হাসপাতালের কোনও অগ্নি নির্বাপক দলও।

ইউনাইটেড হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন সেন্টার এবং মূল ভবনের বাইরে যে তাবু নির্মাণ করা হয় তারও কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

করোনা আইসোলেশন সেন্টারে আগুন লাগে রাত ৯টা ২০ মিনিটে। ফায়ার সার্ভিস খবর পায় আরও ৩৫ মিনিট পর। তারা ১০ মিনিটের মধ্যেই চলে আসে। রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর তারা পাঁচ রোগীর মৃতদেহ উদ্ধার করে।

সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ফায়ার সার্ভিস আসার আগে আগুন নেভানো বা ওই পাঁচজন রোগীকে উদ্ধারের কোনও চেষ্টাই করা হয়নি। আমরা এই ঘটনায় চরম দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার প্রমাণ পেয়েছি, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’’

‘ফায়ার সার্ভিসেকেও অন্য রোগীরা খবর দিয়েছেন’

ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে আগুন লাগার সময় সেখানে ছিলেন ওই সেন্টারে ভর্তি রোগী ভেরন অ্যান্থনী পলের (৭৪) মেয়ে জামাই রোনাল্ড নিকি গোমেজ। তিনি সেন্টারের বাইরে ছিলেন। ওইদিনই বিকালে পরীক্ষায় তার শ্বশুরের করোনা নেগেটিভ আসায় তাকে করোনা সেন্টার থেকে হাসপাতালের বেডে নেওয়া বা ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। সেজন্যই তিনি গিয়েছিলেন। কিন্তু মূল ডাক্তার না থাকায় তিনি অপেক্ষা করছিলেন।

তিনি বলেন, ‘‘আমার সামনেই আগুন লাগে। কিন্তু কেউ রোগীদের উদ্ধার বা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেনি। আমি বারবার হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে অনুরোধ করলেও কাজ হয়নি। এমনকি ফায়ার সার্ভিসেকেও হাসপাতালের অন্য রোগীরা খবর দিয়েছেন। আমি চেষ্টা করেও আমার শ্বশুরকে বাঁচাতে পারিনি।’’

তিনি বলেন, ‘‘পাঁচজন রোগী হাসাপতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায়ই মারা গেছেন।’’ এ কারণে তিনি গুলশান থানায় ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলায় ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিচালক, চিকিৎসক, নার্স ও করোনা ইউনিটের অন্য কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে।

ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ এখন চুপ

তবে এই তদন্ত প্রতিবেদন ও মামলা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ইউনাইটেড হাসপাতালের যোগাযোগ ও ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ডা. শাগুফা আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘‘এখন যেহেতু বিষয়টি একটি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাই কোনও মন্তব্য করতে চাই না। বিষয়টি আমাদের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার দেখছেন।’’

কিন্তু আগুনে পাঁচ রোগীর মৃত্যুর পর তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের কোনও অবহেলা নেই দাবি করে বলেছিলেন, ‘‘আমরা রোগীদের বাঁচাতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছি।’’

সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী
যোগাযোগ: রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল: [email protected], [email protected]