তালেবান আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা দখলের পর শিক্ষকতার চাকরি হারিয়েছেন হাদিয়া আহমাদি নামে এক নারী শিক্ষক। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে আয়-রোজগার বন্ধ। বাধ্য হয়ে রাজধানী কাবুলের রাস্তায় মুচির কাজ করছেন তিনি। লক্ষ্য একটাই, কিছুটা অর্থ আয় করে পরিবার নিয়ে দিন কাটানো।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স এর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর গত আগস্টের মাঝামাঝিতেই চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন ৪৩ বছর বয়সী এই শিক্ষিকা। এ ঘটনায় নারী অধিকার রক্ষার বিষয়ে তালেবানের প্রতিশ্রুতি আরও একবার প্রশ্নের মুখে পড়লো।
তালেবান ক্ষমতায় আসার পরই আফগানিস্তানজুড়ে মেয়েদের স্কুলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এতে করে পরিবারের উপার্জনকারী তিনজনের মধ্যে প্রথম চাকরি হারান হাদিয়া আহমাদি। এর কয়েকদিন পরই তার স্বামী এবং সর্বশেষ তার মেয়েও চাকরি হারান। এমনকি টিউশন ফি দিতে না পারায় কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা বাদ দিতে বাধ্য হন তার এক ছেলে।
পাঁচ সন্তানের মা ৪৩ বছর বয়সী আফগান শিক্ষিকা হাদিয়া আহমাদি বলছেন, ‘যখন দেখি আমার সন্তানেরা খুবই ক্ষুধার্ত, তখন বাধ্য হয়েই রাস্তার পাশে বসে মুচির কাজ করতে শুরু করি আমি।’ তবে নিজের পরিবারের নাম বা পরিচয় প্রকাশ করেননি তিনি। অবশ্য পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের শাসনামলে হাদিয়া আহমাদির এক দশকের শিক্ষকতার চাকরি, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তার স্বামীর বাবুর্চির চাকরি এবং একটি সরকারি সংস্থায় এক মেয়ের চাকরির সুবাদে বেশ সচ্ছল ভাবেই দিন কাটাতে পারতেন আহমাদি। কিন্তু মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে সেসবই এখন ধূসর অতীতে পরিণত হয়েছে।
হাদিয়া আহমাদির পরিবার বলছেন, ‘আমরা এখন ক্ষুধায় আমাদের দিন পার করছি। আমাদের পরিবারে এমন কেউ নেই, যে কি না অর্থনৈতিকভাবে আমাদের সবাইকে সহায়তা করতে পারে।’
হাদিয়া আরও বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের খাদ্য যোগাতে অনেক বিধবা কাজ করতে চান। আবার অনেক নারীই আছেন, যারা নিজেদের স্বামীকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে কাজ করার অনুমতি চায়। আর তাই তালেবানকে অবশ্যই নারীদের বাইরে কাজের অধিকার দিতে হবে। নারীদের চাকরিও দিতে হবে। কারণ এখন কর্মসংস্থানের কোনো সুযোগই নেই।’
গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালেবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়। তবে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার কোনো নারীকে স্থান দেওয়া হয়নি। অবশ্য সরকার গঠন করলেও বিশ্বের কোনো দেশই তালেবান সরকারকে এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি না দেওয়ায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থা আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়। ফলে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট প্রতিদিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে।