শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

Rupali Bank


৯/১১ এবং পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ


প্রকাশিত:
১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:৪৭

আপডেট:
১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৯:০৩

ফাইল ছবি

দিনটি ছিল মঙ্গলবার। তারিখ ২০০১ সালের ১১ ই সেপ্টেম্বর । সকালের পরিস্কার আকাশ।  সময় তখন সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৬৭ বিমানটি ২০ হাজার গ্যালন জ্বালানী সাথে নিয়ে  নিউইয়র্ক সিটির ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর টাওয়ারে বিধ্বস্ত হল। ফলে ১১০ তলা আকাশচুম্বী ভবনটির ৮০ তলায় একটি জ্বলন্ত গর্তের সৃষ্টি হয়। তাত্ক্ষণিকভাবে নিহত হয় কয়েকশ মানুষ এবং উপরের তলাগুলোতে আটকে পড়ে  আরও কয়েকশজন।

সুউচ্চ এ ভবন ও এর পাশের একই আকারের ভবন দু'টি থেকে মানুষজন সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়। টেলিভিশনগুলি প্রথমে একে একটি বিচিত্র দুর্ঘটনা মনে করে এর সরাসরি সম্প্রচার করছিল। প্রথম বিমানটি আঘাত হানার ১৮মিনিট পরে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১৭৫ নামের  দ্বিতীয় বোয়িং ৭৬৭ বিমানটি আকাশে হাজির হয়। বিমানটি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দিকে খাড়া বাক নিয়ে দক্ষিণ টাওয়ারের ৬০তম তলায় ঢুকে পড়ে। এর ফলে একটি বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে  আশেপাশের ভবনগুলিতে এবং নীচের রাস্তায় জ্বলন্ত ধ্বংসাবশেষ ছিটকে পড়তে থাকে। তাত্ক্ষণিকভাবে এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে আমেরিকা আক্রান্ত হয়েছে।

লক্ষ লক্ষ লোক যখন নিউইয়র্কে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রবাহ দেখছিল, তখন আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৭৭ ওয়াশিংটন ডিসি'র শহরতলির উপরে চক্কর দিচ্ছিল। সকাল ঠিক ৯ টা ৪৫ মিনিটে পেন্টাগন সামরিক সদর দফতরের পশ্চিম পাশের দিকে আঘাত হানে বিমানটি। বিমানটির জ্বালানীর কারণে সৃষ্টি হওয়া আগুনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগনের বিশালা ভবনের একটি অংশের কাঠামো বিধ্বস্ত হয়।

সন্ত্রাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর স্নায়ু কেন্দ্রে আঘাত হানার ১৫ মিনিটেরও কম সময় পরে, যখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ টাওয়ারটি ধুলা এবং ধোঁয়ার বিশাল মেঘ সৃষ্টি করে ভেঙে পড়ে তখন নিউইয়র্কের ভয়াবহতা এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির দিকে মোড় নেয়।

সকাল ১০:৩০ মিনিটে টুইন টাওয়ারের উত্তর পাশের ভবনটি ধসে পড়ে। ইস্পাতের কাঠামোর উপর তৈরি আকাশচুম্বী এ ভবন প্রতি ঘন্টায় দুশ' মাইলের বেশি বাতাস এবং বড় ধরণের অগ্নিকান্ড প্রতিরোধের উপযোগি করে বানানো হয়েছিল। কিন্তু বিমানের জ্বালানীর কারণে সৃষ্টি হওয়া  প্রচণ্ড উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে তা তাসের ঘরের মতো ধসে যায়।

এদিকে, নিউজার্সির নেয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে ছেড়ে যাওয়ার প্রায় ৪০ মিনিট পরে চতুর্থ বিমান ইউনাইটেড ফ্লাইট ৯৩ বিমানটিকে  হাইজ্যাক করা হয়। বিমানটির আরোহীরা সেল ফোন ও এয়ারফোনের মাধ্যমে নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে ঘটে যাওয়া ঘটনা জানতে পারায় এটি রওয়ানা করতে দেরি করে।

বিমানটি কোনও বিমানবন্দরে ফিরছে না বলে হাইজ্যাকাররা ঘোষণা করার পর এর একদল যাত্রী বিদ্রোহ করার চেষ্টা করে। যাত্রীরা চার ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে এবং সন্দেহ করা হচ্ছে আগুন নেভানোর যন্ত্র দিয়ে ককপিটে আক্রমণ করে। এতে বিমানটি উল্টে যেয়ে ঘণ্টায় পাঁচশ' মাইল বেগে মাটির দিকে ধেয়ে এসে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে পশ্চিম পেনসিলভেনিয়ার শ্যাঙ্কসভিলের কাছের একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়।

এ বিমানটির হামলার লক্ষ্যস্থল জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় যে,  প্রেসিডেন্টের বাসস্থান হোয়াইট হাউস, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু ক্যাপিটল ভবন, মেরিল্যান্ডের ক্যাম্প ডেভিডে প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র বা সমুদ্র পাড়ের বেশ কয়েকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে এ বিমানটি দিয়ে হামলা চালাবার পরিকল্পনা ছিল।

চারটি উড়োজাহাজের যাত্রী ও  ১৯জন সন্ত্রাসী ছিনতাইকারীসহ ৯/১১-এর হামলায় মোট ২,৯৯৬ জন নিহত হয়। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি এবং পেনসিলভেনিয়ায় ঘটে যাওয়া এসব ঘটনায় ৭৮টি দেশের নাগরিক প্রাণ হারান ।

ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে দুটি বিমানের আঘাতের পর ২,৭৬৩ জন মারা যায়। এদের মধ্যে আরও রয়েছেন ৩৪৩ জন দমকলকর্মী ও প্যারামেডিকস, নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের ২৩ জন অফিসার এবং পোর্ট কর্তৃপক্ষের ৩৭ পুলিশ কর্মকর্তা। এসব কর্মীরা ভবনগুলি থেকে হতাহতদের উদ্ধার করতে এবং উপরের তলাগুলোতে আটকা পড়া অফিস কর্মীদের বাঁচাতে লড়াই করে যাচ্ছিলেন।

পেন্টাগনে ১৮৯ জন নিহত হয়। যার মধ্যে ছিল ১২৫ জন সামরিক কর্মী ও বেসামরিক নাগরিক এবং পেন্টাগনে আঘাত হানা আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৭৭বিমানটির যাত্রীদের ৬৪ যাত্রীর সবাই।

এ হামলার সময় ফ্লোরিডায় থাকা এবং পরে নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করা প্রেসিডেন্ট  জর্জ ডাব্লিউ বুশ সন্ধ্যা সাতটায় হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন। রাত ৯ টায় তিনি ওভাল অফিস থেকে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি বলেন, "সন্ত্রাসবাদী হামলা আমাদের সবচেয়ে বড় ভবনগুলির ভিত্তি কাঁপিয়ে দিতে পেরেছে, তবে তারা আমেরিকার ভিত্তিমূলকে স্পর্শ করতে পারেনি।"

এর পরিণাম হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক জবাবের উল্লেখ করে তিনি বলেন,"যেসব সন্ত্রাসীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে এবং যারা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে তাদের মধ্যে আমরা কোনও পার্থক্য করব না।"

প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, এসব ছিনতাইকারীরা হলেন সৌদি আরব এবং আরও কয়েকটি আরব দেশীয় সন্ত্রাসী। এতে আরও বলা হয়, আত্মগোপনকারী সৌদি নাগরিক ওসামা বিন লাদেনের সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়েদা তাদের অর্থায়ন করেছিল। সন্দেহ খুব দ্রুতই আল-কায়েদা এবং এর নেতা ওসামা বিন লাদেনের উপর যেয়ে পড়ে। তবে বিন লাদেন এ ধরণের কোনও ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।

২০০১ সালের ২০ শে সেপ্টেম্বর কংগ্রেস এবং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বুশ সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এতে তিনি বলেন, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ আল কায়েদা দিয়ে শুরু । তবে এখানেই তা শেষ না। বিশ্বের প্রতিটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে খুঁজে পাওয়া, থামানো এবং পরাজিত না করা পর্যন্ত এ যুদ্ধ শেষ হবে না। ”

যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ শুরু করে এবং তালেবানদের ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আফগানিস্তান আক্রমণ করে জবাব দেয়। কারণ তালেবান সরকার আফগানিস্তান থেকে আল-কায়েদা নেটওয়ার্ককে বহিষ্কার ও তাদের নেতা বিন লাদেনকে হস্তান্তর করার মার্কিন দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করে।

২০০১ সালের ৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী অপারেশন এন্ডুরিং ফ্রিডম নামে অভিযান শুরু করে, যার উদ্দেশ্য ছিল আফগানিস্তানের তালেবান শাসকদের হটিয়ে সেখানে থাকা ওসামা বিন লাদেনের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ধ্বংসকরা। দুই মাসের মধ্যেই মার্কিন বাহিনী তালেবানদের ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে। কিন্তু মার্কিন ও জোট বাহিনী প্রতিবেশী পাকিস্তান ভিত্তিক একটি তালেবান অভিযানকে পরাজিত করার চেষ্টা করায় যুদ্ধ অব্যাহত থাকে।

পশ্চিমা গণমাধ্যমের একটি অংশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালে বিন লাদেন এই হামলার দায় স্বীকার করেন।  এতে আল-কায়েদা এবং বিন লাদেন ইসরাইলের ব্যাপারে মার্কিন পক্ষপাতিত্ব, সোমালিয়ায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে হামলাকে সমর্থন, ফিলিপাইনের মরো মুসলমানদের স্বাধিকারের বিরোধীতা, লেবাননের মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইসরাইলি আগ্রাসনকে সমর্থন, চেচনিয়ার মুসলমানদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার নৃশংসতার প্রতি সমর্থন, মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম স্বার্থ বিরোধী আমেরিকাপন্থী সরকার বসানো, কাশ্মীরে ভারতীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে নিপীড়নে সমর্থন, সৌদি আরবে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি এবং ইরাকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপকে হামলার কারণ হিসাবে জানানো হয়।

প্রায় এক দশক ধরে গ্রেপ্তারী এড়ানোর পরে ২০১১ সালে পাকিস্তানে বিন লাদেনের অবস্থান চিহ্নিত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের এক সামরিক অভিযানে তিনি নিহত হন।

২০১১ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আফগানিস্তান থেকে বড় আকারের সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করার ঘোষণা দেন। ১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে সংঘাতের পর ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান  একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। তালেবানরা চুক্তিটি মেনে চললে ১৪ মাসের মধ্যে সমস্ত সেনা প্রত্যাহার করতে রাজি হওয়ার কথা জানিয়েছে মার্কিন ও তার ন্যাটো মিত্ররা।

২০২০ সালের ১৮ ই মে তারিখের হিসাব অনুযায়ী, ২০০১ সালে আক্রমণের পর থেকে আফগানিস্তানে ৩,৫০২ জন জোট সেনা নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের হিসাবে এর মধ্যে  ২,৩৫৫ জন মার্কিন সেনা।

আফগানিস্তানে ২০০১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চলা যুদ্ধে জঙ্গি, সৈন্য, বেসামরিক নাগরিকসহ এক লাখ ১১ হাজারেরও বেশি আফগান নিহত হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।

২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী আফগানিস্তান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ৯৭৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মূল বাজেট এবং যুদ্ধ ফেরতদের জন্য খরচ ধরলে এর পরিমান আরও বেশি হয়ে দাঁড়ায়।

অন্যদিকে, ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা তদন্তে ২০০২ সালের ২৭ নভেম্বর ৯/১১ কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিশন ২০০৪ সালের ২২ জুলাই তাদের  প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। তদন্ত প্রতিবেদনে ‌"৯/১১-এর আক্রমনগুলোর ঘটনার প্রধান পরিকল্পনাকারী" হিসাবে খালিদ শেখ মোহাম্মদের নাম উল্লেখ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ এবং পাকিস্তানের আইএসআই  ২০০৩ সালের ১ মার্চ  তাকে আটক করে।

 ৯/১১-সংশ্লিষ্ট যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত অন্যান্য চার অভিযুক্ত সন্ত্রাসীর সাথে গুয়ান্তানামো বে কারাগারে পাঠানোর আগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। খালিদ শেখ মোহাম্মদকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওয়াটার বোর্ডিং সহ নির্যাতনের যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা আন্তর্জাতিক গোষ্ঠির দৃষ্টি আকর্ষন করে। ২০১৯ সালের আগস্টে কিউবার গুয়ান্তানামো বে কারাগারের মার্কিন সামরিক আদালতের বিচারক ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার জন্য খালিদ  ও অন্য চারজনের বিরুদ্ধে বিচারের তারিখ নির্ধারণ করেন। ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি সে বিচার শুরু হওয়ার কথা।

ইরাক আক্রমণ

৯/১১-এর পরে বুশ প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা দল ইরাক আক্রমণের ব্যাপারে জোরালোভাবে বিতর্ক করে। ৯/১১-এর হামলার দিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড তার সহযোগীদের বারবার বলছিলেন: "এ ব্যাপারে সেরা তথ্যগুলো আগে জানাও। বিবেচনা করে দেখ, শুধু ওসামা বিন লাদেনকে না; একই সাথে সাদ্দাম হোসেনকে আক্রমন করার মত ভাল তথ্য পাওয়া যায় কিনা।" ইরাকে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে ২১ নভেম্বর রামসফেল্ডের সাথে কথা বলেন প্রেসিডেন্ট বুশ। এ সময় তিনি তাকে গোপনে ওপ্ল্যান ১০০৩ পরিকল্পনা পর্যালোচনার নির্দেশ দেন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ২৭ নভেম্বর রামসফেল্ড যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল টমি ফ্রাঙ্কসের সাথে বৈঠক করেন। সভার একটি বিবরণী থেকে জানা যায় যে, "কিভাবে শুরু করা হবে?" সে প্রশ্নসহ যুক্তরাষ্ট্র-ইরাক যুদ্ধের ন্যায্যতা প্রমাণে বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণের তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়। ৯/১১-এর হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ইরাকে আক্রমণ করার যৌক্তিকতা ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠে। কারণ, আল কায়েদা এবং সাদ্দাম হোসেনের মধ্যে কোনধরণের সহযোগীতার সম্পর্ক ছিল না।

প্রেসিডেন্ট  বুশ ইরাকে আগ্রাসনের জন্য জনগণের মতামত তৈরির জন্য ২০০২ সালের জানুয়ারিতে দেয়া  স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণের আশ্রয় নেন। এতে তিনি ইরাককে মন্দ চক্রের সদস্য উল্লেখ  করে বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সরকারকে বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র দিয়ে আমাদের হুমকি দেওয়ার অনুমতি দেবে না।" এর পাশাপাশি বুশ ইরাকের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র-ডব্লিউএমডি থাকাসহ অন্যান্য আরও গুরুতর অভিযোগ আনেন। যদিও বুশ প্রশাসন জানত যে, ইরাকের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র নেই এবং ইরাকে জৈবিক অস্ত্র রয়েছে কিনা সে সম্পর্কে কোনও সুস্পষ্ট তথ্য নেই। ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের মূল মিত্র ব্রিটেন ইরাকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে একমত হয়। তবে ফ্রান্স ও জার্মানি ইরাক আক্রমণ করার পরিকল্পনার বিরোধী ছিল। তারা আরও কূটনৈতিক আলোচনা ও অস্ত্র পরিদর্শন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিল। প্রয়োজনীয় বিতর্কের পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ‌'জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব ১৪৪১' নামের একটি সমঝোতা প্রস্তাব গ্রহণ করে। সাদ্দাম হোসেন ১৩ নভেম্বর জাতিসংঘ প্রস্তাবটি মেনে নেন। এবং জাতিসংঘের ইউএনএমভিক কমিশনের চেয়ারম্যান হ্যান্স ব্লিক্স এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক মোহাম্মদ এল বারাদির নির্দেশনায় পরিদর্শকরা ইরাকে ফিরে যায়। ২০০৩ সালের মার্চ মাসে ব্লিক্স বলেন যে পরিদর্শন কাজে অগ্রগতি হয়েছে এবং ডব্লিউএমডি’র কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল জাতিসংঘে উপস্থিত হয়ে প্রমাণ উপস্থাপন করেন যে ইরাক অপ্রচলিত অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে। ইরাকের সাথে আল-কায়েদার সম্পর্ক রয়েছে বলেও পাওয়েল প্রমাণ উপস্থাপন করেন।

২০০৩ সালের মার্চ মাসেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, ডেনমার্ক এবং ইতালি ব্যাপক জনসংযোগ এবং সামরিক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ইরাক আক্রমণ করার প্রস্তুতি শুরু করে।

যুক্তরাজ্যের এ যুদ্ধে যোগ দেয়ার ব্যাপারে ২০০৩ সালের ১৮ মার্চ হাউজ অব কমন্সে ব্যাপক বিতর্ক হয়। ভোটে যুদ্ধে যাবার সিদ্ধান্ত হলেও ১৮৪৬ সালের পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পার্লামেন্ট সদস্য এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকরেন। যুদ্ধে যাবার প্রতিবাদে মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেন তিন মন্ত্রী।

রাশিয়া, ফ্রান্স এবং জার্মানি এই যুদ্ধের বিরোধীতা করে। এদিকে, বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠী প্রকাশ্যে বিক্ষোভের আয়োজন করে। ২০০৩ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে ১২ এপ্রিলের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ৩৬ মিলিয়ন মানুষ ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রায় তিন হাজার বিক্ষোভে অংশ নেয়। এর মধ্যে ২০০৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিক্ষোভ ছিল বৃহত্তম।

২০০৩ সালের ২০ শে মার্চ বাগদাদ সময় ভোর ৫:৩৪ মিনিটে (১৯ মার্চ পাশ্চাত্য সময় রাত ৯:৩৪ মিনিটে) ইরাকে  “অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম”নামে হঠাৎ করেই সামরিক আগ্রাসন  শুরু হয়। তবে এর আগে কোন যুদ্ধের ঘোষণা দেয়া হয়নি।

সাদ্দামের ২৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ৯ এপ্রিল বাগদাদের পতন ঘটে। বাগদাদের হঠাৎ পতনের সাথে সাথে নজিরবিহীনভাবে লুটপাট সহ ব্যাপক নাগরিক বিশৃংখলা দেখা দেয়।

২০০৩ সালের ১ মে প্রেসিডেন্ট বুশ বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন থেকে দেয়া এক ঘোষণায় বলেন যে, ইরাকের জন্য বড় আকারের যুদ্ধ শেষ হচ্ছে।  তিনি বলেন, "২০০১ সালের ১১ ই সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ইরাকের যুদ্ধ অন্যতম বিজয়।"

বুশের ভাষণের পরে জোট বাহিনী লক্ষ্য করে যে বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের সেনাদের উপর বিক্ষুব্ধ আক্রমণ  ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। ২০০৩ সালের গ্রীষ্মে বহুজাতিক বাহিনী সাবেক সাদ্দাম সরকারের অবশিষ্ট নেতাদের গ্রেপ্তারের দিকে মনযোগ দেয়। সব মিলিয়ে সাবেক সরকারের তিন শতাধিক শীর্ষ নেতার  পাশাপাশি অসংখ্য কম গুরুত্বপূর্ণ কর্মী ও সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা ও বন্দি করা হয়।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, ২০০৩ সালের  ১৩ ডিসেম্বর তিকরিতের কাছের একটি খামার বাড়ি থেকে সাদ্দাম হোসেনকে বন্দি করা হয়। বিচারে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর  ঈদের দিন সকালে বাগদাদে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

২০১০ সালের ৩০ আগস্ট ওভাল অফিস থেকে দেয়া ভাষণে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ অভিযান বন্ধ  ঘোষণা করেন।

২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত ইরাকে ২০০৩ সালে শুরু হওয়া অভিযানে জোটের ৪,৮০৯ জন সেনা নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের হিসাব অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে ৪,৪৯১জনই মার্কিন সেনা।

ইরাকে ২০০৩ সাল থেকে শুরু হওয়া এ সংঘাতে দুই লাখ আট হাজার একশ' ৬৭ ইরাকি নিহত হয়েছে বলে জানানো হচ্ছে।

ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি ব্যয় ১.১ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের বলে বলীয়ান ইরান প্রতিবেশি ইরাকের শিয়াদের উপর নিয়ন্ত্রণ আরো জোরদার করে। এ পরিস্থিতিতে তেহরান এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর জের ধরে বাগদাদ সফরের সময় ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের অন্যতম শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা কাসেম সুলায়মানিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে শুরু হওয়া উত্তেজনার কারণে ইরাকি পার্লামেন্ট দেশটি থেকে সমস্ত বিদেশী সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করে। ২০২০ সালের আগস্টের মাঝামাঝি  ইরাক থেকে সমস্ত সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় ওয়াশিংটন।

৯/১১ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক সন্ত্রাসী আক্রমণ। ২০০১ সালের ১১ ই সেপ্টেম্বর আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১১ এবং ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ১৭৫ নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর এবং দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত হানে। মাত্র এক ঘন্টা চল্লিশ মিনিটের মধ্যে দু'টি টাওয়ারই ধসে পড়ে। ওয়াশিংটন ডিসিতে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৭৭ উড়ে যেয়ে আঘাত হানায় পেন্টাগনের পশ্চিম পাশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভেঙে ফেলে। সবশেষে, পেনসিলভেনিয়ায় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৯৩ বিমানটির যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের পরাস্ত করার পর তা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শ্যাঙ্কসভিলে শহরের কাছে একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়। সেদিন এসব ঘটনায় ২,৯৯৬ জন নিহত হয়।

কিন্তু এ নিয়ে অনেকগুলো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রয়েছে যাতে বলা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সেপ্টেম্বরের আক্রমনের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের পিছনে আল কায়েদা ছাড়াও অন্যান্য পক্ষগুলোর সংযোগ আছে। এই তত্ত্বগুলি শক্ত করে বলছে যে, সাধারণভাবে দেয়া ধারণার মধ্যে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে বা এমন সব প্রমাণ রয়েছে যা উপেক্ষা করা হয়েছিল। ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের দাবি অনুযায়ী, এ হামলার সম্ভাব্য উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে ছিল আফগানিস্তান এবং ইরাকে আক্রমণ করাকে যুক্তিসঙ্গত করে তোলা।

প্রথম বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ তত্ত্বগুলি ইউরোপে প্রকাশিত হয়। আক্রমণের ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ পরে, "ইনসাইড জব" তত্ত্বটি ফরাসি দৈনিক লা মঁদে প্রকাশিত হয়েছিল। হামলার ছয় মাস পরে থিয়েরি মায়সানের বই '৯/১১: দ্য বিগ লাই' ফ্রান্সে বেস্ট সেলারে পরিণত হয়। ২০০৩ সালে প্রকাশিত হয় জার্মানির সাবেক প্রতিমন্ত্রী আন্ড্রেয়াস ভন বাল্লো'র বই 'সিআইএ এন্ড সেপ্টেম্বর ১১' এবং জার্মান সাংবাদিক গেরহার্ড উইজনিউজকি'র বই 'অপারেশন ৯/১১'।

২০০৪ সালের মধ্যে ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলি যুক্তরাষ্ট্রে ভিত্তি পেতে শুরু করে। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলি মূলধারার গণমাধ্যমে জোরদার রুপ পেতে থাকে। হামলার পঞ্চম বার্ষিকীর ঠিক আগে মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলি ৯/১১ ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলির বাড়তি ধারার উপর নিবন্ধ প্রকাশ করে। আন্তর্জাতিক টাইম ম্যাগাজিনের একটি নিবন্ধে উল্লেখ করা হয় যে, "এটি কোনও প্রান্তিক ঘটনা নয়। এটি মূলধারার রাজনৈতিক বাস্তবতা।" ২০০৮ সালে ডেইলি টেলিগ্রাফ'র সংকলিত "সর্বশ্রেষ্ঠ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব" তালিকার শীর্ষে ছিল ৯/১১ ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলি ।

২০১০ সালে হামলার নবম বার্ষিকীর সামান্য আগে যে ভিডিওগুলি প্রকাশিত হয় সেগুলি "ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের জন্য নতুন খাদ্য যোগান দেয়"। ভিডিওগুলির মধ্যে অনেকগুলিতেই দেখা যায় যে, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের জোড়া টাওয়ার থেকে দূরে টাওয়ার সেভেন নামে আরেকটি আকাশচুম্বী ভবন ২০০১ সালের ১১  সেপ্টেম্বর প্রায় একই সময়ে  ধসে পড়েছিল। কোন হামলা ছাড়াই দূরের ঐ ভবনটিও কেন ধসে পড়লো তা নিয়ে রহস্য রয়েই গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বারবার করে জানিয়েছেন যে, জোড়া টাওয়ার ধসের আগে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা দেখতে পেয়েছেন। সেই দুর্ভাগ্যজনক দিনের ঘটনাগুলিকে ঘিরে আরও কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রয়েছে। যেমন-

১. বিমানের কারণে নয় বরং বিস্ফোরকের কারণে টুইন টাওয়ার বিধ্বস্ত হয়:

টুইন টাওয়ারে হামলার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সম্ভবত সব তত্ত্বগুলির মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত তত্ত্বটি একটি ইন্টারনেট চ্যাটরুমে  প্রকাশিত হয়। ইন্টারনেটে দেয়া এ পোস্টে লেখক  দাবি করেন যে, টুইন টাওয়ারের উত্তর এবং দক্ষিণ টাওয়ার ধসের সাথে নিয়ন্ত্রিত ধসের মিল রয়েছে। কারণ, ভবনগুলি এত তাড়াতাড়ি এবং নিখুঁতভাবে তাদের নিজস্ব ভিত্তির উপরে ধসে পড়েছে যা নিয়ন্ত্রিতভাবেই ধসানো সম্ভব। ধুলার মেঘ সরে যাওয়ার পরে তাত্ত্বিকরা সাক্ষীদের কাছ থেকে পাওয়া সাক্ষ্য আরও প্রমাণ হিসাবে উত্থাপন করেন। সাক্ষ্য অনুযায়ী, টাওয়ার ধসে পড়ার আগে  বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল এবং ভবনগুলির ধ্বংসাবশেষের  নীচের স্তর থেকে আগুন ছিটকে বের হচ্ছিল।

সরকারী প্রতিবেদনে বলা হয় যে, বিমানের আঘাত এবং আগুনের ফলে গুরুতর কাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির কারণে টাওয়ারগুলি ধসে পড়ে। তবে ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা যুক্তি দেন যে, ভবন ধসের মত তাপ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট সময় ধরে আগুন জ্বলেনি।

বিমানের জ্বালানীর তাপে ইস্পাত গলে যেতে পারে না-

ইস্পাত সাধারণত ১,৫১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গলে। কিন্তু বিমানের জ্বালানী ৪২৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৮১৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উৎপন্ন করে থাকে। সুতরাং স্টিল গলে যাওয়ার জন্য আগুন যথেষ্ট গরম না হওয়া সত্বেও কাঠামোগত কারণে টাওয়ারগুলি কীভাবে ভেঙে পড়তে পারে ?

টাওয়ার সেভেন এর রহস্য-

ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সেভেন ছিল একটি ৪৭ তলা আকাশচুম্বী ভবন যা টুইন টাওয়ার ভবন দু'টি ধসে পড়ার কয়েক ঘন্টা পরে ধসে পড়ে। যখন টাওয়ার সেভেন ধসে পড়ছিল তখন সেদিন সাধারণ মানুষসহ বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এ ভবনটি নিয়ন্ত্রিতভাবে ধসিয়ে দেয়া হয়েছে। ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের মতে এটি আরেকটি প্রমাণ যে, ৯/১১ একটি অভ্যন্তরীণ কাজ ছিল।

২.  ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে পেন্টাগনে:

প্রাথমিক ভিডিও চিত্র এবং ঘটনাস্থল থেকে তোলা ছবিতে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খুব বেশি প্রমাণ দেখা যায় না। তাত্ত্বিকরা জানান যে, পেন্টাগনকে ফ্লাইট ৭৭ আঘাত করেনি, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা মানুষবিহীন ড্রোন দ্বারা আক্রমন করা হয়েছিল। তারা যুক্তি দেন যে, ছবি অনুযায়ী একটি যাত্রীবাহী বিমানের আঘাতে পেন্টাগন ভবনের যে কাঠামাগত ক্ষতি হয়েছে তা সামান্য বলেই মনে হয়। তারা প্রশ্ন তোলেন যে, একজন শৌখিন বিমান চালকের ছিনতাই করা যাত্রীবাহী বিমান কি করে বিনা বাধায় নিখুঁতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে আঘাত হানলো?

একেকটি বোয়িং ৭৫৭ বাণিজ্যিক বিমান ১২৫ ফুট চওড়া ও ১৫৫ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। কিন্তু পেন্টাগনে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি দেয়ালে মাত্র ১৬ ফুট উচু ও ১২ ফুট চওড়া গর্ত সৃষ্টি করে ভিতরে প্রবেশ করে। এটি কি করে সম্ভব হলো?

ধ্বংসাবশেষ কোথায়?-

অনেকেই পেন্টাগনের পাশের দেয়ালে বিমানের আঘাত হানার পরে তোলা সরকারী ছবিতে ধ্বংসাবশেষের অভাবের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। বিমান বিধ্বস্ত হলে সাধারণত বিশাল পরিমাণে ধ্বংসাবশেষ সৃষ্টি হয়। কিন্তু একটি বড় বাণিজ্যিক বিমান কোনও বিল্ডিংয়ে আঘাত হানার পর কিভাবে খুব সামান্যই ধ্বংসাবশেষ সৃষ্টি করে?

৩. ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৯৩ গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে:

সরকারী প্রতিবেদন অনুসারে, ফ্লাইট ৯৩-এর যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে এবং এ লড়াইয়ের পরে বিমানটি পেনসিলভেনিয়ার শ্যাঙ্কসভিলে একটি খোলা মাঠে বিধ্বস্ত হয়। পেন্টাগনে আক্রমণের সাথে মিল দেখিয়ে তাত্ত্বিকরা বলছেন যে, একটি এয়ারলাইনারের আকারের তুলনায় শ্যাঙ্কসভিলের মাঠে বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ ছিল খুব সামান্য। তাই ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা যুক্তি দেন যে, বিমানটি সামরিক বাহিনীর গুলির শিকার হওয়ায় তার ধ্বংসাবশেষ বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

ধ্বংসাবশেষ ইন্ডিয়ান লেকে-

পেনসিলভেনিয়ার শ্যাঙ্কসভিলের বাইরে ফ্লাইট ৯৩ বিধ্বস্ত হলেও দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ছয় মাইল দূরে ইন্ডিয়ান লেকে কেন ধ্বংসাবশেষ এবং মানবদেহগুলি ভাসতে দেখা গেল? এটি প্রমাণ করে যে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগেই সম্ভবত তা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে আকাশেই টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

৪. ছিনতাইকারীদের উপর দোষারোপের খেলা:

আমেরিকান সূত্রের ভিত্তিতে বিবিসি বিমান ছিনতাইকারীদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করে। নিহতদের তালিকায় থাকা এসব লোকদের কয়েকজনকে পরে জীবিত আছে বলে জানা যায়। বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা যে ভুয়া  তার প্রমাণ হিসাবে ৯/১১ ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা এ ঘটনা তুলে ধরেন। ছিনতাইকারীদের নাম-পরিচয় নিয়ে এ ভুল-ভালের ব্যাপারে বিবিসি প্রশ্ন তুললে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা জানায় যে, নিহত ১৯ ছিনতাইকারীর পরিচয়ের ব্যাপারে তারা নিশ্চিত এবং অন্যান্য তদন্তে এসব নাম পরিচয় নিয়ে কোন সন্দেহ প্রকাশ করা হয়নি। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকাও এ ভুল নাম-পরিচয়ের ঘটনা স্বীকার করেছে।

৫. যুক্তরাষ্ট্র সরকার হামলার বিষয়ে জানত:

ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের মধ্যে একটি সাধারণ বিশ্বাস হ'ল,নর্থ আমেরিকান এরোস্পেস ডিফেন্স কমান্ড (নোরাড) ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের যুদ্ধবিমানকে বসে থাকার নির্দেশ দিয়ে ছিনতাই হওয়া বিমানগুলিকে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়। আমেরিকার কাছে সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমান বাহিনী থাকা সত্বেও সেদিন তারা কোনও বিমান আটকাতে ব্যর্থ হয়। তাত্ত্বিকরা বিশ্বাস করেন যে, এ ঘটনা আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সরকারী ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত। উদাহরণস্বরূপ, সাবেক ব্রিটিশ পরিবেশ মন্ত্রী এবং টনি ব্লেয়ার সরকারের সদস্য মাইকেল ম্যাকার বলেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র জেনে বুঝে আক্রমণের ঘটনা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়।

তারা কেন এমন কাজ করবে? ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা বিশ্বাস করেন যে, সরকার এই হামলাগুলি তেল স্বার্থ রক্ষায় ইরাক ও আফগানিস্তানে আক্রমণকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণের জন্য ব্যবহার করতে চেয়েছে।

৬.সরকারপক্ষীয় ব্যবসায়ীরা আক্রমণ সম্পর্কে জানত:

হামলার ঘটনার কয়েকদিন আগে শেয়ার বাজারে আমেরিকান এবং ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের শেয়ার বেচাকেনার ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয় যা সাধারণত বিমান ছিনতাই হওয়ার ক্ষেত্রে নেয়াহয়ে থাকে। কিছু তাত্ত্বিক মনে করেন যে,  এসব ব্যবসায়ীদের এ হামলার ব্যাপারে আগাম বার্তা দেয়া হয়েছিল এবং এ বেদনাদায়ক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা আগেই অর্থ কামিয়ে নিয়েছিল। বীমা কোম্পানীগুলোও এ ক্ষেত্রে বেআইনী ব্যবসা লক্ষ্য করে।

৭. ৯/১১ হামলার পেছনের খারাপ উদ্দেশ্য:

১৯৮৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ইতালির প্রেসিডেন্ট থাকা ফ্রান্সেসকো কোসিগা বলেছিলেন যে, ইতালিয়ান মধ্য-বামপন্থীদের সাধারণভাবে জানা যে ৯/১১-এর হামলাগুলি সিআইএ এবং মোসাদের যৌথ অভিযান ছিল। হামলার পেছনে আরও বিভিন্ন উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়। যার মধ্যে রয়েছে: যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরাইলের শত্রুদের আক্রমণ করার জন্য উদ্বুদ্ধকরা, ফিলিস্তিনিদের সাথে ইসরাইলের বর্বর আচরণ থেকে জনসাধারণের দৃষ্টি ঘুরানো, ইহুদিবাদীদের হাতে বিশ্বব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে সহায়তা করা এবং আমেরিকানদের ইসরাইলকে সমর্থন করার জন্য প্ররোচিত করা।

জার্মান সরকারের সাবেক মন্ত্রী আন্ড্রেস ভন বলো যুক্তি দিয়েছিলেন যে, আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধকে ন্যায়সঙ্গত করে তুলতেই ৯/১১ মঞ্চস্থ করা হয়। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছিলেন যে, তার কাছে 'দৃঢ় প্রমাণ' রয়েছে যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্র নকল এ হামলার ঘটনা সাজিয়েছিল।

অ্যালেক্স জোন্স এবং অন্যান্য ব্যক্তিত্বদের মতে  বিশ্বব্যাপী সরকার গঠনের লক্ষ্যে  ব্যাংকিং, কর্পোরেট, বিশ্বায়ন এবং সামরিক গোষ্ঠির বৈচিত্র্যময় স্বার্থের কারণে ৯/১১ ঘটানো হয়েছিল। তাদের মাধ্যমে নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার বা নয়া বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে ৯/১১ ঘটানো হয়।

 

আবু তাহির মুস্তাকিম
গণমাধ্যম কর্মী
[email protected]



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top