বুধবার, ১২ই মার্চ ২০২৫, ২৮শে ফাল্গুন ১৪৩১


শিক্ষা ও অর্থনীতিতে নারীরা এগোচ্ছে কীভাবে?


প্রকাশিত:
১২ মার্চ ২০২৫ ১১:০১

আপডেট:
১২ মার্চ ২০২৫ ১৭:৫২

ছবি সংগৃহীত

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের এক অন্যতম রোল মডেল। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এ যুগে মানবসম্পদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে আমাদের বিশাল জনসংখ্যা যাকে পুঁজি করে আমরা জনসংখ্যাকে পরিণত করেছি জনসম্পদ তথা মানব সম্পদে। আর এই বিশাল জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক অংশ হলো নারী।

বিশ্বের যে দেশগুলোই উন্নত দেশের কাতারে দাঁড়িয়েছে তারা সবাই নিজেদের পথ সুগম করেছে নারী ক্ষমতায়নের মাধ্যমে। বর্তমান বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমান অবদান রাখছে দেশের অর্থনীতিতে।

একসময় সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কারজনিত বাধার কারণে যেসব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ চিন্তাও করা যেত না সেসব ক্ষেত্র এখন সবার জন্য উন্মুক্ত। ফলশ্রুতিতে দেখা যায় নারীরা স্বাধীনভাবে এসব ক্ষেত্রে অংশ নিয়ে নিজেরা যেমন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন হলো দেশের উন্নয়ন কাজে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ। বর্তমানে প্রতিটি কাজে নারীর অংশগ্রহণ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, ব্যবসা—বাণিজ্য, আইসিটি ইত্যাদিসহ অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অবদান বাড়ছে।

নেপোলিয়ন বলেছেন, ‘আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেবো।’ বর্তমান বাংলাদেশে নারী শিক্ষার হারও অনেক বেশি আশাব্যঞ্জক। লীলা নাগ, বেগম রোকেয়া, নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী প্রমুখের দেখানো পথ ধরে বাংলাদেশে নারী শিক্ষায় অনেক এগিয়ে গেছে।

প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছেলে শিশুর চেয়ে মেয়ে শিশুর ভর্তির হার বেশি এবং একই সাথে বিগত কয়েক বছরের মাধ্যমিক সমমান ও উচ্চমাধ্যমিক সমমান পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় সব শিক্ষাবোর্ডেই মেয়েদের ফলাফল তুলনামূলক ভালো। বাংলাদেশে স্বাধীন হওয়ার পর সবচেয়ে দীর্ঘসময় দেশ শাসনের অভিজ্ঞতাও রয়েছে নারীদেরই। উচ্চশিক্ষা স্তরেও সমান তালে এগিয়ে চলছে আমাদের নারীরা।

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, শ্রমবাজারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলোর একটি চিত্র পাওয়া যায় যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ। সেখানে দেখা যায়, শহরের নারীর তুলনায় গ্রামীণ নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার বেশি।

পোশাক খাতের পরই প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সংসার পরিচালনার পাশাপাশি তারা চাকরি কিংবা ব্যবসা করছে। এছাড়া ঘরে বসে আজ ফ্রি-ল্যান্সিং আর ই-কমার্সের যুগে নারীরা ব্যবসা করছেন। জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, ২০১০ সালে যেখানে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ছিল ১৬ দশমিক ২ লাখ সেখানে ২০১৬-২০১৭ সালে এসে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৬ লাখ।

অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনাকারীর অর্ধেকই নারী উদ্যোক্তা। এই উদ্যোক্তারা নিজের পণ্য বিক্রির মাধ্যমে মাসে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। ফেসবুকে নারী উদ্যোক্তারা যুক্ত হয়ে নতুন নতুন প্ল্যাটফর্ম খুলছে। অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারাও। আবার কৃষি খাতেও নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখ করার মতো।

আগে একসময় নারীদের শ্রমবাজার বলতে পোশাক খাতকেই ধরা হতো, বর্তমানে এই খাত ছাড়াও হোটেল, রেস্টুরেন্ট, যোগাযোগ খাত, রিয়েল স্টেট সেবা, টেলিকমিউনিকেশন, ব্যাংকিং, ইনস্যুরেন্স খাতসহ সবখাতেই নারীর অংশগ্রহণ আশানুরূপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নারীরা আজ সর্বত্রই নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। একীভূত আর সাম্যের ভিত্তিতে সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশে পুরুষ আর নারীদের সমান অংশগ্রহণের সুযোগ বিদ্যমান থাকার দরুণ নারীরা তাদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলছেন প্রতিনিয়ত। বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধির কারণে পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পাচ্ছে। নারীর শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতির কারণে কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণও বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ যখন একই পদবিতে কাজ করে তখন নারী-পুরুষের আয়ের বৈষম্য নেই বললেই চলে।

আজকের এই দিনে সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার সংক্রান্ত শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নারী তার বিস্ময়কর বহুরূপী কর্মগুণ প্রতিভা প্রতিনিয়তই প্রকাশ করে চলছে। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা আর অতি ধর্মীয় গোঁড়ামির অন্তরালে এককালে বিশ্বাস ছিল, নারী কোনোদিন ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। তার একমাত্র কাজ সন্তান লালন-পালন আর গৃহকর্মীর একপেশে দায়িত্ব পালন।

বাইরের উৎসবে অংশগ্রহণ ছিল অলীক কল্পনা। ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে আমাদের মা, বোন, কন্যা, জায়ারা এগিয়ে চলেছেন সর্বত্রই। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বেই চলছে নারীদের জয় জয়কার, যা সাম্যতার স্বরূপ প্রকাশ করছে।

স্বাধীনতার এতদিনে সব বাধা পেরিয়ে নারী এগিয়ে যাক তার আপন মহিমায় এই হোক আমাদের প্রত্যাশা। স্যালুট জানাই সব নারীদের প্রতি।

সৈয়দ মো. সিয়াম ।। সহকারী অধ্যাপক, শিক্ষা বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top