ঈদযাত্রায় ই-টিকিট : কিছু কথা
প্রকাশিত:
২২ মার্চ ২০২৫ ১০:৫০
আপডেট:
২৪ মার্চ ২০২৫ ১৮:২৪

ছবি সংগৃহীত
প্রায় দেড় দশক আগে ঈদে বাড়ি যাওয়ার, আবার বাড়ি থেকে ফেরার জন্য বাস, ট্রেন ও লঞ্চের টিকিট সংগ্রহের ক্ষেত্রে ভোগান্তির শেষ ছিল না। ঈদে বাড়ি যাওয়ার ভোগান্তির মধ্যে অন্যতম ছিল এই টিকিট সংগ্রহের ঝক্কি-ঝামেলা। ভোগান্তি ছিল আকাশপথের টিকিট কেনার ক্ষেত্রেও। অনলাইনে দেশের মানুষ বিভিন্ন সেবা পেতে শুরু করেছে আর তার বিকাশও ঘটছে তাড়াতাড়ি। অনলাইনে সেবা পাওয়ার বিষয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ছেই। আর বাড়ছে ভরসা। এখনতো ঘরে বসেই টিকিট কাটা যাচ্ছে অনলাইনে।
প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটছে ধারাবাহিকভাবে। গাড়িচালক তার ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করতে পারছেন ঘরে বসেই। মিলছে ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা। জরুরি সেবার জন্য আগের মতো ছুটতে হচ্ছে না অফিসে অফিসে। অনলাইন বিভিন্ন সেবা দেশের পরিবহন খাত সহজ করেছে।
আগের রাতে রেলস্টেশনে সারিবদ্ধ ভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হতো। বাস কাউন্টারে ভোর থেকে লেগে যেত লাইন। জনভোগান্তির অন্তহীন ওই অবস্থার লাগাম টেনে ধরে অনলাইন টিকিটিং ব্যবস্থা। ঘরে, অফিসে বা অন্য কোনো জায়গায় বাসে এই টিকিট সংগ্রহ করা সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে। এটা স্বীকার করতে হবে যে, তথ্যই শক্তি। তথ্য না জানলেই বহু বিপদ, বহু ভোগান্তি চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। কিন্তু অনেকে এখনো অনলাইনে কীভাবে টিকিট সংগ্রহ করতে হয় সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখেন না। না জানার কারণে, অভিজ্ঞতার অভাবে মনের মধ্যে ই-টিকিটিং নিয়ে তাই ভয়-বিভ্রান্তি কাজ করে। তৈরি হয় বিব্রতকর অবস্থা।
এবার ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য ১৪ মার্চ থেকে অনলাইনে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিনই সকাল ৮টা থেকে আধ ঘণ্টার মধ্যে ১৫ হাজার ৭৭৩টি টিকিটের বিপরীতে ২০ লাখ হিট পড়েছে বলে জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৭ মার্চ ভ্রমণের জন্য অগ্রিম টিকিট কাটতে ১৭ মার্চ সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ১ কোটি ৫০ লাখ হিট বা টিকিট কাটার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০ মার্চে ৩০ মার্চের টিকিট বিক্রির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ট্রেনে আগাম টিকিট বিক্রির জন্য অনলাইনে যুদ্ধ। রেলে শতভাগ টিকিট এবারও অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। ফলে রেলস্টেশনের কাউন্টারে ছিল না ভিড়, ছিল না ভোগান্তি।
২০১২ সালের ২৯ মে সরকারিভাবে চালু হয় অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার ব্যবস্থা। এক যুগের ব্যবধানে বাংলাদেশ রেলওয়ের ডিজিটাল টিকিট পদ্ধতি পথ পরিক্রমা আরও সহজ হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে সর্বোচ্চ ১০ দিন আগের ট্রেনের টিকিট কেনা যায়।
প্রথমেই দরকার হবে সাইটটিতে নিবন্ধন করা। অভিজ্ঞরা জানেন, এই পর্যায়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নাম্বার দিতে হয়। এরপর স্টেশন, ভ্রমণের তারিখ, ট্রেনের শ্রেণি নির্বাচন করতে হয়। এখানে বিদ্যমান আসনের ভিত্তিতে প্রদর্শিত আসনের তালিকা থেকে এক বা একাধিক আসন বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে।
দাম পরিশোধের (পেমেন্টের) পদ্ধতিতে রয়েছে ক্রেডিট/ডেবিট বা বিকাশের মতো জনপ্রিয় মোবাইল পেমেন্ট গেটওয়ে। টিকিটের দাম পরিশোধ শেষে প্রাপ্ত ই-টিকিটের প্রিন্ট নিয়ে রেল স্টেশনে পৌঁছাতে হয়। ওয়েবসাইট ছাড়াও ট্রেনের টিকিট কেনার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব অ্যাপ 'রেল সেবা' আছে অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন উভয় প্ল্যাটফর্মের জন্য।
তবে বাংলাদেশ রেলওয়ের আগেই ২০১০ সালে বাংলাদেশ বিমানের আগাম টিকিট পাওয়ার সুবিধা শুরু হয়। সংস্থার ওয়েবসাইটে গিয়ে ঘরে বসেই সম্পন্ন করা যায় টিকিট বুকিংয়ের কাজ। এখানে গন্তব্য, তারিখ, শ্রেণি নির্বাচন, ই-মেইল আইডি ও মোবাইল নম্বরসহ যাত্রীর বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়।
পরে ডিজিটাল ব্যাংকিং বা মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে যে কোনোটির মাধ্যমে পরিশোধ করা যায় টিকিটের মূল্য। অবশেষে ই-টিকিট প্রদান করা হয় যাত্রীদের ই-মেইলে। এছাড়াও আছে বিমান অ্যাপ।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবহন মাধ্যমগুলোর ই-টিকিট পেতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে ‘সহজ’ নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি। ট্রেনের টিকিটগুলো বিআরআইটিএসের (বাংলাদেশ রেলওয়ে ইন্টিগ্রেটেড টিকিটিং সিস্টেম) সঙ্গে যৌথভাবে ইস্যু করে এ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৪ সাল থেকে ‘সহজ’ বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও বিমানে একক মঞ্চের আওতায় সেবা দেওয়া শুরু করে। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রতিটি পরিবহন মাধ্যমের জন্য আলাদাভাবে রওনা হওয়ার স্থান, গন্তব্য ও যাত্রার তারিখ দেওয়ার পদ্ধতি রয়েছে। এজন্য টিকিট সংগ্রহকারীকে সবসময় ব্যবহার করা হয় এমন ই-মেইল ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সরবরাহ করতে হয়। মোবাইল বা ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে অর্থ প্রদানের পর টিকিটের সফট কপির লিংক পাওয়া যাবে ই-মেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা যাবে স্মার্টফোন থেকেও।
এছাড়াও অনলাইনে টিকিট সেবার জন্য গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি গোজায়ান ২০১৭ সাল থেকে দেশের ভেতরের ও বাইরের এয়ার ফ্লাইট কেন্দ্রিক টিকিট সেবাদান শুরু করে। যদিও ই-টিকিটের পাশাপাশি এটি হোটেল, ট্যুর এবং ভিসা সংক্রান্ত সুবিধাও প্রদান করে থাকে।
এখান থেকে টিকিট অর্ডার করতে হলে প্রথমে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এর অধীনে টিকিট প্রাপ্তিসহ ফ্লাইটের যাবতীয় আপডেট পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটে ফ্লাইট সার্চের পাশাপাশি একাধিক ফ্লাইটের মধ্যে তুলনা করারও ফিচার রয়েছে। ব্যাংকিং ও মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেমগুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলোই থাকায় সব শ্রেণির গ্রাহকরাই অকপটেই ব্যবহার করতে পারেন।
২০১৪ সাল থেকে ‘শেয়ার ট্রিপ’ নামের প্রতিষ্ঠান দেশে প্রথমবারের মতো একযোগে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য অনলাইন টিকিট দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করে। এছাড়াও ফ্লাইট এক্সপার্ট ২০১৭ সালের ১ মার্চ নিয়ে আসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে টিকিটিং পদ্ধতি। ঘরে বসে বাসের টিকিট সংগ্রহের জন্য ‘রবি আজিয়াটা’র টিকিটিং পোর্টাল বিডিটিকিটস, বাইটিকিটস, যাত্রী, পরিবহনডটকমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম টিকিটিং সেবা প্রদান করছে।
যত প্রতিষ্ঠান বাড়ছে তত সেবা পাওয়ার সুযোগ বাড়বে। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করছে কিনা, তাদের সেবাদানের মান কেমন—এসব বিষয়ে মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা দরকার। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ সড়ক পরিবহন খাতের বিভিন্ন দিক দেখভাল করে।
অনলাইনে বাসের টিকিট বিক্রির বিষয়টি তারা মূল্যায়নের আওতায় আনতে পারে। এভাবে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা এককভাবে বা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কর্তৃপক্ষও গঠন করতে পারে সরকার।
পার্থ সারথি দাস ।। সাংবাদিক
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: