শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

Rupali Bank


করোনা প্রতিরোধে কেন জনবিচ্ছিন্নতা এত গুরুত্বপূর্ণ?


প্রকাশিত:
১৮ মার্চ ২০২০ ১৬:৫৭

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:১৮

ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নভেল করোনা ভাইরাস নিয়ে সতর্কতামূলক পোস্ট দিয়েছেন 'ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি এন্ড রাইটস' এর চেয়ারম্যান ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন। সময় নিউজের পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

মনটা ভাল নেই। বোধ হয় মানসিক সমস্যায় ভুগছি। না হলে কোথাও অনেক মানুষের ভিড় দেখলে কেন এত চমকে উঠি? কেন আমার ভয় করে? না, নিজের জন্য নয়, ভিড়ের ওই মানুষগুলোর জন্য। ওরা কি জানে না, এই মুহূর্তে ভেড়ের মধ্যে নভেল করোনা ১৯ ভাইরাস ঘোরাঘুরি করে?

থাক, এসব সিরিয়াস কথা বলে আর কী হবে? তার চেয়ে বরং একটা গল্প বলি। ‘হাওয়ায় ভাসি’ গ্রামের একবার আক্কাস আলী সাহেবের করোনাজনিত কোভিড অসুখ হলো। তাকে দেখতে দশজন মানুষ এলো। রোগীর সাথে হাত মেলালো, পাশে বসে ঘণ্টাখানেক আড্ডাও দিল।

সেই দশজনের মধ্য ছয়জনের শরীরে করোনাভাইরাস ঢুকলো, তার মধ্যে দুই সপ্তাহের মধ্যে চারজনের কোভিড রোগ দেখা দিল। আক্কাস আলীর বাড়ি থেকে শরীরে করে যে চারজন করোনাভাইরাস নিয়ে এলো, তাদের কাছ থেকে পেলো আরো একুশ জন। এভাবে চক্রাকারে বাড়তে থাকলো কোভিড রোগীর সংখ্যা। পাঁচ সপ্তাহ পরে দেখা গেলো হাওয়ায় ভাসি গ্রামে কোভিড রোগীর সংখ্যা ৮৭ জন।

এবার ‘বুঝে চলি’ গ্রামের গল্প বলি। সেখানে মজিদ সাহেবের শরীরে নভেল করোনা ১৯ ভাইরাস পাওয়া যাবার পর থেকেই তিনি নিজেকে ঘরের একটা রুমে স্বেচ্ছা বন্দী করে ফেলেছেন। তিনি কারো সাথে দেখা করেন না, প্রয়োজনে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। সময় মত খাবার দরজায় রেখে যায়, তিনি নিয়ে খান। প্রায় সময় বই পড়েন, মাঝেমধ্যে টিভি দেখেন। এর মধ্যে হাল্কা জ্বর আর কাশি হল। দুসপ্তাহ পরে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। সেই গ্রামে আর কারো শরীরে এখন পর্যন্ত আর করোনা ১৯ ভাইরাসবাহী কাউকে পাওয়া যায়নি।

নভেল করোনা ১৯ ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে। উপরের গল্পে আমরা দেখলাম, স্পর্শের অভাবে ‘বুঝে চলি’ গ্রামে মজিদ সাহেবের শরীর থেকে ভাইরাসটি আর কারো শরীরে যেতে পারেনি। ফলে ওখানে আর কারো শরীরে এই ভাইরাসটি পাওয়া যায়নি।

চীনের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, প্রশাসন কী কঠোর ভাবে মানুষজনকে তাদের ঘরের ভিতরে থাকা নিশ্চিত করেছে। বাইরের সকল প্রকার জনসমাবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। ফলশ্রুতিতে, দুমাসের মধ্যেই তারা কোভিড ১৯ রোগের মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। হিসেবটা খুব সোজা। ভাইরাসটি যখন একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে যেতে পারবে না, তখন রোগও আর ছড়াবে না। যতবেশী মানুষের কাছাকাছি অসার সুযোগ থাকবে, তত বেশী করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। বাংলাদেশের মত দেশে তো এর কোন বিকল্পই নাই।

বাংলাদেশে নভেল করোনা ১৯ ভাইরাস শনাক্ত করণের সুযোগ খুবই সীমিত। এই মুহূর্তে প্রতিদিন একশ টেস্ট করার সামর্থ্য আছে বলে মনে হয় না। যদি কোভিড ১৯ রোগটি ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেবার সামর্থ্য আমাদের নাই। তবে যেহেতু করোনা পরীক্ষারই তেমন সুযোগ নাই, সেহেতু আমরা হয়তো জানবোও না, কোভিড কি না? এই বাস্তবতায়, আমাদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র হলো, জনবিচ্ছিন্নতা। নতুন নতুন মানুষ না পেলে ভাইরাস কাকে আক্রমণ করবে? আর আক্রমণ করতে না পারলে তো অসুখও আর ছড়াবে না। এভাবে দ্রুততর সময়ে নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে ভাইরাসের সংক্রমন। সংক্রামক ব্যাধির সংক্রমন রোধে এটি একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি।

এখন কথা হলো, আমরা এর গুরুত্ব বুঝব কী না এবং বুঝলেও পালন করব কি না? সরকার চাইলে আইনের প্রয়োগ করেও জনবিচ্ছিন্নতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

 


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top