রবিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৫, ৬ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


শহীদ ২০ পরিবারকে জামায়াতের অনুদান

দলগুলো শহীদ পরিবারের জন্য কী করেছে, প্রশ্ন দক্ষিণ জামায়াত আমিরের


প্রকাশিত:
১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৩৩

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৫ ০০:০২

ছবি সংগৃহীত

যারা দেশ ও জনগণের জন্য রাজনীতি করার কথা বলেন, সেই রাজনৈতিক দলগুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহত পরিবারের জন্য কী করেছেন? এমন প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল।

তিনি বলেন, কোনো কোনো দল তো শহীদদের নিজের দলের বলে স্টেটমেন্ট দেয়, যারা মুখে শুধু ফুলঝুরি ঝরান, যারা তালিকায় শহীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করছেন। তাদের প্রতি জনগণের প্রশ্ন-তারা শহীদ পরিবারের পাশে কতোটুকু দাঁড়িয়েছেন? আহত পরিবারের পাশে কতোটুকু দাঁড়িয়েছেন? এটা জাতির কাছে পরিষ্কার। এটা নিয়ে রাজনীতির করার প্রয়োজন নেই, এটা নৈতিক দায়িত্ব। জামায়াতে শুরু থেকেই সেটা করে আসছে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে ২০ পরিবারকে আজকে আর্থিক অনুদান তুলে দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে পল্টন কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদরা। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন, তা না করে যদি নির্বাচনের আয়োজন করা হয় তাহলে তাহলে আগামী দিনে ফ্যাসিবাদের উত্থান অনিবার্য হয়ে পড়বে বলে মনে করে আন্দোলনে শহীদ পরিবার, আহতরা।

তিনি বলেন, শহীদ ও আহত পরিবারের আকাঙ্ক্ষা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা, অবশ্যই আগে মৌলিক সংস্কার সম্পাদন করতে হবে। তারপর আগামী দিনে দ্রুত একটা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

বিগত সাড়ে ১৬ বছরে নির্যাতিত মানুষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন। রাষ্ট্রশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। দেশের জনগণকে যৌক্তিক দাবি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য পাখির মতো গুলি করা নজিরবিহীন ঘটনা। যার কারণে শেখ হাসিনাকে পেছনের দরজা দিয়ে পালাতে হয়েছে।

আন্দোলনের সূচনালগ্ন থেকেই জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা পাশে ছিল উল্লেখ করে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আন্দোলনের এক মাসে চিকিৎসার জন্য মাসব্যাপী ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ১০টি হাসপাতালে বলে দেওয়া হয়েছিল যে আহতই আসুক তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য। এজন্য সব খরচ জামায়াত বহন করেছে।

তিনি বলেন, জামায়াত আমির আন্দোলনের তীব্রতা দেখে আন্দোলনকে যৌক্তিক জায়গায় পৌঁছে দিতে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। সেই কমিটি প্রতি দিন বসে বসে পুরো আন্দোলনকে পরিচালনার জন্য ভূমিকা পালন করেছি। ফ্যাসিস্ট অপশক্তি ১ আগস্ট জামায়াতকে দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগ হয়ত মনে করেছিল নিষিদ্ধ করায় পৃথকভাবে আন্দোলনে অংশ নেবে এবং তাদের নিপীড়নের নামে হত্যাযজ্ঞ চালানো ও আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চক্রান্ত করেছিল। জামায়াত দলীয় স্বার্থকে বিবেচনা না করে আলাদা কোনো কর্মসূচি দেয়নি। বরং চলমান আন্দোলনকে গতিশীল করতে ভূমিকা পালন করেছে, সরকারের ফাঁদে পা দেয়নি।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পরে সবার আগে জামায়াত আমির হাসপাতালে গেছেন, আহতদের খোঁজ নিয়েছেন। শহীদ পরিবারে অর্থ সহায়তা করেছেন। সারাদেশে সেটা বাস্তবায়নে নির্দেশ দিয়েছিলেন। চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ পরিবারের প্রতি সসমবেদনা জানিয়ে সমাবেশ করেছেন আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের সুচিকিৎসার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে প্রথম দাবি আমরাই তুলেছিলাম। আমরা আজও সেটা বলছি, অবিলম্বে খুনিদের বিচারের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে ছাত্রশিবিরের এ সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে যা করেছে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার সেই পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এটা হতে পারে না। এটা অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত ছিল। যেভাবে পাশে দাঁড়ানোর কথা ছিল, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল সেটা করা হয়নি। আমরা অবিলম্বে সেই পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা খুনিদের বিচার চাই। মৌলিক সংস্কার চাই, স্থানীয় নির্বাচন চাই; তারপরই দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারের যে রোডম্যাপ সে অনুযায়ী নির্বাচন চাই।

৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনে শহীদদের ইতিহাস সংরক্ষণে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী আড়াই হাজার পৃষ্ঠায় ১০ খণ্ডে প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচক করেছে। যা একযোগে সারাদেশে পালন করা হয়েছে। এটা করার কথা সরকারের। কিন্তু সরকার তা করতে পারেনি। রাষ্ট্র কেন পারলো না? কেন? কেন তাদের পুনর্বাসনের পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হলো না? এটা এখন বড় প্রশ্ন।

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির বলেন, রমজান-ঈদ যখনই ডাকা হয়েছে তখনই শহীদ ও আহত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আমরাও দায়িত্ব নিয়ে চেষ্টা করেছি। শহীদ পরিবারকে খাম দেওয়াতে স্বজন হারানো ক্ষত পূরণ বা সারানো সম্ভব নয়। টাকা দিয়ে করুন দৃষ্টি, চাহনির জবাব পূরণ করা সম্ভব না।

এখন আনাচে-কানাচে শোনা যায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী নেত্রী নাকি ফিরে আসবে। আমরা বলতে চাই, চোরের বেশে যারা পালিয়ে যায়, তারা কখনো বীরের বেশে ফিরে আসতে পারে না। আপনারা ইতিহাস থেকে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। বাঙালি বীর কখনো চোরদের আশ্রয় দেয় না। আমাদের শহীদ নেতারা বীরের বেশেই ফাঁসির মঞ্চে গেছে।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, কীভাবে নিজের দেশের প্রধানমন্ত্রী তার দেশের নাগরিকদের হত্যা করতে পারে। সেটাই হয়েছে। জনগণ বুঝে গেছে কারা দেশের পক্ষে আর কারা বিপক্ষে। আগামী দিনে আর কেনো ফ্যাসিস্ট, দানব যেন তৈরি না হয়, বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হবে না।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন ও অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top