বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে সুখবর আসছে
প্রকাশিত:
২৯ মে ২০২৫ ১৫:১২
আপডেট:
৩১ মে ২০২৫ ০৩:১৮

আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসার প্রসার ও করজাল সম্প্রসারণে জোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিত্যপণ্যে কর ছাড়ের প্রস্তাব থাকছে। যদিও আয়কর ফাঁকি রোধে বাড়তি প্রস্তাবও রেখেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঋণপত্রে উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব আসতে পারে। পাশাপাশি কারদাতাবান্ধব বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঋণপত্রে কমছে উৎসে কর
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে উৎসে কর রাজস্ব আদায়ে কিংবা পণ্যের দামের ক্ষেত্রে বড় কোনো প্রভাব রাখে না। তবুও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এই উৎসে করের অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন বাজেটে উৎসে কর বা সোর্স ট্যাক্স কমানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আগামী বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে স্থানীয় ঋণপত্রের কমিশনের উৎসে কর কমিয়ে অর্ধেক করা হচ্ছে। বর্তমানে ১ শতাংশ উৎসে কর রয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে- ধান, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মটরশুঁটি, ছোলা, মসুর ডাল, আদা, হলুদ, শুকনো মরিচ, ডাল, ভুট্টা, মোটা আটা, আটা, লবণ, চিনি, ভোজ্যতেল, কালো গোলমরিচ, দারুচিনি, বাদাম, লবঙ্গ, খেজুর, ক্যাসিয়া পাতা, কম্পিউটার ও কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ এবং সব ধরনের ফল। সেক্ষেত্রে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। যা সাধারণ মানুষের জন্য সুখবর বলা যায়।
বাজেটে আমদানি-রপ্তানির শর্ত শিথিল, কমবে জরিমানাও
আসন্ন বাজেটে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকতে পারে। ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দিতে আমদানি-রপ্তানির শর্ত শিথিলের পাশাপাশি জরিমানা ন্যূনতম রাখার প্রস্তাব আসতে যাচ্ছে। এনবিআরের কর বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আমদানি ঘোষণাপত্রে ছোটোখাটো ভুলের জন্য জরিমানা কমানো এবং আমদানি নীতি আদেশ (আইপিও) লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম জরিমানার নিয়ম শিথিল করা হতে পারে। বর্তমানে আমদানির প্রাথমিক বিবরণীর তালিকায় (আইজিএম) যেকোনো ভুলের জন্য অন্তত ৫০ শতাংশ জরিমানা দিতে হয়। আসন্ন বাজেটে এই নিয়ম বাতিল করা হতে পারে। আর ছোটোখাটো ভুলের ক্ষেত্রে নামমাত্র জরিমানা নির্ধারণের সুযোগ থাকবে।
সূত্র বলছে, আমদানি নীতি আদেশ (আইপিও) লঙ্ঘনের জন্য আমদানি করের সমপরিমাণ ন্যূনতম জরিমানার বিধানও বাতিল হতে পারে। যাতে কমিশনাররা নিজের বিবেচনায় তুলনামূলক কম জরিমানা আরোপ করতে পারেন। এছাড়া জাহাজ কোম্পানিগুলোর কার্গো ঘোষণায় ভুলের জন্য বর্তমানে প্রযোজ্য ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকার জরিমানা বাতিল করা হতে পারে। এতে কমিশনারদের সামান্য জরিমানা আরোপের সুযোগ দেওয়া হতে পারে।
অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বসছে প্রায় ১৫০ আমদানি পণ্যে
দেশে হাজার হাজার ব্যবসায়ী বিশেষ করে আমদানিকারক রয়েছেন, যারা শত শত কোটি টাকার ব্যবসা করেন। আমদানি করা পণ্য ন্যূনতম ট্রেড মার্জিনে এসব ব্যবসায়ী বাজারে সরবরাহ করেন। ট্রেড মার্জিন ন্যূনতম হলেও বড় অঙ্কের লেনদেনের কারণে তাদের লোকসানের আশঙ্কা খুবই কম থাকে। তারপরও নানা অজুহাতে ওইসব ব্যবসায়ীর বেশিরভাগই আয়কর রিটার্ন দেন না। তাদের করজালের আওতায় আনতে আমদানি করা প্রায় দেড় শতাধিক পণ্যে আগামী অর্থবছর থেকে অগ্রিম কর বা এআইটি বসানো হচ্ছে।
যেসব আমদানি পণ্যে এআইটি বসতে পারে- আলু, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, চিনি, ময়দা, ছোলা, ভুট্টা, তুলা ও মানবসৃষ্ট তন্তু। চিকিৎসা সরঞ্জামের মধ্যে হুইল চেয়ার, এনজিওগ্রাফি ও গাইড ক্যাথেটার, কৃত্রিম দাঁত, হিয়ারিং এইড এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেটওয়ার্কিং ডিভাইস, কম্পিউটারের মনিটর, প্রিন্টারের রিবন, রাউটার, মডেম, টোনার, অপারেটিং সিস্টেম। এ ছাড়া শিল্প খাতে ব্যবহৃত রাসায়নিক, বিমান, বাস, মাছ ও মাংস।
এ বিষয়ে কর কর্মকর্তারা বলছেন, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এসব ব্যবসায়ীকে ২ শতাংশ হারে এআইটি দিতে হবে। আর ওই এআইটি ব্যবসায়ী তার আয়কর রিটার্ন দেওয়ার সময় তা সমন্বয় করে নিতে পারবেন। অর্থ্যাৎ প্রকৃত পক্ষে তাকে বাড়তি কর দিতে হবে না। শত শত কোটি টাকার ব্যবসা করেন, অথচ আয়কর রিটার্ন দেয় না। তাদের কমপ্লায়েন্সের আওতায় আনতে এআইটি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এআইটির কারণে বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে না। কারণ এই কর ব্যবসায়ীর চূড়ান্ত কর দায় নয়। যদিও অধিকাংশ ব্যবসায়ীর দাবি ওই কর সমন্বয় করতে পারেন না বা ফেরত পান না।
আয়করের ক্ষেত্রে আরো যেসব পরিবর্তন আসতে পারে
আগামী বাজেটে যেসব করদাতা প্রথম রিটার্ন জমা দেবেন এমন করদাতাদের জন্য সুখবর থাকছে। নতুন করদাতাদের আয় ভেদে সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা আয়কর দেওয়ার বিধান যুক্ত হচ্ছে আয়কর আইনে। মূলত নতুন করদাতাদের করভার লাঘব এবং করভীতি দূর করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যেসব করদাতা প্রথমবার রিটার্ন জমা দেবেন, কেবল তারা এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকার মধ্যে যে কোনো অঙ্কের কর দিতে পারবে। এছাড়া করহার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সাধারণত মধ্যবিত্ত শ্রেণির আয় এটি। আসছে বাজেটে স্ল্যাব পরিবর্তন ও করহার বাড়ানোয় মধ্যবিত্তের ওপর করের বোঝা বাড়বে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: